মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রহস্যময় শক্তির খোঁজ
Published: 17th, March 2025 GMT
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির (ছায়াপথের) কেন্দ্রীয় আণবিক অঞ্চল থেকে আসা রহস্যময় এক সংকেত শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এখন সেই সংকেতের পেছনে থাকা শক্তির উৎস জানতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে সংঘটিত কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে এই রহস্যময় শক্তি উৎপন্ন হতে পারে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা রহস্যময় শক্তির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী শ্যাম বালাজি বলেন, ‘আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে পজিটিভ চার্জযুক্ত হাইড্রোজেনের বিশাল মেঘ অবস্থান করছেন। বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে এসব রহস্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন। সাধারণত গ্যাস নিরপেক্ষ হয়; সেখানে এসব গ্যাসের ইলেকট্রন কোনোভাবে নেগেটিভ চার্জে পরিণত হওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি গ্রহণ করছে। আমাদের গ্যালাক্সির এই অংশ থেকে বিকিরণকারী শক্তির চিহ্ন সেখানে থাকা কোনো উৎস থেকে আসছে।’
আরও পড়ুনছায়াপথে রহস্যময় বস্তুর সন্ধান, চিন্তায় বিজ্ঞানীরা২০ জুন ২০২৪দীর্ঘদিন ধরেই মহাকাশে থাকা ডার্ক ম্যাটারের রহস্য জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। অনেকের ধারণা, মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় আণবিক অঞ্চলেই ডার্ক ম্যাটারের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। কারণ, ডার্ক ম্যাটারের মাধ্যমে তৈরি পদার্থ আলোর সঙ্গে কোনো মিথস্ক্রিয়া করে না।
মহাকর্ষীয় প্রভাবের মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আর তাই এবার বিজ্ঞানীরা অধরা এই রহস্য উন্মোচনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করছেন।
আরও পড়ুনমহাবিশ্বের শুরু কখন২৩ নভেম্বর ২০২৪ডার্ক ম্যাটারের জন্য সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব হচ্ছে, এই পদার্থ উইকলি ইন্টারঅ্যাকটিং ম্যাসিভ পার্টিকেলস (ডাব্লিউআইএমপিএস) নামে পরিচিত কণার একটি গ্রুপ। ডার্ক ম্যাটার শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ক্ষুদ্র ডার্ক ম্যাটার কণা একে অপরকে আঘাত করছে আর নতুন চার্জযুক্ত কণা তৈরি করছে। এই নতুন উৎপাদিত চার্জযুক্ত কণা পরবর্তীকালে হাইড্রোজেন গ্যাসকে আয়নিত করতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রহস যময় করছ ন রহস য
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।