ফিজা হত্যার বিচারের দাবিতে কাঁদলেন স্বজনরা
Published: 18th, March 2025 GMT
‘হত্যার প্রায় আড়াইমাস অতিবাহিত হওয়ার পরও গ্রেপ্তার হচ্ছে না আসামিরা। ফলে বিচার নিয়ে অনেকটাই হতাশায় আছেন তারা’ এমন দাবি করে অঝরে কাঁদলেন নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার স্বজনরা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ১১টায় শহরের চাষাঢ়াস্থ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা।
ফিজা হত্যা মামলার সকল আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
চলতি বছর ২ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানাধীন লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ফিজা ফতুল্লার দেওভোগ বাশমুলী এলাকার মীর মোহাম্মদ আলীর মেয়ে।
এ ঘটনার পর পলাতক রয়েছে নিহত ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না, তার বাবা মনির হোসেন মনুসহ পরিবারের সকল সদস্যরা।
প্রথমে এটাকে সবাই আত্মহত্যা বলে মনে করলেও একমাত্র ফিজার পরিবার দাবি করে আসছিলো তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথমে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলাও গ্রহণ করে পুলিশ।
কিন্তু ঘটনার চারদিনের মাথায় অর্থ্যাৎ গত ৬ জানুয়ারি ফরেনসিক রিপোর্ট দেখা মাত্র মাথাঘুরে যায় সবার। ওই রিপোর্টে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
রিপোর্টে জানাযায়, এটা আসলে কোন আত্মহত্যা ঘটনা নয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহত ফিজার শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আর এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘবদ্ধ হয়ে করা হয়েছে। পরে ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই মামলা নেয় ফতুল্লা থানা পুলিশ। নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ওই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, ১.
এদিকে মানববন্ধনে নিহত ফিজার মা ফাইমা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আজ ২ মাস ১৭ দিন হলো আমার মেয়ে লামিয়া আক্তার ফিজাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার মূল আসামী যারা ওর স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না, তার মা, তার বোনসহ অন্যান্য সদস্যরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরতেছে। তাহলে পুলিশ কি করছে?
পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, আপনাদেরও মেয়ে আছে? আজ আমার মেয়ের বিচার না পেলে আরও দশটার মেয়ে বিচার পাবে না। ওরা আমার মেয়ে ফিজাকে যে কিভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, এটা বলে বুঝাতে পারবো না। আমি প্রশাসনের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
আমার মেয়ের হত্যার সাথে যারা জড়িত ওই সকল আসামিকে পুলিশ যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনে। আর কোন মেয়েকে যেন এ ধরনের হত্যাকান্ডের শিকার হতে না হয়। এটাই আমার সবার কাছে আবেদন। আজকে আমার মেয়েটা নাই, আমি বুঝতেছি যে আমার কেমন লাগে।
তারা আরও বলেন, এটা কোন বাংলাদেশ? এটা কোন সমাজ যে সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। যে সমাজে নারীরা নির্যাতিত বা খুন হলেও বিচার পাওয়ার জন্য রাস্তায় নামতে হয়। স্বামী ও শ^শুরবাড়ীর লোকজনেরা নির্যাতন করে আমার মেয়েকে মেরে ফেললো কিন্তু আমি বিচার পাই না। পুলিশ কেন আজ হাত গুঁটিয়ে বসে আছে? কেন তারা আসামিদের ধরছেনা?
নিহতের বাবা ও মামলার বাদি মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আজকে পর্যন্ত ফিজা হত্যার মামলার মূল আসামি আসাদুজ্জামান মুন্না, ওর মা আকলিমা, ওর বোন মুন্নি, ওর বাবা মনির হোসেন, চুন্নু, রানা এদেরকে পুলিশ ধরবে তো দূরের কথা আমার মনে পুলিশ তাদেরকে ছায়া দিচ্ছে।
আর তা না হলে ফিজার পর আরও তিন-চারটি মার্ডার হয়েছে। একটি মামুন আরেকটি মেয়ের হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মামুন হত্যা মামলার মূল আসামিদের দুই-তিন দিনের মধ্যে ধরে ফেলেছে। কিন্তু আজ লামিয়া আক্তার ফিজার হত্যার বিচারের জন্য আমাদের প্রতিটি দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে কান্না করতে হইতেছে।
ছাত্র-জনতারা জীবন দিয়েছে কি এ বাংলাদেশের জন্য। আমি ড. ইউনুস সাহেবকে শিশু হত্যা পাশাপাশি নারী নির্যাতন ও হত্যা মামলাটাও দ্রুত আইনে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি ফিজাকে যারা হত্যা করেছে, ওই সকল হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ওদের সকলের ফাঁসি চাই। আমি লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা হয়ে এই দাবি আমি করতেই পারি, এটা আমার প্রাপ্য।
নিহত ফিজার ভাই আরাফাত বলেন, আমরা কল্পনাও করেনি আমার বোনের হত্যার বিচারের জন্য এখানে আমাদের উপস্থিত হতে হবে। আমার বোন ফুলের মত পবিত্র, পর্দাশীল।
এ পর্দাশীল বোনটারে আমার ওই আসাদুজ্জামান মুন্না ও তার পরিবার নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার বোনটাকে নির্মমভাবে হত্যা করে এ হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য তাকে জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিলো।
শ^াসরোধ করে কি কষ্ট দিয়ে আমার বোনটাকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ ওরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ওদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমরা পুলিশ অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তারসহ তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত ফিজার বাবা মীর মোহাম্মদ আলী, মা ফাইমা আক্তার, খালা সুরাইয়া আক্তার মুন্নি, ভাই আরাফাত ও ফিজার জেডা সোহরাব হোসেন সেন্টুসহ স্থানীয় আলাল মাতবর, সেলিম, মাসুম, জাহাঙ্গীর, দুলাল মাদবর, হানিফ বেপারী, জালাল ও অনিকসহ আরও অনেকে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ মন র হ স ন আম র ব ন আম র ম য় র জন য পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন
ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুর পাড় এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে সড়ক অবরোধ সহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে মানববন্ধন থেকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এতে করে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়কের উভয় পাশে যানবাহন বন্ধ হয়ে যানজটের সৃস্টি হয়।
বুধবার সকাল ১০ টার দিকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুস্ঠিত হয়। ১১ টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনাস্থলে এসে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন আজ দুপুরের পর এলাকাবাসীর সাথে নির্বাহী কর্মকর্তা কথা বলবেন তাদের সমস্যার কথা শুনবেন এবং দ্রুতই তা সমাধানের জন্য কাজ করবেন।
এ সময় লালপুর পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন মুসা বলেন জলাবদ্ধতার কারনে মুসুল্লিরা নামাজ পরতে পারছেনা,কর্মজীবিরা কাজে যেতে পারছেনা,স্কুল -কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা,নোংরা পানির কারনে ঘরে ঘরে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পরেছে।
আমাদের কে আশ্বাস করেছিলো সেনাবাহিনী কতৃক যে পাম্প বসানো হয়েছিলো সেটা চালু হলে আমাদের দ্ঃূক কস্ট লাঘব হবে। কিম্ত সে পাম্প চালু হলেও আমাদের কস্ট শেষ হয়নি। সেই পাম্প আমাদের কোন কাজে আসেনি।
আমরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি দিয়েছি তারা এসে দেখেও গেছে কিন্ত আজো সমস্যার সমাধান করা হয়নি। বিগত সরকারের আমলে তখনকার চেয়ারম্যান, এমপি সাহেবের নিকট গিয়েছি। শামীম ওসমান এসে দেখে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। তা শুধু কথার কথাই ছিলো। কিন্ত কোন কাজে আসেনি।
ইউপি সদস্য মাঈনুদ্দিন জানায়, দীর্ঘদন যাবৎ আমরা এই সমস্যা আছি। মৃত মানুষের লাশ পযন্ত দাফন করতে পারছিনা। মসজিদের ভিতরে পানি নামাজ পরতে পারছিনা। রাস্তায় বের হতে পারছিনা।
আমাদের কোরবানী ঈদে পশু কোরবানী দিতে হয় ছাদের ওপরে নতুবা অন্য এলাকায় গিয়ে। এ সব কিছুই সরকারের সকল বিভাগের কর্মরত কর্তার জানে। কিন্ত শুধু আশ্বাস পেয়ে গেছি। কোন সমাধান পাইনি তাই আজ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে আমাদেরকে।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। ফতুল্লায় এতো উন্নয়ন হয়, কিন্তু লালপুর পৌষাপুকুর পাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছেনা। আমরা চাই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হোক।
ব্যবসায়ী হাবিব জানায়, আমাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের কোন কাজ হয় নাই। আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্ত কোন কাজ হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন প্রকার টেক্স আর দিবোনা।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, লালপুর- পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আঃ বারী, আজাদুর রহমান আজাদ,আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক রফিক, লালপুর আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সভাপতি মো. জনি, শামীম।