কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নারীর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন চার সাংবাদিক। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতালটির নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন যমুনা টেলিভিশনের কুমিল্লা ব্যুরোপ্রধান রফিকুল ইসলাম ও ক্যামেরা পারসন জিহাদুল ইসলাম এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কুমিল্লায় কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুর রহমান ও ক্যামেরা পারসন বেলায়েত হোসেন। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালটির পরিচালক মাসুদ পারভেজের ইন্ধনে তাঁদের স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া তাঁদের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য গতকাল রাত একটার দিকে কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা ওই রোগীর নাম পারুল বেগম (৫১)। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ধর্মপুর এলাকার বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের নারী ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। তাঁর স্বজনদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে অন্য এক রোগীর ইনজেকশন পারুলের শরীরে দেওয়া হয়। এ কারণে গতকাল সন্ধ্যার পর তাঁর মৃত্যু হয়। এ খবরে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে রাতে ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যেরা।

আহত অবস্থায় রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ওই নারীর মৃত্যুর খবরে কয়েকজন সাংবাদিক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় ভবনের চতুর্থ তলায় উঠলেই বাধা দিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে শতাধিক ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কেউ চিকিৎসকদের পোশাক পরা ছিলেন না। এ সময় আমাদের পেটাতে পেটাতে ভবনের নিচে নিয়ে যায় তারা।’ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘পুরো ঘটনার নেপথ্যে হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ পারভেজ। আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’

এসব বিষয়ে জানতে হাসপাতালটির পরিচালক মাসুদ পারভেজ মুঠোফোনে গতকাল রাত ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এ ছাড়া হাসপাতালে সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। এ সময় তাঁরা হাসপাতালটির পরিচালক মাসুদ পারভেজের অপসারণ ও বিচার দাবি করেন।

কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিনুল ইসলাম বলেন, রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল পক্ষের সংঘর্ষ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা

অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।

সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা