Samakal:
2025-06-16@08:56:41 GMT

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্বাগত

Published: 18th, March 2025 GMT

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্বাগত

ধর্ষণের শিকার হইয়া মাগুরার শিশু আছিয়ার হৃদয়বিদারক মৃত্যু সচেতন মানুষদের যদ্রূপ বেদনাহত করিয়াছে, তদ্রূপ উক্ত দুষ্কর্মের দ্রুত বিচার না হইবার বিষয়ও তাহাদের ক্ষুব্ধ করিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, ধর্ষণ মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা রহিয়াছে বলিয়াই অনেক সময় অপরাধী নিষ্কৃতি পাইয়া যায়। এই প্রেক্ষাপটেই শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কথা জানাইয়াছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আমরা মনে করি, ইহা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং ন্যায়বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিবে। সমকালের সংবাদ অনুসারে, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’-এর বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রস্তুত করিয়াছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবগুলি যাচাই-বাছাই করিয়া বৃহস্পতিবার উপদেষ্টামণ্ডলীর অনুমোদন করিবার কথা।

অনস্বীকার্য, দ্রুত বিচারের নামে অনেক সময় বিচারকে প্রহসনে পরিণত করা হয়।  কিন্তু ইহাও স্বীকার করিতে হইবে, বিশেষত অনেক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিচার ব্যস্থায়ও নারী অধিকার সম্পর্কে ইতিবাচক ধ্যানধারণার ঘাটতি রহিয়াছে। যাহার প্রভাবে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার হইতে বঞ্চিত হয়। এমতাবস্থায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে শুধু ধর্ষণের তদন্ত ও বিচারের সময় হ্রাস করাই যথেষ্ট নহে, তদন্ত ও বিচারকার্যে নিয়োজিতদেরও নারী অধিকার সম্পর্কে সংবেদনশীল করিয়া তোলা জরুরি। ইতোপূর্বেও নির্দেশনা ছিল– ৩০ দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করিয়া ১৮০ দিবসের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচারকার্য সমাপ্ত করিতে হইবে। কিন্তু উহা কতটা বাস্তবায়িত হইয়াছে, আমরা জানি। নূতন করিয়া ১৫ দিবসের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিবসের মধ্যে বিচারকার্য সমাপ্তির সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়াই আমরা মনে করি। তবে কেবল সিদ্ধান্ত লইলেই হইবে না; যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারিও এই ক্ষেত্রে জরুরি। 

ধর্ষণের বিচারের পথে আরও যেই সকল বিষয় বাধা হইয়া দাঁড়ায় সেই সকল বিষয়ও সরকার যেইভাবে চিন্তা করিয়াছে, উহা সাধুবাদযোগ্য। ধর্ষণ মামলার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা, চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষায় না থাকিয়া পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দিবার সুযোগ তাৎপর্যপূর্ণ বলিয়া বিবেচিত হইবে। আমরা দেখিয়াছি, ডিএনএ রিপোর্ট পাইবার অপেক্ষায় অনেক মামলা ঝুলিয়া থাকে। তজ্জন্য এই বিকল্প উপায় সময় হ্রাস করিতে ভূমিকা রাখিবে। 

আমাদের বিশ্বাস, অল্প সময়ে ধর্ষণের বিচার সম্পন্ন হইলে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শিশু ধর্ষণের বিচারে বাস্তবে শাস্তির কিছু উদাহরণ তৈয়ার হইলে ধর্ষণ হ্রাসে ভূমিকা রাখিবে। তবে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে ইহাই যথেষ্ট নহে। দেখা গিয়াছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় ও পরিচিতজনই শিশু ধর্ষণে প্রবৃত্ত হয়। তজ্জন্য মা-বাবা ও অভিভাবকের সচেতনতাও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে হইবে অভিভাবকদেরই। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, আইনের শাসন নিশ্চিত করা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সকলে সোচ্চার হইলে এহেন অপরাধ বন্ধ হইতে পারে। 
দুঃখজনক হইলেও সত্য, মাগুরায় শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করিলেও ধর্ষণ নামক অঘটনে কোনো ছেদ পড়ে নাই। আছিয়ার মৃত্যুতে ধর্ষণের বিচার দাবিতে সমগ্র দেশে প্রতিবাদ হইয়াছে। এই সময়ে তারুণ্যের ইতিবাচক জাগরণের বিষয়ও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা উল্লেখ করিয়াছি। ইহার পরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে। এমনকি বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের পর বাবা মামলা করিলে, বাবাকে হত্যা করা হইয়াছে। এই সকল বিষয়ও কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে। 
ধর্ষণ শুধু সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীর জীবনই তছনছ করিয়া দেয় না; উহার পরিবারও এক প্রকার সামাজিক কলংক আরোপের শিকার হয়। সর্বোপরি, রাষ্ট্র ও সমাজ এহেন পরিস্থিতিতে সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে না। তাই সমাজকে এই ভয়ংকর অপরাধমুক্ত করা জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর য় ছ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ