গণঅভ্যুত্থানের পর গাজীপুরের শ্রীপুরে ২৫ শিক্ষকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলাকে মিথ্যা দাবি করে সেগুলো থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় মানববন্ধন করেছেন শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতারা।

জানা যায়, কোনো কোনো শিক্ষক রয়েছেন আত্মগোপনে, কেউ আবার বাড়ি ছেড়ে যাপন করছেন ফেরারি জীবন। হত্যা মামলায় আসামি হয়েও এদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়েই শ্রেণিকক্ষে পাঠ দান করে চলছেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় ১০টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৯ জনের পরিবার ৯টি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার মানুষকে। অন্যদিকে ওই ঘটনায় আব্দুল আলীম শেখ নামে বিজিবি’র এক সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ সেক্টর সদর দপ্তরের জেসিও নায়েব সুবেদার সোহেল রানা একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাত হাজার হাজার মানুষকে। 

শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাজী ছোট কলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান সজল অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় সংঘর্ষে নিহত পরিবারগুলোর দায়ের করা পৃথক ৪টি মামলায় আসামি করা হয়েছে উপজেলার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ শিক্ষক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। মামলায় আসামি করা শিক্ষকরা ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। মামলাগুলোর বাদীরাও চিনেন না তাদেরকে। নামও জানেন না। তবুও ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে একটি কুচক্রী মহল তাদেরকে মামলায় জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ।

তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মানুষ গড়ার এ সব কারিগরদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভ্যুত্থানে এক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় আসামি করা হয়েছে মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান সিরাজকে। তিনি বলেন, অসুস্থ হয়ে আমি প্রায় ৬ মাস শয্যাশায়ী ছিলাম। অভ্যুত্থানের সময় আমি একা চলতেই পারিনি। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে তবুও স্কুলে গিয়ে দাপ্তরিক কাজ অব্যাহত রাখি। ৫ আগস্ট আমার কয়েকজন সহকর্মী আমাকে জোর করে নিয়ে যায় আমার এক ছাত্রীর বাড়িতে। সেখানে সকল শিক্ষকের নিমন্ত্রণ ছিল। ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। অথচ শত্রুতা বশত আমার নামও হত্যা মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়ে আমি এখনও স্কুলে যাই। 

রাজেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আসকর মাস্টারকেও আসামি করা হয়েছে অন্য একটি হত্যা মামলায়। সমকালকে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আমার বাড়ি প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। ৫ আগস্ট আমি সারা দিনই বাড়িতে ছিলাম। ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। অথচ আমাকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। কেউ না কেউ ষড়যন্ত্র করে আমাকে আসামির তালিকায় দিয়েছেন। বাদী আমাকে চিনেন না। নামও জানেন না। 

অন্য একটি মামলার আসামি করা হয়েছে স্যরস এডুকেশন সেন্টারের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ের ঘটনার সময় আমি এলাকাতেই ছিলাম না। অথচ আমার নাম আসামির তালিকায়। মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে এখন আমি ঘর ছাড়া।

মানববন্ধন শেষে বক্তারা বলেন, একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। মিথ্যা মামলায় আসামি করে ২৫ জন শিক্ষকের সম্মানহানী করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে মামলাগুলো থেকে শিক্ষকদের নাম প্রত্যাহারের দাবি তুলেন শিক্ষক নেতারা। 

সংগঠনের সভাপতি আবদুল হান্নান স্বজলের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নাজমুলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ।  

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, মামলাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া মামলার বাদী যাদেরকে আসামি করে এজাহার জমা দিয়েছেন তারাই আসামি হিসেবে রয়েছেন। এখানে পুলিশের কিছু করার ছিল না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ য় র কর কর ছ ন আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নেত্রকোনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা অনুষ্ঠানে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে জড়িয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের বড়বাজার এলাকায় ‘সচেতন আলেম ও ছাত্র–জনতা’র ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়।

খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব গাজী মুহাম্মাদ আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান, জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন খান, হেফাজতে ইসলামের সদস্যসচিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মাওলানা আতাউর রহমান, ওলামা দলের নেতা হাফেজ মিসবাহুদ্দিন তালুকদার, খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মুসা শেখ, খেলাফত মজলিসের নেতা মুফতি মো. আব্দুল্লাহ, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেহরুল আলম, খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা জাকির হোসেন, ছাত্রনেতা মাওলানা বীন ইয়ামিন, মাওলানা আবরার ফাহাদ, মাওলানা মোতালিব খান, হাফেজ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

আরও পড়ুনযদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন: নেত্রকোনায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী২৭ জুলাই ২০২৫

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা–৪ (মদন–মোহনগঞ্জ–খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিএনপি সরকারের আমলে সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তিনি দলমত–নির্বিশেষে নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলার বহু বেকার তরুণ–তরুণীদের চাকরি দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। তাঁকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় নেত্রকোনার জনগণ মর্মাহত হয়েছেন। এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে তাঁর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

গত রোববার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে পথসভা করা হয়। অনুষ্ঠানে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বড় একটি ঘটনা হলো, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান। যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, তবে নিয়ে আসছিলেন কেন আপনি? আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় এই অস্ত্রকাহিনির কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়েছে। অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘আমি বাবর ভাইকে (সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) সম্মান করি, তিনি কারা নির্যাতিত নেতা। কিন্তু আপনার ওই কাজ আমি সমর্থন করি না, করি না, করি না। আপনার এই কাজের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি। হাসিনার মতো একজন খুনি ও ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় এসেছিলেন।’ এ নিয়ে ২৭ জুলাই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসুর পথরেখা ও সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
  • জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের
  • রূপগঞ্জে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • ভেনেজুয়েলায় নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিরোধীদের প্রতিরোধের ডাক
  • অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে ববিতে মানববন্ধন
  • সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
  • মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে মিছিল-সমাবেশ
  • নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
  • তদবিরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি, ষড়যন্ত্রকারীরা আমার পেছনে লেগেছে: তথ্য উপদেষ্টা