ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে দুই তরুণের। এর মধ্যে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় মারা যান আসিফ মুন্সী (১৯)। নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা ঘাট এলাকায় হাসান আলী মাঝি (২০) নামে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, তিনি নৌযানের ভেতর গণপিটুনির শিকার হন। 

শুক্রবার ভোরের এ ঘটনায় তাদের আরও দুই সঙ্গী গুরুতর আহত হন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তবে শঙ্কামুক্ত নন বলে জানান চিকিৎসকরা।

পুলিশের দাবি, নদীবর্তী এলাকায় ছিনতাই বা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে চারজন গণপিটুনির শিকার হন। চকবাজার থানা পুলিশ বলছে, জিঞ্জিরা ঘাটে ছিনতাই করতে গিয়ে তারা ধরা পড়ে পালানোর চেষ্টা চালায়। কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভাষ্য, নৌপথে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পিটুনির শিকার হন।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ভোর ৫টার দিকে বুড়িগঙ্গা সাঁতরে দুই তরুণ সোয়ারীঘাটের চম্পাতলী এলাকায় এসে ওঠেন। নদীর অপর পাড়ের লোকজন চিৎকার করে জানাচ্ছিলেন, তারা ছিনতাই করে পালাচ্ছেন। তখন চম্পাতলীর লোকজন তাদের আটকে বেধড়ক পেটায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে প্রথমে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অপরজনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি।

পরিবারের সঙ্গে কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগের ঠোটা এলাকায় থাকতেন আসিফ। তিনি ইসলামপুরের একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায়। বাবা জহির মুন্সি ভ্যানচালক। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় ছিলেন আসিফ।

চকবাজার থানার ওসি শেখ আশরাফুজ্জামান সমকালকে বলেন, জিঞ্জিরা ঘাট এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে চার তরুণ প্রতিরোধের মুখে পড়ে বলে শুনেছি। ভুক্তভোগীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের আটকের চেষ্টা চালায়। সেখানে দু’জন ধরা পড়ে। আর দু’জন নৌকা নিয়ে নদীর এপাড়ে চলে আসছিল। মাঝনদীতে থাকা অবস্থায় ওপাড়ের লোকজনের চিৎকার শুনে সোয়ারীঘাটের লোকজন নৌকা নিয়ে তাদের ধরতে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে দুই তরুণ নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারা সাঁতরে চম্পাতলী ঘাটে উঠলে পিটুনির শিকার হয়।

অবশ্য কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি সোহরাব আল হোসাইন বলেন, আতিক হোসেন নামে এক তরুণ রক্তাক্ত অবস্থায় সাঁতরে জিঞ্জিরাঘাট এলাকায় ওঠেন। তাঁকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, নৌপথে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে কয়েক তরুণ গণপিটুনির শিকার হন।

এদিকে বুড়িগঙ্গার তীর থেকে হাসান আলী মাঝির লাশ উদ্ধার করে বরিশুর নৌ পুলিশ। তিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানার সুলতানি গ্রামের মানিক মাঝির ছেলে। কামরাঙ্গীরচরের মুসলিম নগরে কুরবান হাজির বাড়িতে থাকতেন। পাশের একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন তিনি।

বরিশুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন বলেন, জিঞ্জিরার নামাবাড়ি এলাকার নাদু ব্যাপারীর ঘাট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নদীর পাড়ে পানির নিচে একটি হাত দেখা যাচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমরা গিয়ে লাশটি উদ্ধার করি। সুরতহালের সময় লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণপিটুনিতে তিনি আহত হন বলে শুনেছি। তবে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মিটফোর্ড মর্গে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বুড়িগঙ্গায় চাঁদাবাজির সময় লোকজন ধাওয়া দিয়ে একজনকে ধরে ফেলে। তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ অচেতন অবস্থায় পানিতে পড়ে থাকায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জিঞ্জিরা ঘাট এলাকার নৌকার মাঝি সোবাহান মিয়ার ভাষ্য, বালুসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী নৌযানে চাঁদা আদায় করছিল একটি চক্র। ঘটনার সময় তারা নৌকা নিয়ে একটি নৌযানে চাঁদা চাইতে যায়। ওই নৌযানের কর্মীরা চাঁদা দিতে না চাইলে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা চাঁদাবাজদের আটকের চেষ্টা চালান। সেখানে তারা একজনকে জাপটে ধরেও ফেলেন। তখন চাঁদাবাজরা নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়ে দু’জন এপাড়ে এবং দু’জন সোয়ারীঘাটের দিকে সাঁতরে চলে যায়। দুই পাড়েই তারা গণপিটুনির শিকার হয়। 

চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের বলেন, মূলত জিঞ্জিরা ঘাট এলাকায় ঘটনাটির সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা তদন্তে বের হয়ে আসবে। পুলিশি প্রহরায় আহত দু’জন চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিক বিচারের নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা মব জাস্টিসের ঘটনা বেড়ে গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরকে পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বেধড়ক পেটায় জনতা। সংকটাপন্ন অবস্থায় সে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

(তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন মিটফোর্ড প্রতিবেদক)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণপ ট ন প ট ন র শ ক র হন গণপ ট ন র শ ক র ঘ ট এল ক য় র ল কজন ছ নত ই অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ