কুমিল্লা মেডিকেলে রোগীর মৃত্যু সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলায় আহত ৪ সাংবাদিক, পরিচালকের অপসারণ দাবি
Published: 22nd, March 2025 GMT
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নারীর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন চার সাংবাদিক। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতালটির নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন যমুনা টেলিভিশনের কুমিল্লা ব্যুরোপ্রধান রফিকুল ইসলাম ও ক্যামেরা পারসন জিহাদুল ইসলাম এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কুমিল্লায় কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুর রহমান ও ক্যামেরা পারসন বেলায়েত হোসেন। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালটির পরিচালক মাসুদ পারভেজের ইন্ধনে তাঁদের স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া তাঁদের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য গতকাল রাত একটার দিকে কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা ওই রোগীর নাম পারুল বেগম (৫১)। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ধর্মপুর এলাকার বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের নারী ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। তাঁর স্বজনদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে অন্য এক রোগীর ইনজেকশন পারুলের শরীরে দেওয়া হয়। এ কারণে গতকাল সন্ধ্যার পর তাঁর মৃত্যু হয়। এ খবরে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে রাতে ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যেরা।
আহত অবস্থায় রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ওই নারীর মৃত্যুর খবরে কয়েকজন সাংবাদিক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় ভবনের চতুর্থ তলায় উঠলেই বাধা দিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে শতাধিক ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কেউ চিকিৎসকদের পোশাক পরা ছিলেন না। এ সময় আমাদের পেটাতে পেটাতে ভবনের নিচে নিয়ে যায় তারা।’ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘পুরো ঘটনার নেপথ্যে হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ পারভেজ। আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’
এসব বিষয়ে জানতে হাসপাতালটির পরিচালক মাসুদ পারভেজ মুঠোফোনে গতকাল রাত ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এ ছাড়া হাসপাতালে সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। এ সময় তাঁরা হাসপাতালটির পরিচালক মাসুদ পারভেজের অপসারণ ও বিচার দাবি করেন।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিনুল ইসলাম বলেন, রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল পক্ষের সংঘর্ষ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির
স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক।
নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন।
নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?
সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।
ঢাকা/ইমরান/রফিক