Samakal:
2025-08-01@20:11:24 GMT

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্বাগত

Published: 18th, March 2025 GMT

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্বাগত

ধর্ষণের শিকার হইয়া মাগুরার শিশু আছিয়ার হৃদয়বিদারক মৃত্যু সচেতন মানুষদের যদ্রূপ বেদনাহত করিয়াছে, তদ্রূপ উক্ত দুষ্কর্মের দ্রুত বিচার না হইবার বিষয়ও তাহাদের ক্ষুব্ধ করিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, ধর্ষণ মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা রহিয়াছে বলিয়াই অনেক সময় অপরাধী নিষ্কৃতি পাইয়া যায়। এই প্রেক্ষাপটেই শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কথা জানাইয়াছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আমরা মনে করি, ইহা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং ন্যায়বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিবে। সমকালের সংবাদ অনুসারে, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’-এর বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রস্তুত করিয়াছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবগুলি যাচাই-বাছাই করিয়া বৃহস্পতিবার উপদেষ্টামণ্ডলীর অনুমোদন করিবার কথা।

অনস্বীকার্য, দ্রুত বিচারের নামে অনেক সময় বিচারকে প্রহসনে পরিণত করা হয়।  কিন্তু ইহাও স্বীকার করিতে হইবে, বিশেষত অনেক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিচার ব্যস্থায়ও নারী অধিকার সম্পর্কে ইতিবাচক ধ্যানধারণার ঘাটতি রহিয়াছে। যাহার প্রভাবে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার হইতে বঞ্চিত হয়। এমতাবস্থায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে শুধু ধর্ষণের তদন্ত ও বিচারের সময় হ্রাস করাই যথেষ্ট নহে, তদন্ত ও বিচারকার্যে নিয়োজিতদেরও নারী অধিকার সম্পর্কে সংবেদনশীল করিয়া তোলা জরুরি। ইতোপূর্বেও নির্দেশনা ছিল– ৩০ দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করিয়া ১৮০ দিবসের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচারকার্য সমাপ্ত করিতে হইবে। কিন্তু উহা কতটা বাস্তবায়িত হইয়াছে, আমরা জানি। নূতন করিয়া ১৫ দিবসের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিবসের মধ্যে বিচারকার্য সমাপ্তির সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়াই আমরা মনে করি। তবে কেবল সিদ্ধান্ত লইলেই হইবে না; যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারিও এই ক্ষেত্রে জরুরি। 

ধর্ষণের বিচারের পথে আরও যেই সকল বিষয় বাধা হইয়া দাঁড়ায় সেই সকল বিষয়ও সরকার যেইভাবে চিন্তা করিয়াছে, উহা সাধুবাদযোগ্য। ধর্ষণ মামলার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা, চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষায় না থাকিয়া পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দিবার সুযোগ তাৎপর্যপূর্ণ বলিয়া বিবেচিত হইবে। আমরা দেখিয়াছি, ডিএনএ রিপোর্ট পাইবার অপেক্ষায় অনেক মামলা ঝুলিয়া থাকে। তজ্জন্য এই বিকল্প উপায় সময় হ্রাস করিতে ভূমিকা রাখিবে। 

আমাদের বিশ্বাস, অল্প সময়ে ধর্ষণের বিচার সম্পন্ন হইলে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শিশু ধর্ষণের বিচারে বাস্তবে শাস্তির কিছু উদাহরণ তৈয়ার হইলে ধর্ষণ হ্রাসে ভূমিকা রাখিবে। তবে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে ইহাই যথেষ্ট নহে। দেখা গিয়াছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় ও পরিচিতজনই শিশু ধর্ষণে প্রবৃত্ত হয়। তজ্জন্য মা-বাবা ও অভিভাবকের সচেতনতাও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে হইবে অভিভাবকদেরই। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, আইনের শাসন নিশ্চিত করা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সকলে সোচ্চার হইলে এহেন অপরাধ বন্ধ হইতে পারে। 
দুঃখজনক হইলেও সত্য, মাগুরায় শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করিলেও ধর্ষণ নামক অঘটনে কোনো ছেদ পড়ে নাই। আছিয়ার মৃত্যুতে ধর্ষণের বিচার দাবিতে সমগ্র দেশে প্রতিবাদ হইয়াছে। এই সময়ে তারুণ্যের ইতিবাচক জাগরণের বিষয়ও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা উল্লেখ করিয়াছি। ইহার পরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে। এমনকি বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের পর বাবা মামলা করিলে, বাবাকে হত্যা করা হইয়াছে। এই সকল বিষয়ও কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে। 
ধর্ষণ শুধু সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীর জীবনই তছনছ করিয়া দেয় না; উহার পরিবারও এক প্রকার সামাজিক কলংক আরোপের শিকার হয়। সর্বোপরি, রাষ্ট্র ও সমাজ এহেন পরিস্থিতিতে সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে না। তাই সমাজকে এই ভয়ংকর অপরাধমুক্ত করা জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর য় ছ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ