সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ প্রণয়ন
Published: 22nd, March 2025 GMT
দেশের সরকারি অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতাদের ‘তৃপ্তি’ ও ‘সন্তুষ্টি’কে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি ‘আচরণ সংহিতা’ বা কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সংস্থার প্রধানদের কর্মস্থলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং সেবা প্রদানের পদ্ধতিগুলোকে আইন ও বিধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমনভাবে ডিজাইন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, যাতে ওই পরিবেশ সেবাগ্রহীতাদের প্রয়োজনের নিরিখে দ্রুততম সময়ে সাড়া দিতে পারে। একই সঙ্গে সেবাগ্রহীতাদের প্রতি এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যেন তারা সেবা প্রাপ্তির পর তৃপ্তি ও সন্তুষ্টি অনুভব করে এবং তা প্রকাশ করার সুযোগ পায়।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত ‘অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহের আচরণ সংহিতা (কোড অব কন্ডাক্ট)’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপনে এসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা বজায় রাখতে হবে, নারীর প্রতি শালীন আচরণ, তৃতীয় লিঙ্গ কিংবা অন্য কোন সম্প্রদায়ের প্রতি কিংবা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি সমান সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে; কারো প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ঘৃণা, অবহেলা, অবজ্ঞা ইত্যাদি প্রদর্শন করা যাবে না।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি সকল অ-আর্থিক সংস্থায় পরিষেবা খাতে সকল ধরনের সেবা প্রদানকারীকে সদাচারী হতে হবে এবং তাদের অবশ্যই সততার সাথে অর্থাৎ সৎ, ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ উপায়ে কাজ করতে হবে এবং শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সংস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে এবং স্বীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে ও সব ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের কর্মে সর্বদা অন্যের প্রতি যথাযথ সম্মান ও বিবেচনা প্রদর্শনপূর্বক জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, এটি পরবর্তীতে ‘আচরণ সংহিতা’ নামে অভিহিত হবে। এ আচরণ সংহিতা অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বোর্ড সদস্যসহ সকল কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এ আচরণ সংহিতা স্ব স্ব সংস্থার জন্য প্রযোজ্য আইন ও বিধির আলোকে প্রণীত কর্মচারী আচরণ বিধিমালা বা অপরাপর বিধানসমূহের অতিরিক্ত বিধান হিসেবে গণ্য হবে।
‘আচরণ সংহিতা’ প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সুসংহতকরণের লক্ষ্যে অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহ বা সংস্থাসমূহের বোর্ড সদস্য বা এর বোর্ড কমিটির সদস্য, সকল কর্মচারী, ব্যবসায়িক অংশীদার এবং সংস্থাসমূহের সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীদের জন্য একটি সাধারণ বিধান প্রয়োজন। অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহের সকল কর্মচারী কর্তৃক তাদের ওপর ন্যস্ত দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন, নিয়মকানুনের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও আন্তর্জাতিক সুচর্যা অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়; সেবা প্রদানকারী হিসেবে অ-আর্থিক সরকারি সংস্থাসমূহ কর্তৃক সেবা গ্রহণকারী এবং সব ধরনের অংশীদারদের স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণ আবশ্যক। এসব কারণে একটি ‘আচরণ সংহিতা’ থাকা প্রয়োজন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনগণের আস্থা, গ্রাহক বা ব্যবহারকারী বা অংশীজনদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সংস্থাসমূহকে তাদের প্রতিটি কর্মচারী কর্তৃক সর্বোচ্চ সততা এবং আন্তরিকতার সাথে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন ও সর্বোচ্চ পেশাদারী মনোভাব ও দক্ষতা প্রদর্শন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে অংশীজনেরা সেবা প্রদান বা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পরিপালনের পাশাপাশি এ আচরণ সংহিতা অনুসরণ করবেন।
প্রজ্ঞাপনে নিয়োগকারীর কর্তব্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সংস্থার প্রধানরা নিজ প্রতিষ্ঠানে একটি মনোরম কাজের পরিবেশ বজায় রাখবেন, যেখানে- উপযুক্ত ও সুসংহত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে; সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কর্মক্ষমতাভিত্তিক কাজের বিবরণ থাকবে; কর্মচারীদের পেশাগত ও কর্মজীবনে উন্নতির সুযোগের নিশ্চয়তা থাকবে; কর্মচারীদের বৈচিত্রকে মূল্য দেওয়া হবে এবং সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে শতভাগ অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করা হবে; হেনস্থা, বৈষম্য বা অন্য কোনো অস্বস্থিকর আচরণ মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হবে; সংস্থায় কর্মরত সকলের মধ্যে অংশীজন কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শ গ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হবে; সম্মানজনক আলোচনা এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ সমাধানে উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে সস্তায় শিশুশ্রম ব্যবহার (যেমন- চা, নাশতা আনা) করা যাবে না।
স্বার্থের সংঘাত প্রসঙ্গে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যখন একজন কর্মচারী তার দাপ্তরিক অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিবেচনায় নেয়, তখন স্বার্থের সংঘাতের পরিস্থিতির তৈরি হয়। কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বার্থ থেকে নিজেকে দূরে রাখার বিষয়টি একটি আইনি এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন কারণ, যেমন- বেতন ও সুবিধা নিয়ে অসন্তুষ্টি, অস্বস্তিকর কাজের পরিবেশ, পদোন্নতির সুযোগের অভাব বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবিচার, কর্মক্ষেত্রে অবৈধ প্রভাব বা চাপ, চাকরির নিরাপত্তার অভাব- ইত্যাদি বিষয়ে সংস্থার প্রধান ও বোর্ড সদস্যদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে ।
প্রজ্ঞাপনে অ-আর্থিক সরকারি সংস্থার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- এর অর্থ দেশের কোনো আইন দ্বারা সৃষ্ট বা পরিচালিত অথবা সরকার কর্তৃক কোনো আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোনো স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা অথবা কমিশন বা কাউন্সিল বা বোর্ড অথবা পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশন বা স্বশাসিত কোনো সংস্থা অথবা কোনো সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) অথবা অনুরূপ কোনো সরকারি অ-আর্থিক সংস্থা।
ঢাকা/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ আর থ ক সরক র আচরণ স হ ত অ আর থ ক স দ র জন য কর ত ক পর ব শ সদস য সকল ক
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে
সন্তান যে কতটা প্রিয় তা ভাবে ও ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা অধিকাংশ মানুষেরই থাকে না। সন্তান সব মা-বাবার জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ। জন্মসূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, গভীর, ভালোবাসা, স্নেহ, স্বার্থহীন, নির্ভেজাল এ সম্পর্ক তৈরি হয়।
ছোট্ট শিশু থেকে বেড়ে ওঠার সময়টায় মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক আনন্দের, মজার, কষ্টের, দুঃখের, হাসির– মোট কথা ঘটনাবহুল ও স্মৃতিময়। মা-বাবা সন্তানের জন্য বহুমুখী সম্পর্ক পালন করেন। কখনও বন্ধু, শিক্ষক, সাহায্যকারী, সহমর্মী, অভিভাবক, ভ্রমণসঙ্গী হয়ে। এ যাত্রা মোটেও সহজ নয়। সামান্য কারণে সন্তানের সঙ্গে তৈরি হতে পারে দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি।
সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য মা-বাবার কী করা উচিত– জানতে চেয়েছিলাম সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মনোচিকিৎসক বাপ্পা আজিজুলের কাছে। তিনি জানান, ‘প্যারেন্টিং বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কোর্স বা ডিগ্রি নেই। প্যারেন্টিং শিশুর বয়স অনুসারে পরিবর্তিত হয়। মোটামুটি ৩টি বয়সে ভাগ করে মা-বাবার শিশুর সঙ্গে আচরণ ও ব্যবহারে ভিন্নতা আনা যেতে পারে।’
১. বাচ্চার বয়স ০-১২ বছর পর্যন্ত চাইল্ড প্যারেন্টিং।
২. ১৩-১৯ বছর বয়সীদের জন্য টিন প্যারেন্টিং।
৩. ২০ বছর থেকে শুরু করে ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত অ্যাডাল্ট প্যারেন্টিং।
একেক বয়সী সন্তানের জন্য পিতামাতার ভূমিকা একেক রকম হয়। সন্তানকে আদর, সোহাগ, কোলে-পিঠে নেওয়া, চুমু, স্নেহ, চক্ষুশীতল করে গড়ার মূল বয়স ১০ বছর বয়স পর্যন্ত। তাই বলে আপনার যে বাচ্চার বয়স ১০ পেরিয়ে গেছে তার জন্য হতাশ হবেন না, তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়াবেন না। এখনই পজিটিভ প্যারেন্টিং শুরু করুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। সন্তান আপনাকে বন্ধু ভাববে। দূরত্ব যাবে ঘুচে। সাধারণত প্যারেন্টিং চার ধরনের–
ডিকটোরিয়াল বা একনায়কতন্ত্র: এমন ধরনের পিতামাতার ইচ্ছা পালন করতে হবে। সন্তান নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
অথরিটিটিভ বা কর্তৃত্বশীল: এমন ধরনের মা-বাবা সন্তানের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হন। যেমন– তুমি যদি আমাদের কথা শোন তবে আমরা তোমাকে এ সুযোগ-সুবিধা দেব।
পারমিসিভ বা অনুমতিসূচক: এমন ক্ষেত্রে মা-বাবা সন্তানকে অবাধ স্বাধীনতা বা ছাড় দেন; যা ইচ্ছা করলেও খারাপ কিছু যাতে না করে সেই পরামর্শ দেওয়া থাকে।
ডেমোক্রেটিক বা গণতান্ত্রিক: এ পদ্ধতিতে পিতামাতা সন্তানের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এখন সারাবিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে।
কিশোর-কিশোরীদের ওপর অতিরিক্ত ও অযাচিত শাসন চাপিয়ে দেবেন না। এ বয়স বুঝিয়ে বলার। যেসব মা-বাবা বাচ্চাদের লেখাপড়ার ফলাফল আশানুরূপ না হলে বকা দেন বা পড়াশোনাকেই সাফল্যের একমাত্র উপায় মনে করেন তাদের বলছি–
১. সন্তানকে অভয় দিন। আশ্বস্ত করুন; যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন কানের কাছে বারবার একই কথা বলতে থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনার শীতল গলা, অকৃত্রিম ভালোবাসা, মানসিক সাপোর্ট তার আত্মপর্যালোচনার জন্য যথেষ্ট হবে।
২. সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। সময় দেওয়া মানে সন্তানের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা নয়। সন্তানের বন্ধু হোন। ওর চোখে আদর্শ মা-বাবা হোন। মানসম্মত সময় দিন। সন্তানের সঙ্গে খেলুন। সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত থাকুন। ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গল্প করুন।
৩. সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। ওদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাহলে মা-বাবার সঙ্গে গ্যাপ (জেনারেশন গ্যাপ) কমে আসবে। কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে সেটিও জানা যাবে। আপনার সন্তানের মনে সাহস ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। মন হালকা হবে। ইমোশন ভেন্টিলেশন হবে।
৪. সন্তানের লক্ষ্য নির্ধারণে সহযোগী হোন। নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের কাঁধে জোর করে চাপিয়ে দেবেন না। রেজাল্ট, সুযোগ, সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনায় আনুন। সন্তানকে সুপরামর্শ দিন। তবে দিনশেষে নিজের জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাকে নিতে দিন।
৫. সন্তানের কাছে প্রত্যাশা কম করুন। ওদের আচরণে, ব্যবহারে বা লেখাপড়ার ফলাফলে হতাশ হবেন না। প্রত্যাশা কেবল চাপ তৈরি করে। এক সন্তানের সঙ্গে অন্যজনের বা অন্যদের সঙ্গে অযথা তুলনায় যাবেন না। v