Samakal:
2025-09-17@21:28:54 GMT

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্বাগত

Published: 18th, March 2025 GMT

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্বাগত

ধর্ষণের শিকার হইয়া মাগুরার শিশু আছিয়ার হৃদয়বিদারক মৃত্যু সচেতন মানুষদের যদ্রূপ বেদনাহত করিয়াছে, তদ্রূপ উক্ত দুষ্কর্মের দ্রুত বিচার না হইবার বিষয়ও তাহাদের ক্ষুব্ধ করিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, ধর্ষণ মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা রহিয়াছে বলিয়াই অনেক সময় অপরাধী নিষ্কৃতি পাইয়া যায়। এই প্রেক্ষাপটেই শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কথা জানাইয়াছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আমরা মনে করি, ইহা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং ন্যায়বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিবে। সমকালের সংবাদ অনুসারে, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’-এর বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রস্তুত করিয়াছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবগুলি যাচাই-বাছাই করিয়া বৃহস্পতিবার উপদেষ্টামণ্ডলীর অনুমোদন করিবার কথা।

অনস্বীকার্য, দ্রুত বিচারের নামে অনেক সময় বিচারকে প্রহসনে পরিণত করা হয়।  কিন্তু ইহাও স্বীকার করিতে হইবে, বিশেষত অনেক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিচার ব্যস্থায়ও নারী অধিকার সম্পর্কে ইতিবাচক ধ্যানধারণার ঘাটতি রহিয়াছে। যাহার প্রভাবে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার হইতে বঞ্চিত হয়। এমতাবস্থায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে শুধু ধর্ষণের তদন্ত ও বিচারের সময় হ্রাস করাই যথেষ্ট নহে, তদন্ত ও বিচারকার্যে নিয়োজিতদেরও নারী অধিকার সম্পর্কে সংবেদনশীল করিয়া তোলা জরুরি। ইতোপূর্বেও নির্দেশনা ছিল– ৩০ দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করিয়া ১৮০ দিবসের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচারকার্য সমাপ্ত করিতে হইবে। কিন্তু উহা কতটা বাস্তবায়িত হইয়াছে, আমরা জানি। নূতন করিয়া ১৫ দিবসের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিবসের মধ্যে বিচারকার্য সমাপ্তির সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়াই আমরা মনে করি। তবে কেবল সিদ্ধান্ত লইলেই হইবে না; যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারিও এই ক্ষেত্রে জরুরি। 

ধর্ষণের বিচারের পথে আরও যেই সকল বিষয় বাধা হইয়া দাঁড়ায় সেই সকল বিষয়ও সরকার যেইভাবে চিন্তা করিয়াছে, উহা সাধুবাদযোগ্য। ধর্ষণ মামলার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা, চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষায় না থাকিয়া পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দিবার সুযোগ তাৎপর্যপূর্ণ বলিয়া বিবেচিত হইবে। আমরা দেখিয়াছি, ডিএনএ রিপোর্ট পাইবার অপেক্ষায় অনেক মামলা ঝুলিয়া থাকে। তজ্জন্য এই বিকল্প উপায় সময় হ্রাস করিতে ভূমিকা রাখিবে। 

আমাদের বিশ্বাস, অল্প সময়ে ধর্ষণের বিচার সম্পন্ন হইলে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শিশু ধর্ষণের বিচারে বাস্তবে শাস্তির কিছু উদাহরণ তৈয়ার হইলে ধর্ষণ হ্রাসে ভূমিকা রাখিবে। তবে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে ইহাই যথেষ্ট নহে। দেখা গিয়াছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় ও পরিচিতজনই শিশু ধর্ষণে প্রবৃত্ত হয়। তজ্জন্য মা-বাবা ও অভিভাবকের সচেতনতাও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে হইবে অভিভাবকদেরই। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, আইনের শাসন নিশ্চিত করা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সকলে সোচ্চার হইলে এহেন অপরাধ বন্ধ হইতে পারে। 
দুঃখজনক হইলেও সত্য, মাগুরায় শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করিলেও ধর্ষণ নামক অঘটনে কোনো ছেদ পড়ে নাই। আছিয়ার মৃত্যুতে ধর্ষণের বিচার দাবিতে সমগ্র দেশে প্রতিবাদ হইয়াছে। এই সময়ে তারুণ্যের ইতিবাচক জাগরণের বিষয়ও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা উল্লেখ করিয়াছি। ইহার পরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে। এমনকি বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের পর বাবা মামলা করিলে, বাবাকে হত্যা করা হইয়াছে। এই সকল বিষয়ও কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে। 
ধর্ষণ শুধু সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীর জীবনই তছনছ করিয়া দেয় না; উহার পরিবারও এক প্রকার সামাজিক কলংক আরোপের শিকার হয়। সর্বোপরি, রাষ্ট্র ও সমাজ এহেন পরিস্থিতিতে সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে না। তাই সমাজকে এই ভয়ংকর অপরাধমুক্ত করা জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর য় ছ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ