‘হত্যার প্রায় আড়াইমাস অতিবাহিত হওয়ার পরও গ্রেপ্তার হচ্ছে না আসামিরা। ফলে বিচার নিয়ে অনেকটাই হতাশায় আছেন তারা’ এমন দাবি করে অঝরে কাঁদলেন নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার স্বজনরা।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ১১টায় শহরের চাষাঢ়াস্থ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা।

ফিজা হত্যা মামলার সকল আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

চলতি বছর ২ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানাধীন লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ফিজা ফতুল্লার দেওভোগ বাশমুলী এলাকার মীর মোহাম্মদ আলীর মেয়ে।

এ ঘটনার পর পলাতক রয়েছে নিহত ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না, তার বাবা মনির হোসেন মনুসহ পরিবারের সকল সদস্যরা। 

প্রথমে এটাকে সবাই আত্মহত্যা বলে মনে করলেও একমাত্র ফিজার পরিবার দাবি করে আসছিলো তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথমে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলাও গ্রহণ করে পুলিশ।

কিন্তু ঘটনার চারদিনের মাথায় অর্থ্যাৎ গত ৬ জানুয়ারি ফরেনসিক রিপোর্ট দেখা মাত্র মাথাঘুরে যায় সবার। ওই রিপোর্টে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। 
রিপোর্টে জানাযায়, এটা আসলে কোন আত্মহত্যা ঘটনা নয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহত ফিজার শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।  

আর এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘবদ্ধ হয়ে করা হয়েছে। পরে ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই মামলা নেয় ফতুল্লা থানা পুলিশ। নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ওই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। 

মামলার আসামীরা হলেন, ১.

নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না (৩১), পিতা মনির হোসেন মনু ২. আকলিমা বেগম (৫২), স্বামী মনির হোসেন মনু, ৩. তোফাজ্জাল হোসেন (৪৮), পিতা-পুইক্কা, ৪. চুন্নু (৫০), পিতা-পুইক্কা, ৫. মুন্নী,স্বামী মুরাদ ৬.মনির হোসেন ওরফে মনু (৫৮) ৭. আব্দুর রশিদ ওরফে মিঠুন (৫০, পিতা আম্বর আলী, ৮.নূর নাহার (৪৪), স্বামী তোফাজ্জল হোসেন, ৯. রাজ্জাক (৪৫), পিতা আমিরউদ্দিন, ১০. রানা (৪০), পিতা তালেব হোসেন, ১১. রিপন (৪৪), পিতা মৃত আম্বর আলী, ১২. গোলাম রহমান জিসান (২৪), পিতা উজ্জল।

এদিকে মানববন্ধনে নিহত ফিজার মা ফাইমা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আজ ২ মাস ১৭ দিন হলো আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার মূল আসামী যারা ওর স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না, তার মা, তার বোনসহ অন্যান্য সদস্যরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরতেছে। তাহলে পুলিশ কি করছে? 

পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, আপনাদেরও মেয়ে আছে? আজ আমার মেয়ের বিচার না পেলে আরও দশটার মেয়ে বিচার পাবে না। ওরা আমার মেয়ে ফিজাকে যে কিভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, এটা বলে বুঝাতে পারবো না। আমি প্রশাসনের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। 

আমার মেয়ের হত্যার সাথে যারা জড়িত ওই সকল আসামিকে পুলিশ যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনে। আর কোন মেয়েকে যেন এ ধরনের হত্যাকান্ডের শিকার হতে না হয়। এটাই আমার সবার কাছে আবেদন। আজকে আমার মেয়েটা নাই, আমি বুঝতেছি যে আমার কেমন লাগে।

তারা আরও বলেন, এটা কোন বাংলাদেশ? এটা কোন সমাজ যে সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। যে সমাজে নারীরা নির্যাতিত বা খুন হলেও বিচার পাওয়ার জন্য রাস্তায় নামতে হয়। স্বামী ও শ^শুরবাড়ীর লোকজনেরা নির্যাতন করে আমার মেয়েকে মেরে ফেললো কিন্তু আমি বিচার পাই না। পুলিশ কেন আজ হাত গুঁটিয়ে বসে আছে? কেন তারা আসামিদের ধরছেনা?

নিহতের বাবা ও মামলার বাদি মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আজকে পর্যন্ত ফিজা হত্যার মামলার মূল আসামি আসাদুজ্জামান মুন্না, ওর মা আকলিমা, ওর বোন মুন্নি, ওর বাবা মনির হোসেন, চুন্নু, রানা এদেরকে পুলিশ ধরবে তো দূরের কথা আমার মনে পুলিশ তাদেরকে ছায়া দিচ্ছে।

আর তা না হলে ফিজার পর আরও তিন-চারটি মার্ডার হয়েছে। একটি মামুন আরেকটি মেয়ের হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। 

মামুন হত্যা মামলার মূল আসামিদের দুই-তিন দিনের মধ্যে ধরে ফেলেছে। কিন্তু আজ লামিয়া আক্তার ফিজার হত্যার বিচারের জন্য আমাদের প্রতিটি দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে কান্না করতে হইতেছে।

ছাত্র-জনতারা জীবন দিয়েছে কি এ বাংলাদেশের জন্য। আমি ড. ইউনুস সাহেবকে শিশু হত্যা পাশাপাশি নারী নির্যাতন ও হত্যা মামলাটাও দ্রুত আইনে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। 

আমি ফিজাকে যারা হত্যা করেছে, ওই সকল হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ওদের সকলের ফাঁসি চাই। আমি লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা হয়ে এই দাবি আমি করতেই পারি, এটা আমার প্রাপ্য।

নিহত ফিজার ভাই আরাফাত বলেন, আমরা কল্পনাও করেনি আমার বোনের হত্যার বিচারের জন্য এখানে আমাদের উপস্থিত হতে হবে। আমার বোন ফুলের মত পবিত্র, পর্দাশীল।

এ পর্দাশীল বোনটারে আমার ওই আসাদুজ্জামান মুন্না ও তার পরিবার নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার বোনটাকে নির্মমভাবে হত্যা করে এ হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য তাকে জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। 

শ^াসরোধ করে কি কষ্ট দিয়ে আমার বোনটাকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ ওরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ওদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমরা পুলিশ অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তারসহ তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত ফিজার বাবা মীর মোহাম্মদ আলী, মা ফাইমা আক্তার, খালা সুরাইয়া আক্তার মুন্নি, ভাই আরাফাত ও ফিজার জেডা সোহরাব হোসেন সেন্টুসহ স্থানীয় আলাল মাতবর, সেলিম, মাসুম, জাহাঙ্গীর, দুলাল মাদবর, হানিফ বেপারী, জালাল ও অনিকসহ আরও অনেকে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ মন র হ স ন আম র ব ন আম র ম য় র জন য পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার ও ২১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন, চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল এবং পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ২১ দফা দাবিতে শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিক ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জের সভাপতি আবু সাউদ মাসুদের সভাপতিত্বে এবং একেএম মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিউ নেশন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এ আর ফররুখ আহমেদ খসরু, ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো: মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক মনির হোসেন, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম হানিফ, দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকার সাংবাদিক উজ্জল হোসেন মাসুম, দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মেহবুব মিয়া, দৈনিক পূর্বাভাস পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, দৈনিক দেশ পত্রিকার সাংবাদিক মোখলেসুর রহমান তোতাসহ প্রমূখ।

এসময় বক্তারা বলেন, ‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি কার্য্যকর, সাংবাদিকদের বেতন সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন ও দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন, সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রনয়ন, সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন নির্ধারণ, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, গনমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল, আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্যা পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত স্থাপন সহ ২১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ আমরা মানববন্ধন করছি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান অনতিবিলম্ভে আমাদের এসব দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।  

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি এম আর কালাম, নাহিদ আজাদ, বাংলাদেশ নিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ, নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শরিফ সুমন, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মোশতাক আহমেদ, বাংলাদেশের খবর পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি আল আমিন, দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সাব্বির হোসেন, মানব জমিনের ফতুল্লা প্রতিনিধি আবু সাঈদ পাটুয়ারী রাসেল, মুসলিম টাইমসের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সাইফুল্লাহ খালিদ রাসেল, চ্যানেল এস এর সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেন মুল্লা, দৈনিক সংগ্রামের সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি ইখতিয়ার রাহয়ান, সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম আরজু, এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ, সম্রাট প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএলআরআই নিয়োগবিধিতে বৈষম্যের অভিযোগে গবিতে মানববন্ধন
  • ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বামরাইল সেতু সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত
  • সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারসহ ৫ দফা দাবি
  • সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার ও ২১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
  • চারঘাটে পদ্মার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন
  • আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি, সালমান শাহ ভক্তদের মানববন্ধন
  • পদ্মার চরে জোড়া খুনের ঘটনায় ‘কাকন বাহিনীর’ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন