জামালপুর সদর উপজেলায় এক অটোরিকশাচালকের বিরুদ্ধে ১৩ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে গতকাল শুক্রবার রাতে তাকে জামালপুর শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. লাল মিয়া (৫০)। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার একটি এলাকায়। থাকতেন শ্বশুরবাড়িতে। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ওই ব্যক্তি ঘটনার পর থেকে পলাতক।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুটি গতকাল সকালে বাড়ির পাশে খেলছিল। কৌশলে শিশুটিকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে যান লাল মিয়া। পরে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ। শিশুটির ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যান। তখন লাল মিয়া শিশুটিকে রেখে পালিয়ে যান। প্রথম দিকে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। পরে শিশুটি রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জামালপুর শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাচ্চা প্রতিবন্ধী। আমার বাচ্চা গাড়ির টায়ার দিইয়া খেলতেছে, ওনথনে (সেখান থেকে) বাচ্চারে নিয়ে ধর্ষণ করছে। নিয়ে যাওয়ার সময় মানুষজনও দেখছে। আমার বাচ্চারে ওই ঘর থাইকা মানুষজনই বাইর করছে। সমাজের মানুষরে বিচার দিছিলাম, সমাজের মানুষেরা বলছিল, বিচার কইরা দেবে। কিন্তু দেয় না। রাইতে বাচ্চার পেটে ব্যথা ওঠে, তহন চিৎকার পারতেছিল। তার কারণে হাসপাতালে আইছি। আপনারা এডার বিচার কইরে দেন। আমি বিচার চাই।’

ওই হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (প্রসূতি) খায়রুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির শারীরিক পরীক্ষার পর আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। আলামতের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো.

আতিক বলেন, ‘শিশুটি মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কথাবার্তা বলতে পারে। প্রাথমিকভাবে শিশুটির সঙ্গে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বিষয়টি জানা যাবে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে আমি নিজে টিম নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছি। এখনো তাঁকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ দেওয়ার পরপরই আইনগত প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসির ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠন করার নির্দেশ

বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এমন নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ।

এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফররাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত করা এবং তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ

বৈঠকে কমিশন সদস্যরা জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’

‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাঁদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তাঁরা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তাঁরা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আলোচনা করেছেন, মতামত দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেখানেই গিয়েছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?” আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ