পদত্যাগ করে কেন জ্ঞানের ভান্ডার খুলছেন না, উপদেষ্টা মাহফুজের প্রতি গণ অধিকারের রাশেদের প্রশ্ন
Published: 18th, March 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে গণ অধিকার পরিষদ। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কড়া সমালোচনা করে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, ‘মাহফুজ আলম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ রকম অনৈক্য সৃষ্টিকারী কী করে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বহাল থাকেন? তিনি যদি এত তাত্ত্বিক জ্ঞান ছড়াতে চান, তাহলে পদত্যাগ করে কেন জ্ঞানের ভান্ডার খুলে বসছেন না?’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ খান এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ ছাড়াও গণ অধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ খান বলেন, ‘অভ্যুত্থানের কোনো শক্তি বলেনি ছাত্ররা তিনজন উপদেষ্টা হবে। শুরুতে দুজন উপদেষ্টা হলেন। মাহফুজ আলম তাঁদের সহযোগিতায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন। এটি একটি চাল ও টেকনিক ছিল। পরে তাঁকে দপ্তরবিহীন উপদেষ্টা করা হলো। এরপর তাঁকে তথ্য উপদেষ্টা করা হলো। তথ্য উপদেষ্টাকে বলা হয় সরকারের মুখপাত্র। তিনি (মাহফুজ) কখনো হেফাজতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন; কখনো জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে, কখনো বিএনপির বিরুদ্ধে, কখনো গণ অধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁর দায়িত্ব কি অনৈক্য সৃষ্টি করা?’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কড়া সমালোচনা করে রাশেদ খান বলেন, ‘তিনি (মাহফুজ আলম) যদি এত তাত্ত্বিক জ্ঞান ছড়াতে চান, তাহলে পদত্যাগ করে কেন জ্ঞানের ভান্ডার খুলে বসছেন না? এ রকম অনৈক্য সৃষ্টিকারী কী করে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বহাল থাকেন?’
উপদেষ্টা মাহফুজ ও আসিফ মাহমুদ সরকারে থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেন রাশেদ খান। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ ইতিমধ্যে উপদেষ্টারা তাঁদের আশীর্বাদ জানিয়েছেন। অন্যান্য উপদেষ্টা এই ছাত্রদের অনুগত। প্রধান উপদেষ্টা নিজে তাঁদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন। সুতরাং এই উপদেষ্টারা সরকারে থাকলে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই দুজন ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সেক্টরে যেসব ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, অবশ্যই তাঁদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।’
লিখিত বক্তব্য
সংবাদ সম্মেলনে একটি লিখিত বক্তব্যও পাঠ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকারে তিনজন ছাত্র উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তাঁদের একজন (নাহিদ ইসলাম) পদত্যাগ করে একটি দলের প্রধান হয়েছেন। বাকিরাও সরকারে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন। দল গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কি পদত্যাগকৃত উপদেষ্টা সম্পৃক্ত ছিলেন না? অবশ্যই ছিলেন। আর তিনজন ছাত্র উপদেষ্টার একই নেক্সাস। সুতরাং আমরা সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে বাকি দুজন ছাত্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করছি।’
বৈষম্যবিরোধী বা সমন্বয়কের কোনো অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই বলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদ বলেছে, সে ক্ষেত্রে সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে সরকারের সব সেক্টর ও দপ্তর থেকে ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করা অতীব জরুরি।
ঢাকা ওয়াসায় আউটসোর্সিং নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ হলেও পরে এগুলো স্থায়ী করার সুযোগ আছে। সুতরাং এই নিয়োগ অনৈতিক। এই নিয়োগের তদন্তসহ সরকারের সব দপ্তরে নিয়োগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটি বলেছে, বাংলাদেশে কোনো ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ নেই, সংখ্যালঘুদের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটেনি।
গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন ছ ত র উপদ ষ ট উপদ ষ ট র য উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট সরক র র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।
সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক