অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে জোর দিতে হবে
Published: 17th, March 2025 GMT
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তারা বলেছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, এমন বিনিয়োগ আকর্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস ও পণ্যের সরবরাহও ঠিক রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছে গবেষণা সংস্থাটি।আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সুপারিশ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির গবেষকেরা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজেদের কার্যালয়ে আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। তারা বলেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। শহর ও গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি। মূল্যস্ফীতির চাপে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে সঞ্চয় ভেঙে খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়বে বলেও মনে করে সিপিডি।
অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে দূরদর্শী ও সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রানীতির পুনরুদ্ধার এখন নীতিনির্ধারকদের অন্যতম প্রধান কাজ। এটি অর্জনের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে।
রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ কোটি ছাড়াবে
চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ শতাংশ। যদিও প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এমন তথ্য দিয়ে সিপিডি বলেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রভাব কমে গেছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ও রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে সিপিডি বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী আয় ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। যদিও একই সময়ে বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার ২২ শতাংশ কমেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনার কথা বলেছে, সেটি অর্জন অসম্ভব হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে সিপিডি মনে করছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
আরও যেসব সুপারিশ করেছে সিপিডি
রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকার যেসব কৃচ্ছ্র সাধন করছে, তা বজায় রাখতে হবে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, আগামী বাজেটে রাজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত করতে হবে। রাজস্ব আয় অনেক বাড়ানো সম্ভব হবে না। ফলে সরকারি ব্যয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপের কারণে বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের কারণে সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প খাতে যেন কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
করদাতারা যেন ঝামেলামুক্তভাবে কর দিতে পারেন সে বিষয়ে জোর দিয়ে সিপিডি বলেছে, সামঞ্জস্যপূর্ণ করনীতি করতে হবে, যা হবে বাস্তবায়নযোগ্য। ভ্যাটের হার পরিবর্তন করে ১৫ শতাংশ থেকে ১০ নামিয়ে আনা যেতে পারে।
২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ধাপে ধাপে বন্ধ করতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে রপ্তানিকারকদের অন্যভাবে সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করতে হবে বলে মনে করে সিপিডি।
নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বিষয়টি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। পাশাপাশি গ্যাসকূপ খননে গতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এ জন্য পেট্রোবাংলার উচিত বিদেশি দরদাতাদের ওপর নির্ভর না করে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সিপিডি। একই সঙ্গে তারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের আমদানি করা বইয়ের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও কলেজের করপোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ; শিক্ষা উপবৃত্তির অর্থ বাড়ানো, জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের বৃত্তি এবং স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পরিবর্তনের বিরল সুযোগ এসেছে। এ জন্য ডিজিটালাইজেশনে বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে এক টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিবেশী যেকোনো দেশের চেয়েও বেশি সুফল আসবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ প রব দ ধ দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমতি ছাড়াই গাসিক কর্মকর্তা কিবরিয়ার বিদেশ যাত্রা
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘন, তথ্য গোপন, অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর গত ১৫ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক শাহেদ আলম নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গোলাম কিবরিয়া সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তথ্য গোপন করে বেসরকারি পাসপোর্ট (নং A০১২৬৬৬১২) সংগ্রহ করেছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি একাধিকবার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
অভিযোগকারী দাবি করেন, তিনি ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বিভিন্ন সময়ে কানাডা সফর করেছেন, যার কোনো অনুমোদন তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেননি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ২০২৫ সালের ১৯ জুন কানাডা সফরের সময় তিনি প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, গোলাম কিবরিয়া নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে কানাডায় সেকেন্ড হোম এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ করেছেন। তার নামে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পাচারের দুর্নীতির মামলাও চলমান রয়েছে। এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনো পদে বহাল থেকে প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং যেকোনো সময় বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিযোগকারী বলেন, “তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নিয়মিত বিদেশে যাচ্ছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন এবং গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
সূত্র জানায়, গোলাম কিবরিয়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা। তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। তিনি দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। গাজীপুরবাসীর স্বার্থে এমন বেপরোয়া ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, “লিখিত অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করা হয়েছে। প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন। তথ্য গোপন করে বিদেশ যাত্রা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, প্রমাণ মিললে বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হবে।”
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে শোকজ করা হয়েছিল এবং তিনি জবাবও দিয়েছেন। শোকজের প্রতিবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।”
এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/রেজাউল/এস