আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সারাদেশে যানজটের সম্ভাব্য ১৫৫টি স্পট  চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্পটসমূহ ঈদুল ফিতরের পূর্ববর্তী এক সপ্তাহ আগ থেকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় এনে যানচলাচল স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ৯ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সভাপতিত্বে সড়ক মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, সারাদেশে যানজটের সম্ভাব্য ১৫৫টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট রয়েছে। 

এগুলো হলো: কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব ঢাল, গ্রিন লাইন ইউটার্ন, মদনপুর মোড়, কেওডালা ইউটার্ন, কনকা ইউটার্ন, মোগড়া পাড়া, মেঘনা টোলপ্লাজা, সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, সানারপার ইউটার্ন, মৌচাক স্ট্যান্ড, দশতলা ভবন, শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড, আদমজী রোড, পাখির মোড়, ওয়াটার পার্ক, ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড, কলেজ গেইট, আনারপুরা, বাটেরচর নতুন রাস্তা, হাঁস পয়েন্ট, দাউদকান্দি টোলপ্লাজা, বলদাখাল, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ, সুয়াগাজী বাজার (উভয়মুখী), সদর দক্ষিশ থানার সামনে কাটা, নুরজাহার হোটেলের সামনে কাটা, কোর্টবাড়ী ইউটার্নের উভয় পাশে, জাগুরঝুলি কাটা, আলেখারচর কাটা, কান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), নাজিরা বাজার ইউটার্ন, নিমসার বাজার ইউটার্ন, চৌদ্দগ্রাম বাজার, বিসিক মোড়, লালপোল, বাড়বকুন্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফুটলিং, ফৌজদারহাট, সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড/বড় দারোগারহাট স্কেল, মীরসরাই থানাধীন মিঠাছড়া বাজার, নিজামপুর বাজার, বড়তাকিয়া বাজার, জোরারগঞ্জ থানাধীন বারৈয়ারহাট বাজার।

ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের ৮টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট রয়েছে। 

এগুলো হলো: আমিন বাজার, উলাইল বাসস্ট্যান্ড, সাভার থানা স্ট্যান্ড, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সিএন্ডবি মোড়, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড, নয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড, কালামপুর।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫২টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট রয়েছে। 

এগুলো হলো: বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে যমুনা সেতু পূর্ব গোল চত্বর, যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সিগেটের পূর্ব অংশ, ফেন্সিগেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের পূর্বে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের পূর্বে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভিভিলা, ষোলমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, হাটিকুমরুল গোলচত্বর হতে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদ, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল হতে চাচা ভাতিজা হোটেল পর্যন্ত জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনো গরুর হাট, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক কাচিকাটা টোলপ্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক বানেশ্বর বাজার, রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক যোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কন্সট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানাধীন বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানাধীন জিয়া মেডিকেল কলেজ গেইটের সামনে, তিন মাথা রেল ক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমান বন্দর মোড়, টিএমএসএস এর সামনে, শিবগঞ্জ থানাধীন মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় হতে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস এবং শিল্পী রেঞ্জেরা হতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ উপজেলা বাস স্টপেজ হতে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তরপ্রান্ত পর্যন্ত, বিশ মাইল, পীরগঞ্জ, রংপুর, বড়দরগাহ্ আন্ডারপাস, পীরগঞ্জ, রংপুর, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস ও শঠিবাড়ী বাজার এবং বাসস্টপেজ এলাকা, মিঠাপুকুর, রংপুর।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট রয়েছে। 

এগুলো হলো: ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড, মাস্টার বাড়ী বাজার, সিড-স্টোর বাজার, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট রয়েছে। 

এগুলো হলো: কাঁচপুর মোড় ও পশ্চিম ঢাল, যাত্রামুড়া ব্রিজ, তারাবো বাসস্ট্যান্ড, বরাব বাসস্ট্যান্ড, ডেমরা সেতু, রুপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা বাসস্ট্যান্ড, পাকিস্থানী (এসিএস) গার্মেন্টস, রবিন টেক্স গার্মেন্টস, ভুলতা মোড়, গোলাকান্দাইল মোড়, বান্টি বাজার, পাঁচরুখি, ছনপাড়া, পুরিন্দা বাজার, মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, শেখেরচর (বাবুরহাট), পাঁচদোনা, সাহেপ্রতাব ও ভেলানগর, ইটাখোলা মোড় (১) মরজাল বাজার, (২) বারৈচা বাজার, (৩) নারায়নপুর বাজার, (৪) দুর্জয়মোড় বাসস্ট্যান্ড (পৌরসভা এলাকা), আশুগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ড, বগইর বাসস্ট্যান্ড, বেড়তলা বাসস্ট্যান্ড, বিশ্বরোড গোল চত্বর, নন্দনপুর বাসস্ট্যান্ড, সুহিলপুর বাসস্ট্যান্ড, বাড়িউরা বাসস্ট্যান্ড, শাহবাজপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড, ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড, সাতকর্ণ বাসস্ট্যান্ড, মাধবপুর বাজার, অলিপুর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ গোল চত্বর, রুস্তমপুর টোলপ্লাজা, শেরপুর টোলপ্লাজা, গোয়ালাবাজার।  
 
জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডোর রয়েছে। 

এগুলো হলো:  (১) ঢাকা বাইপাস (মদনপুর-ভুলতা- ভোগড়া-এন ১০৫), (২) নবীনগর-চন্দ্রা-এন৫৪০, (৩) ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-এন৩, (৪) ঢাকা-জয়দেবপুর-এন৩, (৫) ঢাকা (ভোগড়া)-চন্দ্রা-এলেঙ্গা, (৬) এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর, (৭) ঢাকা-সিলেট (৮) ঢাকা-চট্টগ্রাম, (৯) ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা এবং (১০) ভাঙ্গা-বরিশাল এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর/দক্ষিণের আওতায় সড়কসমূহের মেরামত/সংস্কার কাজ আসন্ন ঈদের ৭ দিন পূর্বেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়।
 
সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। দেশের সকল বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং সড়কপথে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে  মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান হতে ছেড়ে যাওয়া ও আগত মোটরযানের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করা এবং মোটরযানে অতিরিক্ত ভাড়া দাবী/আদায় না করতে পারে সেজন্য  মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা। লক্কড়-ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ গাড়ী চলাচল বন্ধকরণ, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে না পারে  সেজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
সড়কের উভয় পাশে অস্থায়ী/ভাসমান বাজার অপসারণ করা, নসিমন, করিমন, ইজিবাইক, ইত্যাদি থ্রি-হুইলার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল বন্ধ নিশ্চিত করতে  মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা, ২০২৪-এ উল্লিখিত নির্ধারিত গতিসীমা অনুযায়ী বিভিন্ন মোটরযানের চলাচল নিশ্চিত করতে  মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

টোল প্লাজা যানজটমুক্ত রাখতে সওজের আওতাধীন ৯টি সেতু ও মহাসড়কে যথাক্রমে কর্ণফুলী সেতু, মেঘনা সেতু, গোমতী সেতু, পায়রা সেতু, খান জাহান আলী (রূপসা) সেতু, চরসিন্দুর সেতু, শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু, আত্রাই টোল প্লাজা, নাটোর, লালন শাহ সেতু, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ইটিসি বুথ চালুর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক টোল আদায় অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সেতু বিভাগের আওতাধীন পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু ও কর্ণফুলী টানেলসমূহে ইটিসি বুথ সার্বক্ষণিক চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
   
আসন্ন ঈদের আগের ৩ দিন ও পরের ৩ দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য-দ্রব্য, পচনশীল দ্রবা, গার্মেন্টস সামগ্রী,ঔষধ, সার এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহনসমূহ এর আওতামুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর, ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে যাত্রীসাধারণের নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ এবং যানজটমুক্ত যাতায়াতের সুবিধার্থে গার্মেন্টসসহ সকল শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

ঈদের আগে ও পরে সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ফুলবাড়ীয়া বাস টার্মিনালসহ দেশের সকল বাস টার্মিনালে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং অতিরিক্ত মালামাল যাত্রী পরিবহন না করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।  
 
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, বিআরটিসি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর কর্মকর্তা কর্মচারিদের সমন্বয়ে ঈদের ৩ দিন পূর্ব হতে ঈদের দিনের পরের ৩  দিন পর্যন্ত মোট ৭ দিনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার সিদ্ধান্ত হয়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর ৫৫০৪০৭৩৭, মোবাইল নম্বর ০১৫৫০০৫১৬০৬। বিআরটিএ-এর পরিচালক (প্রশাসন) নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে ।
 
এবিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “ঈদে দেড় কোটি মানুষ বাড়ি যাবে। এর আগে রাস্তা সংস্কার করার একটা বিষয় থাকে। আমরা সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে কাজ করছি।”

তিনি বলেন, “এবার ঈদে যানজট কম হবে। কারণ অনেক ছুটি আছে, মানুষ ধাপে ধাপে যেতে পারবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল নসিমন-করিমন এগুলো মহাসড়কের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশে হাট-বাজার ঈদের আগে যেন না বসে, সে জিনিসগুলো খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা বাইপাসের কাজ চলছে, এটা ঈদের আগে সাময়িকভাবে খুলে দেওয়া হবে, যাতে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। বিআরটি করিডোর ঈদের আগে একমুখী চলাচল করে দেওয়া হবে। ঈদে মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সারাদেশে যানজটের সম্ভাব্য ১৫৫টি স্পট  চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্পট সমূহ ঈদুল ফিতরের পূর্ববর্তী এক সপ্তাহ আগ থেকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় এনে যানচলাচল স্বাভাবিক করা হবে।”

ঢাকা/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র খ র স দ ধ ন ত হয় ন র ব ঘ ন কর চ হ ন ত কর ইউট র ন ম টরয ন য নজট র র স মন ন র পদ ন করত র আওত ব আরট আসন ন রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ