চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ সম্পর্কে জানি না: গৌতম ঘোষ
Published: 20th, March 2025 GMT
বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রায়ই সোনালি যুগের চলচ্চিত্র প্রধান হয়ে ওঠে। সময়ের ফ্রেম দিয়ে তৈরি এই ‘সোনালি যুগের চলচ্চিত্র’ চিনেন না ‘পদ্মানদীর মাঝি’ সিনেমার পরিচালক গৌতম ঘোষ।
ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক গৌতম ঘোষ। পুরোনো বাংলা সিনেমা পুনরায় কলকাতায় মুক্তির পরিকল্পনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন গৌতম।
এ আলাপচারিতায় জানতে চাওয়া হয়, স্বর্ণযুগ পরবর্তী সময়ের দর্শক কি আপনি? এ প্রশ্নের উত্তরে গৌতম ঘোষ বলেন, “কোনটা স্বর্ণযুগ আমি জানি না। কথায়-কথায় এগুলো আমরা সকলে বলে থাকি। স্বর্ণ-রৌপ্য— এভাবে নির্দিষ্ট যুগে সিনেমাকে ভাগ করা যায় না। সময়ের সঙ্গে অনেককিছু পাল্টায়। যে সময় উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক সিনেমা রিলিজ করেছে, সেই সময় বাঙালি ওই রোমান্টিকতা গ্রহণ করতে পারত। এখন সেই সময়টা আর নেই। সেই রোমান্টিসিজমও ফুরিয়ে গিয়েছে। অন্য সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা।”
আরো পড়ুন:
নিজের চোখে সন্তানের বেড়ে ওঠা দেখতে চাই: পরমব্রত
নায়ক থেকে গায়ক সিয়াম, সঙ্গী হিমি
আপনি কী কলকাতা বা বাঙালি দর্শকদের মাঝে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন? জবাবে গৌতম ঘোষ বলেন, “কলকাতা হলো নানা শ্রেণির মানুষের শহর। কেবলই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্তের শহর নয়। ওয়ার্কিং ক্লাসের শহর। একসময় ব্রিটিশদের রাজধানীও ছিল। মানুষ এ বিষয়ে কী ধারণা পোষণ করছেন জানি না। তবে মানসিকতা একটা ব্যাপার। মধ্যবিত্ত মানসিকতা থেকে বেরিয়ে যাওয়াও একটা ব্যাপার। তৃণমূল স্তরের মানুষকে বোঝা আরো বড় ব্যাপার। তবে একটা কথা বলতে চাই— মননশীল চর্চার দিক থেকে কলকাতা আস্তে আস্তে পিছিয়ে যাচ্ছে। মননশীল কাজের ওজন কমে আসছে।”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে গৌতম ঘোষ বলেন, “আমাদের বাংলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দেশভাগ। আসলে ভারত তো ভাগ হয়নি। ভাগ হয়েছে পাঞ্জাব ও বাংলা। এই ভাগাভাগির ফলে আমাদের অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েছে। সিনেমা আসলে ‘হোপ’। আশা। পজিটিভ চিন্তার জায়গা। নেগেটিভ ইমোশন সরিয়ে যদি পজিটিভ ইমোশনের দিকে এগিয়ে যাই, তাহলে খানিকটা উজ্জ্বল পথের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র কলক ত সময় র
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’