বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত সেলিম তালুকদার রমজানের মেয়ে রোজার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার সেলিম তালুকদারের শ্বশুর বাড়িতে রোজাকে দেখতে এসে এ ঘোষণা দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান।

ড. শফিকুর রহমান বলেন, “এই শিশুটি নাম পরিবারের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছিল রোজা। আমরা ওর নাম দিচ্ছি সাইমা সেলিম। এই শিশুর বড় হওয়া পর্যন্ত আমরা তার সঙ্গে থাকব। সে আমাদের পরিবারের সদস্য, আমাদের সবার কাছে আমানত। এই শিশুর পড়ালেখা, চিকিৎসাসহ তার বিয়ের দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামের।” 

আরো পড়ুন:

বরগুনার নির্যার্তিত পরিবারের ব্যয় বহন করবে জামায়াত

ধর্ষকের বিচার সাত দিনেই দেখতে চাই: জামায়াতের আমির

তিনি আরো বলেন, “আমরা সবাই মিলেমিশে একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়ব। এই বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ মানুষের দুঃখে সাড়া দেবে। বাংলাদেশে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করবে। কোরআনের ভিত্তিতে এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি আমরা।”

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার খুনিদের দ্রুত বিচার হোক, ন্যায় বিচার হোক দাবি করে জামায়াতের আমির বলেন, “বিচার হলেই শহিদদের পরিবার ও দেশবাসী শান্তি পাবে। সরকার প্রত্যেক শহিদ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেটা দেওয়া হলে পরিবারগুলোর উপকার হবে। আহত যারা আছেন তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সংগঠন থেকে তৌফিক অনুয়ায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।”

তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন মেজো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গেলে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ১৫ দিন হাসপাতালে থাকার পর গত ৩১ জুলাই রাতে তার মৃত্যু হয়।

নিহত সেলিমের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার এক বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমান চুন্নুর মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন সেলিম। তিনি মারা যাওয়ার ৪ দিন পর সুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা করিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন অন্তঃসত্ত্বা তিনি। মারা যাওয়ার আগে সেলিম তালুকদার জানতেন না তিনি সন্তানের বাবা হবেন। 
গত শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝালকাঠির একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সেলিমের স্ত্রী কন্যা সন্তান জন্ম দেন।

ঢাকা/অলোক/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ