নিরাপদে রোজা রাখতে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়
Published: 15th, March 2025 GMT
ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা করবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন অনেকেই। কিংবা রোজা রাখলেও কি কি নিয়ম মানবেন এই বিষয়ে অনেকেই পুরোপুরি নির্দেশনা জানেন না। রোজা রেখে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় কী, এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডা. মাসুদা পারভীন মিনু।
তিনি বলেন, ‘‘ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা সঠিক পরিকল্পনা ও সতর্কতার সঙ্গে নিতে হবে। রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা বেড়ে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা পালন করা উচিত।’’
মাসুদা পারভীন মিনুর পরামর্শ—
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি: রোজা রাখার উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ওষুধ ও ইনসুলিনের সময়সূচি ঠিক করা: রোজার সময় ওষুধ ও ইনসুলিনের ডোজ পরিবর্তন করা লাগতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস পরিকল্পনা: সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর ইফতার ও সেহরির পরিকল্পনা করা দরকার।
ইনসুলিন গ্রহণ ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা: যারা ইনসুলিন নেন, তাদের ইনসুলিনের ডোজ ও সময় চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সামঞ্জস্য করতে হবে।
আরো পড়ুন:
রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে?
সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসে নিয়োগ হবে ২ হাজার চিকিৎসক
সেহরির আগে: দীর্ঘমেয়াদি (Long-acting) ইনসুলিন নেওয়া যেতে পারে।
ইফতারের আগে বা পরে: স্বল্পমেয়াদি (Short-acting) ইনসুলিন প্রয়োজন হতে পারে।
যারা ওষুধ সেবন করেন, তারা মেটফরমিন ও সালফোনিলুরিয়া জাতীয় ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করতে পারেন চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী।
খাবার ও জীবনধারা: সেহরি ও ইফতারে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। যেমন শস্যজাতীয় খাবার, ডাল, শাকসবজি, কম মিষ্টিযুক্ত ফল।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: সেহরি ও ইফতারের মাঝে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা ভালো।
আরও যা মানতে হবে: অতিরিক্ত মিষ্টি ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। সুস্থ্যতার জন্য হালকা ব্যায়াম করুন, তবে অতিরিক্ত কসরত এড়িয়ে চলুন।
রক্তের সুগার পর্যবেক্ষণ:
রোজার সময় দিনে কয়েকবার গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন।
শর্করা লেভেল ৪.
উল্লেখ্য, সঠিক প্রস্তুতি ও নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস রোগীরাও সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারেন। তবে যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা বা জটিলতা রয়েছে, তাদের জন্য রোজা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ক ৎসক র ইনস ল ন র সময় ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।