Samakal:
2025-11-02@21:45:03 GMT

ঘুমের ওপাশে

Published: 20th, March 2025 GMT

ঘুমের ওপাশে

সকাল নরম ভাব কাটিয়ে তেজি হয়ে ওঠার আগে চারপাশ ছায়াছায়া হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে আছি ঘরের বারান্দায়। টিনের চালের ঘর। সামনে বাইরে-বাড়ির উঠোন। সেখানে সবুজ ডগমগে পাতা নিয়ে ডালপালা মেলে দাঁড়ানো পেয়ারা গাছ। পেয়ারা গাছের পাতাজুড়ে ছায়া নেমে এসেছে। অমনি ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো। আকাশভাঙা ঝুমবৃষ্টি। টিনের চালে বাতাসের সাথে বৃষ্টি নেচে যাচ্ছে। ঘরের বারান্দা থেকে নেমে এসেছি উঠোনে। তুমুল বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা আমাকে ভিজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মাড় দেওয়া সুতি শাড়িতে পানি পড়লে যে মাতাল গন্ধ হয় সেই গন্ধ ভেসে আসছে। বুনো চাপা গন্ধ ছায়া আর বৃষ্টিতে মিশে জমাট বাঁধছে। পেয়ারা গাছের ওপাশে ঘন বৃষ্টিতে সবুজ ছাপা হলুদ শাড়ি দেখা যাচ্ছে। কুয়াশায় খানিক অস্পষ্ট, খানিক ধোঁয়াশা। মুষলধারে সেই বৃষ্টিতে ছোট ফুপু দৃশ্যমান হয়েছে। ছোট ফুপু বয়সে আমার চেয়ে খুব বেশি বড় নয়। কিশোরবেলায় নদীতে গোসল করতে যেতাম ফুপুর সাথে। মাঠে যেতাম ছোলা শাক তুলতে। ফুপু যখন ছোলা শাক তুলে কোঁচড় ভরতি করত তখন মাঠের আইল দাপিয়ে এসে ফুপুর পিঠ ঘেঁষে বসতাম। বাড়িতে অতিথি এলে গ্রামের ভেতর মুরগির ডিম, না হয় মুরগি খুঁজতে বের হতো ফুপু। আমি যেতাম ফুপুর আঁচল ধরে। ঝুমবৃষ্টিতে ফুপু আপন মনে নেচে যাচ্ছে। যেন সে কিশোরী একজন। আমি আমার ছেলেবেলায়।
দুড়দাড় অঢেল বৃষ্টির ভেতর ঘুম ভেঙেছে। তখন প্রশান্তি বোধ করছি। যেন খানিক আগে বৃষ্টির স্রোতে ভেসে ঘরে এসে উঠেছি। আমার বসবাস দুই জগতে। এক জগৎ আমার ঘুমের এপারে। আরেক জগৎ ঘুমের ওপারে। যখন জেগে থাকি, মানে যখন ঘুমের এপারে, তখন জীবনের নানা টানাপোড়েনে সময় কাটে। এলোমেলো বাজারদর অস্থির করে তোলে। খবরে পাওয়া নির্যাতন আর পৈশাচিকতা নিজের ভেতরটাকে ভেঙেচুরে গুঁড়ো করে ফেলে। আর যখন ঘুমের ওপারে! যেন অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের মতো কোনো এক অদ্ভুত জগতে চলে যাই। সাদা খরগোশের পেছনে ছুটতে ছুটতে উঠে পড়ি বিশাল জাহাজে। প্রবল চাঁদনি রাতে সমুদ্রের নীল পানিতে ফিনিক দেওয়া জোছনার আলোর ভেতর দিয়ে জাহাজ এগিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছি জানি না। জানার কোনো ইচ্ছে আছে বলে মনেও হয় না। কোথাও গিয়ে পৌঁছুলেই হলো। আবার কোথাও না পৌঁছুলেও কোনো তাড়া নেই। পৌঁছুতেই যে হবে তা নয়। জোছনা ভরা সমুদ্রে ভেসে ভেসে যেতেই আনন্দ।
বিজ্ঞানীরা বলেন, আমরা যখন ঘুমাই তখন প্যারাইটাল লোব ধারাবাহিকভাবে নানা ধরনের সিগন্যাল সৃষ্টি করতে থাকে। আমাদের ব্রেইন সেই সমস্ত সিগন্যাল সাজিয়ে গল্প বানিয়ে ফেলে। বেশির ভাগ গল্প হয় জমজমাট, উত্তেজক বা প্রশান্তিময়। সেই গল্পের দৃশ্য, লোকেশন, লাইট সবমিলিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি।
কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েরা স্বপ্ন দেখে পরীক্ষা হলে বসেছে পরীক্ষা দিতে। প্রশ্নপত্রের একটি প্রশ্নও বুঝতে পারছে না। অথবা প্রশ্নপত্রে কোনো প্রশ্ন নেই। সাদা প্রশ্নপত্র। আবার এমনও হয় প্রশ্ন আছে তবে লেখা পড়া যাচ্ছে না। কিংবা ঘণ্টা বাজছে। খাতা জমা দিতে হবে। সব প্রশ্নের উত্তর লেখা হয়নি। কলমের কালি ফুরিয়ে গেছে। সময় চলে যাচ্ছে। সবাই লিখছে কিন্তু সে লিখতে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। শরীর প্রচণ্ডভাবে চেপে আসছে। অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। এমন স্বপ্ন বারবার ফিরে আসে বয়ঃসন্ধিকালে। যখন কিশোর-কিশোরীরা তাদের শারীরিক আর মানসিক পরিবর্তনের এক ভয়াবহ টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যেতে থাকে। 
কখনও আবার ঘুমের ওপারে একই ঘটনা ফিরে আসে তারুণ্যে। যখন সে ঘুমের এপারের জীবনের ভারসাম্য ঠিকঠাক করতে হিমশিম খেয়ে যায়। উত্তর-তারুণ্যেও ঘুমের ওপারে পরীক্ষা হলের এমন ঘটনার দেখা পাওয়া যায় যদি তখনও জীবনের টানাপোড়েনের হিসাব না মেলে।  
কখনও কাউকে সাপ তাড়া করে। সাপের ছোবল থেকে বাঁচতে শুরু করে দৌড়। দৌড়ানো সম্ভব হয় না। পা আটকে থাকে। চিৎকার করে কারও সাহায্য চাওয়ার চেষ্টা করে। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। আতঙ্কে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। পুরো শরীর ঘেমে ঘুম ভেঙে যায়।
এসব ঘুমের ওপারের কথা। কী থাকে ঘুমের ওপারে! রহস্যে ভরা এক অদ্ভুত জগৎ। বাস্তব নয়, আবার পুরোটা ফ্যান্টাসিও নয়। বাস্তব আর জাদুবাস্তবতার মাঝে দোদুল্যমান সময়। তবে আবার তা অতিপ্রাকৃত বা অলীক নয়, আবার লৌকিকও বলা যায় না। সেই রহস্য ঘিরে নানান অর্থ তৈরি হয়।
ঘুমের ওপারের রহস্যময় জগতে বিচরণের ঘটনা অনেকে ব্যাখ্যা করে থাকেন। এই ব্যাখ্যা কখনও করেন মনোবিদ, কখনও ধর্মশাস্ত্র আবার কখনও লৌকিকজন। সেসব ব্যাখ্যার কোথাও বলা হয়ে থাকে, ঘুমের ওপারে যদি কাউকে সাপ তাড়া করে তার অর্থ হচ্ছে শত্রুরা তার সাথে শত্রুতা করার চেষ্টা করছে। সাপ ছোবল দেওয়ার ভেতর লুকিয়ে আছে ভয়ংকর কোনো ইঙ্গিত। ঘুমের এপারের বাস্তব জীবনে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আমরা ঘুমের ওপারের জগতে যাই ঘুমের এপারের জগতের জন্য কী বার্তা আছে তা জানতে। যেখানে এক সাপ দেখা নিয়েই বিভিন্ন অর্থ বানানো হয়েছে। কেউ ঘুমের ওপারে দেখা সাপকে ঘুমের এপারের জীবনের সুখ আর সমৃদ্ধির বার্তা বলে চিহ্নিত করেছেন। সাপ যদি গর্ভবতী নারীর গলা জড়িয়ে ধরে তবে তাকে জানানো হচ্ছে সে পুত্রসন্তান লাভ করতে যাচ্ছে। আবার পায়ের ওপর সাপ উঠে আসা মানে প্রচুর অর্থলাভের সম্ভাবনা এবং শিগগিরই সাফল্যলাভ। তবে সাপ ছোবল দিলে সেটা এ জীবনের ভয়ংকর কোনো ক্ষতির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। 
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ঘুমের ওপারে আমরা স্বপ্ন দেখি মনস্তাত্ত্বিক কারণে। আশ্চর্য সেই মনস্তাত্ত্বিক কারণ। আমাদের অবচেতন মনে যে চিন্তাভাবনা, ইচ্ছে বা ভয় থাকে ব্রেইন তা দিয়ে গল্প বানিয়ে স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্নের কথা আমরা জানতে পেরেছি প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় কাদামাটির পাত্রে উল্লেখ থেকে। তারা বিশ্বাস করত মানুষ যখন ঘুমের ওপারে চলে যায় তখন ঘুমন্ত মানুষের শরীর থেকে তার আত্মা বের হয়ে আসে। সেই আত্মা বিচরণ করে ঘুমের ওপারে দেখা পরিবেশে বা ঘটনায়। 
ওদিকে গ্রিক আর রোমান যুগে মানুষেরা ভাবত ঘুমের ওপারে দেখা ঘটনা হচ্ছে এক বা একাধিক দেবতার কাছ থেকে আসা বার্তা কিংবা তাদের পূর্বপুরুষ মৃত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া সংকেত। যা তারা ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে মানত।
আবার প্রাচীন মিসরীয়দের বিশ্বাস ছিল মানুষ যখন ঘুমের ওপারে যায় তখন দেবতাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ আসে। যা তারা ঘটনার মধ্য দিয়ে দেখতে পায়। ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে ঘুমের ওপারে থাকা। 
চীনা ইতিহাস থেকে জানা যায়, মানুষ যখন ঘুমের ওপারে যায় তখন একটি আত্মা তার দেহ থেকে মুক্তি পায়। আরেকটি আত্মা থেকে যায় দেহের অভ্যন্তরে। 


সেই একসুরে ভারতীয় পাঠ উপনিষদে বলা হলো ঘুমের ওপারে যাত্রাকালে মানুষের আত্মা দেহত্যাগ করে। তাতে দেখা গেছে প্ল্যানচেট করার সময় মৃত আত্মার পাশাপাশি অনেক সময় জীবিত ঘুমন্ত মানুষের আত্মাও হাজির হয়েছে।   
ঘুমের ওপারের ঘটনা নিয়ে যার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠভাবে জানতে পেরেছি তিনি হচ্ছেন মনস্তাত্ত্বিক সিগমন্ড ফ্রয়েড। তাঁর মতে, ঘুমের এপারে মানুষের বাস্তবতার জীবনে যেসব আকাঙ্ক্ষা, তাড়না, অনুভূতি, চিন্তা মানুষ প্রকাশ করতে পারে না, ঘুমের ওপারের জগতে গিয়ে স্বপ্নের ভেতর সেগুলো প্রকাশ পায়। 
অর্থাৎ মানুষের অনেক অবদমিত ইচ্ছে থাকে। এই ইচ্ছেগুলো বাস্তব জীবনে অর্থাৎ ঘুমের এপারে যে জীবন সেই জীবনে আমরা ছুঁতে পারি না বা অর্জন করতে পারি না। ইচ্ছেগুলো অবদমিত থেকে যায়। কখনও তা অবচেতন মনের এত গভীরে গিয়ে থিতু হয়, যার খোঁজ অনেকে পায় না। মানুষের স্বপ্নে, যখন সে ঘুমের ওপারে তখন সেই ইচ্ছেগুলো সামনে আসে। মানুষ বিস্মিত হয়, লজ্জায় আরক্ত হয়, অস্বস্তি বোধ করে আবার ভয় বা আতঙ্কে শিটিয়ে যায়। 
মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের ঘুমের ওপারে আছে চার স্তর। প্রথম স্তর হচ্ছে স্লিপ অনসেট। দ্বিতীয় স্তরে আছে লাইট স্লিপ। আর তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তর মিলিয়ে হয় ডিপ স্লিপ। এটাকে অন্যভাবে বলে র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট স্টেজ। ঘুমের ওপারে বেশির ভাগ দুঃস্বপ্ন এই স্তরে দেখা যায়। ঘুমের বিশ শতাংশ জুড়ে থাকে এই র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট স্টেজ।
মানুষ এ কথা বিশ্বাস করে যে ঘুমের ওপারের জগৎ অর্থপূর্ণ আর লুকিয়ে থাকা সত্যের প্রকাশ।  
তবে ঘুমের ওপারের আশি শতাংশ হচ্ছে প্রশান্তির সম্ভাবনা। কেন ঘুমের ওপারে এমন প্রশান্তির আশায় ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কারণ, ঘুমের ওপারের সময় স্মৃতিকে পোক্ত করে। আবেগকে সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে থাকে। সারাদিন ব্রেইন অনেক ইনফরমেশন কালেক্ট করে ফেলে। ঘুমের ওপারের সময় সেই তথ্যগুলো ছোট ছোট এপিসোডে ভাগ করে স্বপ্নের গল্প বানায়। কখনও গল্প বা উপন্যাসের প্লট পাওয়া যায় ঘুমের ওপার থেকে, কখনও ছবি আঁকার দৃশ্যপট কিংবা কবিতা বা গানের লাইন। ঘুমের ওপারের জগৎ হচ্ছে মানুষের অবচেতন মনের গভীরে যাওয়ার বড় রাস্তা। অবচেতন মনে কী ঘটছে, যার সবটুকু জানা হয়নি তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় ঘুমের ওপারে যখন স্বপ্ন দেখা হয়।  
তখন আবার নিরেট বেকারকাল। চাকরির সন্ধানে সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াই। পরীক্ষা দিই, ইন্টারভিউ দিই, চাকরি মেলে না। রাতে যখন বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমের ওপারে চলে যাই তখন দেখি বর্ষার উথালপাতাল ভরা নদী। সেই উত্তাল নদীতে পড়ে গেছি। প্রবল স্রোত আর ঘোলা পানি। নদীর পাড় দেখতে পাই। পাড়ে ওঠার জন্য প্রাণপণ সাঁতার কাটি। স্রোতের তোড়ে ভেসে যাই অনেকখানি। তবু হাল ছাড়ি না। সাঁতার কাটি। সাঁতার কাটতে থাকি। একসময় গিয়ে ঠিকই পৌঁছে যায় নদীর পাড়ের কাছাকাছি। অমনি প্রচণ্ড এক ঢেউ এসে আঘাত করে। ছিটকে যাই নদীর পাড় থেকে বহুদূর। তারপর নদীর ঘোলা পানিতে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যাই। 
ঘুমের ওপারে একই ঘটনা দেখতে থাকি দিনের পর দিন। ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ঘুমের এপারের জীবন ধীরে ধীরে অর্থহীন হয়ে উঠতে থাকে। নিজেকে তুচ্ছ বোধ হয়। ব্যর্থতা ডুবিয়ে মারে।
কার্ল ইয়ং জানালেন, ঘুমের ওপারে বারবার দেখা ঘটনার প্রতি মনোযোগ দেওয়া দরকার। ঘুমের ওপারে পৌনঃপুনিক দেখা ঘটনা সমস্যাকে অবহেলা করার নির্দেশক। সফলতার ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি।  
ক্যারল ওয়াশারম্যান নামের একজন গবেষক বললেন, যে রাতে তিনি চিংড়ি মাছ দিয়ে খাবার খেতেন, সেসব রাতে তিনি ঘুমের ওপারে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখতেন। অশান্ত বিশ্রামহীন রাত পার করতেন। তিনি চিংড়ি মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। তাঁর দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটল।
ঘুমের ওপারে দেখতে চাইলাম বৃষ্টি আর জলরাশি। যেন এক গোলক হয়ে গেছি। তার মধ্যে আমার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। আমাকে নিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছি ইতিবাচক ভাবনার মিশেলে সাফল্যের পথে। ঘুমের ওপারে আকাশভাঙা ঝুমবৃষ্টিতে ভিজছি। দিনের পর দিন উচ্ছ্বসিত নদীর স্রোতে আর সমুদ্রের নীল জলে ভেসে যাচ্ছি। স্বপ্নে বৃষ্টি দেখার অর্থ হলো বৈধ পথে নগদ টাকাপয়সার আগমন বার্তা। আর পানি দেখার অর্থ হচ্ছে সমস্ত ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাওয়া। এখন আমি ঘুমের ওপারে ঝুমবৃষ্টি দেখি। শীতের নদীতে বয়ে যাওয়া ঝকঝকে পানি দেখি। সূর্যের আলো সেই পানিতে প্রতিফলিত হয়। আর দেখি গভীর উদ্দাম জোছনায় আদিগন্ত সমুদ্রের উজ্জ্বল নীল জলরাশি।   
ঘুমের ওপারে পানি দেখলে গহিন ভেতরে প্রশান্তি বোধ হয়, মনের নিতল আরামদায়ক পরিবেশে থাকা যায়।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ মব ষ ট জ বন র র জ বন পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত