বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গণপিটুনিতে দুই তরুণের মৃত্যু
Published: 21st, March 2025 GMT
ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে দুই তরুণের। এর মধ্যে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় মারা যান আসিফ মুন্সী (১৯)। নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা ঘাট এলাকায় হাসান আলী মাঝি (২০) নামে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, তিনি নৌযানের ভেতর গণপিটুনির শিকার হন।
শুক্রবার ভোরের এ ঘটনায় তাদের আরও দুই সঙ্গী গুরুতর আহত হন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তবে শঙ্কামুক্ত নন বলে জানান চিকিৎসকরা।
পুলিশের দাবি, নদীবর্তী এলাকায় ছিনতাই বা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে চারজন গণপিটুনির শিকার হন। চকবাজার থানা পুলিশ বলছে, জিঞ্জিরা ঘাটে ছিনতাই করতে গিয়ে তারা ধরা পড়ে পালানোর চেষ্টা চালায়। কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভাষ্য, নৌপথে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পিটুনির শিকার হন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ভোর ৫টার দিকে বুড়িগঙ্গা সাঁতরে দুই তরুণ সোয়ারীঘাটের চম্পাতলী এলাকায় এসে ওঠেন। নদীর অপর পাড়ের লোকজন চিৎকার করে জানাচ্ছিলেন, তারা ছিনতাই করে পালাচ্ছেন। তখন চম্পাতলীর লোকজন তাদের আটকে বেধড়ক পেটায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে প্রথমে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অপরজনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পরিবারের সঙ্গে কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগের ঠোটা এলাকায় থাকতেন আসিফ। তিনি ইসলামপুরের একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায়। বাবা জহির মুন্সি ভ্যানচালক। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় ছিলেন আসিফ।
চকবাজার থানার ওসি শেখ আশরাফুজ্জামান সমকালকে বলেন, জিঞ্জিরা ঘাট এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে চার তরুণ প্রতিরোধের মুখে পড়ে বলে শুনেছি। ভুক্তভোগীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের আটকের চেষ্টা চালায়। সেখানে দু’জন ধরা পড়ে। আর দু’জন নৌকা নিয়ে নদীর এপাড়ে চলে আসছিল। মাঝনদীতে থাকা অবস্থায় ওপাড়ের লোকজনের চিৎকার শুনে সোয়ারীঘাটের লোকজন নৌকা নিয়ে তাদের ধরতে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে দুই তরুণ নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারা সাঁতরে চম্পাতলী ঘাটে উঠলে পিটুনির শিকার হয়।
অবশ্য কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি সোহরাব আল হোসাইন বলেন, আতিক হোসেন নামে এক তরুণ রক্তাক্ত অবস্থায় সাঁতরে জিঞ্জিরাঘাট এলাকায় ওঠেন। তাঁকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, নৌপথে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে কয়েক তরুণ গণপিটুনির শিকার হন।
এদিকে বুড়িগঙ্গার তীর থেকে হাসান আলী মাঝির লাশ উদ্ধার করে বরিশুর নৌ পুলিশ। তিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানার সুলতানি গ্রামের মানিক মাঝির ছেলে। কামরাঙ্গীরচরের মুসলিম নগরে কুরবান হাজির বাড়িতে থাকতেন। পাশের একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন তিনি।
বরিশুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন বলেন, জিঞ্জিরার নামাবাড়ি এলাকার নাদু ব্যাপারীর ঘাট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নদীর পাড়ে পানির নিচে একটি হাত দেখা যাচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমরা গিয়ে লাশটি উদ্ধার করি। সুরতহালের সময় লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণপিটুনিতে তিনি আহত হন বলে শুনেছি। তবে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মিটফোর্ড মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বুড়িগঙ্গায় চাঁদাবাজির সময় লোকজন ধাওয়া দিয়ে একজনকে ধরে ফেলে। তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ অচেতন অবস্থায় পানিতে পড়ে থাকায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিঞ্জিরা ঘাট এলাকার নৌকার মাঝি সোবাহান মিয়ার ভাষ্য, বালুসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী নৌযানে চাঁদা আদায় করছিল একটি চক্র। ঘটনার সময় তারা নৌকা নিয়ে একটি নৌযানে চাঁদা চাইতে যায়। ওই নৌযানের কর্মীরা চাঁদা দিতে না চাইলে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা চাঁদাবাজদের আটকের চেষ্টা চালান। সেখানে তারা একজনকে জাপটে ধরেও ফেলেন। তখন চাঁদাবাজরা নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়ে দু’জন এপাড়ে এবং দু’জন সোয়ারীঘাটের দিকে সাঁতরে চলে যায়। দুই পাড়েই তারা গণপিটুনির শিকার হয়।
চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের বলেন, মূলত জিঞ্জিরা ঘাট এলাকায় ঘটনাটির সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা তদন্তে বের হয়ে আসবে। পুলিশি প্রহরায় আহত দু’জন চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিক বিচারের নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা মব জাস্টিসের ঘটনা বেড়ে গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরকে পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বেধড়ক পেটায় জনতা। সংকটাপন্ন অবস্থায় সে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
(তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন মিটফোর্ড প্রতিবেদক)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণপ ট ন প ট ন র শ ক র হন গণপ ট ন র শ ক র ঘ ট এল ক য় র ল কজন ছ নত ই অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।