পটুয়াখালীর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার কাউয়ার চর এবং মিরা বাড়ি পয়েন্ট বেড়েছে অতিথি পাখির বিচরণ। এসব পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকছে সৈকতের এ দুই স্পট। এছাড়া চর গঙ্গামতি সৈকতে রয়েছে ঝিনুকের ছড়াছড়ি। 

এ সৈকতের যতদূর চোখ যায় ধুধু বালুচরের উপর বিশাল এলাকা জুড়ে সাদা ঝিনুকের খোলসের আস্তরণ। ছোট বড় হাজার হাজার ঝিনুক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে এ সৈকতে।

 

চর গঙ্গামতির পূর্বপাশে ক্র্যাব আইল্যান্ডে বেড়েছে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ। লাল কাঁকড়ার নিপুণ আঁকিবুকি আর নাচানাচি যে কারও মন কাড়বে। এছাড়াও সৈকতের সংরক্ষিত বনাঞ্চল সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে ঔষধি গাছ আকন্দসহ বিভিন্ন গাছ গাছালি। এসব গাছে ফোটা ফুল শোভা ছড়াচ্ছে সৈকত এলাকায়। 

এদিকে বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসায় সাগরের বিশালতায় বেড়েছে ছোট বড় ঢেউয়ের মোহনীয় গর্জন। মোটকথা রমজানের শুরু থেকে কুয়াকাটা সৈকত পর্যটক শূন্য থাকায় প্রকৃতি সেজেছে অপরুপ সাজে। মনজুড়ানো এসব সৌন্দর্য কেবল ঈদের পরে আসা পর্যটকরাই উপভোগ করতে পারবেন।

কুয়াকাটা সৈকতের মোটরসাইকেল চালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, “পর্যটক না থাকায় সৈকতে আমাদের বিচরণ খুব কম। তবে গতকাল খুলনা থেকে এক পর্যটক এসেছিল। তাকে নিয়ে পুরো সৈকত ঘুরেছি। দেখে মনে হয়েছে প্রকৃতি সেজেছে তার নিজস্ব রূপে। বেড়েছে অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়া এবং ঝিনুকের সংখ্যা।” 

গঙ্গামতি সৈকত এলাকার জেলে রহমান মিয়া বলেন, “এ সৈকতে প্রচুর পরিমাণে ঝিনুকের খোলস ভেসে এসেছে। যেটা দেখতে বেশ দারুণ সুন্দর লাগে।” 

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোশিয়েসন অব কুয়াকাটার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু বলেন, “রমজানের শুরু থেকে কুয়াকাটা সৈকতের পর্যটকের বিচরণ না থাকায় সৈকতের প্রকৃতির সেজেছে নতুন রূপে। লাল কাঁকড়া এবং অতিথি পাখির বিচরণ বেড়ছে। এছাড়া সৈকত সংলগ্ন সংরক্ষিত বনের বিভিন্ন গাছে নতুন নতুন ফুল ফুটেছে। দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। কেবল ঈদের পরে কুয়াকাটা আসা পর্যটকরাই নৈসর্গিক এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।”

কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের পুলিশ পরিদর্শক আহাদুজ্জামান বলেন, “ঈদের পরে কুয়াকাটায় লাখ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে। সৈকতের নতুন প্রকৃতি এ সকল পর্যটকরাই উপভোগ করতে পারবেন। আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।”

ঢাকা/ইমরান/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব চরণ স ন দর স কত র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ