‘৭২১ কোটি টাকা বৈধ আয়, বৈধ পথেই দেশে এনেছি’
Published: 20th, March 2025 GMT
রেমিট্যান্স হিসেবে ৭২১ কোটি টাকা আনা প্রতীকী গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান দাবি করেছেন, বৈধ আয় থেকেই তিনি এ অর্থ দেশে এনেছেন। তিনি বলেন, যথাযথ কর পরিশোধ করে বৈধ পথেই আনা হয়েছে এ অর্থ। গতকাল বুধবার সমকালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে বিদেশে অবস্থানরত ফারুকী হাসান এমনটিই দাবি করেন।
ফারুকী হাসান বলেন, ‘কোথা থেকে কীভাবে এত বছর ধরে এই অর্থ দেশে এসেছে, তার সবকিছুই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানত। অথচ এত বছর পর এখন আমার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দু:খজনক।’ এই ঘটনায় তাঁকে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে তিনি। প্রসঙ্গত, গত সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের এক মতবিনিময় সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো.
এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে জানা যায়, ব্যক্তিটি প্রতীকী গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। দেশে তাঁর সিরামিক, ডেভেলপার, খাদ্য, এনার্জি ও রিফাইনারির ব্যবসা রয়েছে। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তবে ২০০১ সাল থেকে তিনি কানাডায় থাকেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ফারুকী হাসান দেশে একটি হোটেলের মালিক। তাঁর আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স রয়েছে। তিনি একটি ব্যাংকের পরিচালক। দেশে জমির ব্যবসায় বিপুল বিনিয়োগও করেছেন। কানাডায় তিনটি বাড়ি রয়েছে। তবে সেগুলোর তথ্য আয়কর ফাইলে প্রদর্শন করেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুকী হাসান বলেন, বাংলাদেশের নৌ ও সেনাবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ কেনার দরপত্রে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে চীন থেকে ১৫টি যুদ্ধজাহাজ কিনেছে বাংলাদেশ। এসব জাহাজ আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে। চীনের হয়ে বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে রপ্তানি কার্যক্রমে মধ্যস্থতা করেছেন ফারুকী হাসান। অর্থাৎ বাংলাদেশে যুদ্ধজাহাজ রপ্তানির আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া তাঁর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এতে তিনি পরামর্শক ফি বাবদ বৈধ পথে অর্থ আয় করেছেন। পরে প্রবাসী আয় হিসেবে কয়েক ধাপে প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে এ অর্থ দেশে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এই অর্থ দেশটির মুদ্রা ইউয়ানে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। বৈদেশিক এই মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংক তার কোম্পানির হিসাবে স্থানান্তর করেছে। চীন সরকার অর্জিত এ অর্থের ওপর কর কেটে রেখেছে। কর পরিশোধের সনদপত্রও দিয়েছে চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। কর ফাইলের সঙ্গে সেই সনদপত্র দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। নিয়ম অনুযায়ী, আয়ের উৎস দেশে কর কাটা হলে বাংলাদেশে কর দিতে হয় না।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা-বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের প্রভাব খাটিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে এ অর্থ দেশে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুকী হাসান বলেন, পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর হলেও তাঁর জন্ম ঢাকার কলাবাগানে। সেই ছোট বয়স থেকেই তারেক সিদ্দিককে তিনি চিনতেন। তাঁর সঙ্গে বহু বছরের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু অভিযোগটি সঠিক নয়। এখানে প্রভাব খাটানোর কিছু নেই। কারণ কোথা থেকে কীভাবে এত বছর এই অর্থ দেশে এসেছে, তার সবকিছুই এনবিআর জানত। কিন্তু এত বছর পর এখন কর ফাঁকির অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
ফারুকী হাসান বলেন, ‘গত ১১ মার্চ এনবিআর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ২০ মার্চের মধ্যে সেগুলো জমা দিতে বলা হয়। তাদের চাওয়া অনুযায়ী কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার আগেই এনবিআর এ ঘটনা ফাঁস করেছে। এতে আমাকে এবং আমার প্রতিষ্ঠানকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। অথচ আমি চারবার সিআইপি হয়েছি। উপার্জিত অর্থে বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছি। এসব কারখানায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষ কাজ করে। প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা কর দিই।’
তিনি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। তাঁর দেওয়া পাসপোর্টে এখন দেশ-বিদেশে ঘুরি। কিন্তু ধান্ধাবাজি করিনি কখনও। কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি থাকলেও এখন কোনো দলের পদ-পদবিতে নেই।’
ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকে তাঁর প্রায় ১০০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত স্থগিত করেছে এনবিআর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা জাকাত দিতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাব স্থগিত করায় জাকাত দেওয়ার অর্থও তোলা যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে সমাধানের জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ স ন বল ন এত বছর কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।