দেশের সরকারি অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতাদের ‘তৃপ্তি’ ও ‘সন্তুষ্টি’কে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি ‘আচরণ সংহিতা’ বা কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, সংস্থার প্রধানদের কর্মস্থলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং সেবা প্রদানের পদ্ধতিগুলোকে আইন ও বিধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমনভাবে ডিজাইন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, যাতে ওই পরিবেশ সেবাগ্রহীতাদের প্রয়োজনের নিরিখে দ্রুততম সময়ে সাড়া দিতে পারে। একই সঙ্গে সেবাগ্রহীতাদের প্রতি এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যেন তারা সেবা প্রাপ্তির পর তৃপ্তি ও সন্তুষ্টি অনুভব করে এবং তা প্রকাশ করার সুযোগ পায়।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত ‘অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহের আচরণ সংহিতা (কোড অব কন্ডাক্ট)’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপনে এসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা বজায় রাখতে হবে, নারীর প্রতি শালীন আচরণ, তৃতীয় লিঙ্গ কিংবা অন্য কোন সম্প্রদায়ের প্রতি কিংবা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি সমান সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে; কারো প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ঘৃণা, অবহেলা, অবজ্ঞা ইত্যাদি প্রদর্শন করা যাবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি সকল অ-আর্থিক সংস্থায় পরিষেবা খাতে সকল ধরনের সেবা প্রদানকারীকে সদাচারী হতে হবে এবং তাদের অবশ্যই সততার সাথে অর্থাৎ সৎ, ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ উপায়ে কাজ করতে হবে এবং শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সংস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে এবং স্বীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে ও সব ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের কর্মে সর্বদা অন্যের প্রতি যথাযথ সম্মান ও বিবেচনা প্রদর্শনপূর্বক জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এতে বলা হয়েছে, এটি পরবর্তীতে ‘আচরণ সংহিতা’ নামে অভিহিত হবে। এ আচরণ সংহিতা অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বোর্ড সদস্যসহ সকল কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এ আচরণ সংহিতা স্ব স্ব সংস্থার জন্য প্রযোজ্য আইন ও বিধির আলোকে প্রণীত কর্মচারী আচরণ বিধিমালা বা অপরাপর বিধানসমূহের অতিরিক্ত বিধান হিসেবে গণ্য হবে।

‘আচরণ সংহিতা’ প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সুসংহতকরণের লক্ষ্যে অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহ বা সংস্থাসমূহের বোর্ড সদস্য বা এর বোর্ড কমিটির সদস্য, সকল কর্মচারী, ব্যবসায়িক অংশীদার এবং সংস্থাসমূহের সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীদের জন্য একটি সাধারণ বিধান প্রয়োজন।  অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহের সকল কর্মচারী কর্তৃক তাদের ওপর ন্যস্ত দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন, নিয়মকানুনের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও আন্তর্জাতিক সুচর্যা অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়; সেবা প্রদানকারী হিসেবে অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহ কর্তৃক সেবা গ্রহণকারী এবং সব ধরনের অংশীদারদের স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণ আবশ্যক। এসব কারণে একটি ‘আচরণ সংহিতা’ থাকা প্রয়োজন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনগণের আস্থা, গ্রাহক বা ব্যবহারকারী বা অংশীজনদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সংস্থাসমূহকে তাদের প্রতিটি কর্মচারী কর্তৃক সর্বোচ্চ সততা এবং আন্তরিকতার সাথে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন ও সর্বোচ্চ পেশাদারী মনোভাব ও দক্ষতা প্রদর্শন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যদিকে অংশীজনেরা সেবা প্রদান বা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পরিপালনের পাশাপাশি এ আচরণ সংহিতা অনুসরণ করবেন।

প্রজ্ঞাপনে নিয়োগকারীর কর্তব্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সংস্থার প্রধানরা নিজ প্রতিষ্ঠানে একটি মনোরম কাজের পরিবেশ বজায় রাখবেন, যেখানে- উপযুক্ত ও সুসংহত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে; সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কর্মক্ষমতাভিত্তিক কাজের বিবরণ থাকবে; কর্মচারীদের পেশাগত ও কর্মজীবনে উন্নতির সুযোগের নিশ্চয়তা থাকবে; কর্মচারীদের বৈচিত্রকে মূল্য দেওয়া হবে এবং সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে শতভাগ অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করা হবে; হেনস্থা, বৈষম্য বা অন্য কোনো অস্বস্থিকর আচরণ মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হবে; সংস্থায় কর্মরত সকলের মধ্যে অংশীজন কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শ গ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হবে; সম্মানজনক আলোচনা এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ সমাধানে উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে সস্তায় শিশুশ্রম ব্যবহার (যেমন- চা, নাশতা আনা) করা যাবে না।

স্বার্থের সংঘাত প্রসঙ্গে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যখন একজন কর্মচারী তার দাপ্তরিক অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিবেচনায় নেয়, তখন স্বার্থের সংঘাতের পরিস্থিতির তৈরি হয়। কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বার্থ থেকে নিজেকে দূরে রাখার বিষয়টি একটি আইনি এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন কারণ, যেমন- বেতন ও সুবিধা নিয়ে অসন্তুষ্টি, অস্বস্তিকর কাজের পরিবেশ, পদোন্নতির সুযোগের অভাব বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবিচার, কর্মক্ষেত্রে অবৈধ প্রভাব বা চাপ, চাকরির নিরাপত্তার অভাব- ইত্যাদি বিষয়ে সংস্থার প্রধান ও বোর্ড সদস্যদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে ।

প্রজ্ঞাপনে অ-আর্থিক সরকারি সংস্থার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- এর অর্থ দেশের কোনো আইন দ্বারা সৃষ্ট বা পরিচালিত অথবা সরকার কর্তৃক কোনো আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোনো স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা অথবা কমিশন বা কাউন্সিল বা বোর্ড অথবা পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশন বা স্বশাসিত কোনো সংস্থা অথবা কোনো সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) অথবা অনুরূপ কোনো সরকারি অ-আর্থিক সংস্থা।

ঢাকা/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ আর থ ক সরক র আচরণ স হ ত অ আর থ ক স দ র জন য কর ত ক পর ব শ সদস য সকল ক

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • প্রকৌশল পেশাজীবীদের দাবি পূরণে উপাচার্য-অধ্যক্ষদের সঙ্গে আগামীকাল বৈঠক
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
  • এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের