ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে গেল সাড়ে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহর মেলা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।

প্রতি বছর ২৬ মার্চ আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগির শাহর তিরোধান দিবসে উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামে এ মেলা হয়ে থাকে। এর আগের দিন থেকে শুরু হয়ে সপ্তাহব্যাপী চলে এই মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ সাজ-বাতাসা, কদমা, বালিশ রসগোল্লা, বাঁশের তৈরি জালি, ডালা, তালপাতার হাত পাখা, বেতের তৈরি ধামাসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। এখানে কসমেটিক, খেলনা ও বিভিন্ন আসবাবপত্রের কয়েক হাজার দোকান বসে। থাকে নাগরদোলা, যাদু প্রদর্শনী, মোটরসাইকেল খেলা, পুতুল নাচ। মেলায় কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। মেলা উপলক্ষে এলাকার ১০-১২ গ্রামে শুরু হয় আনন্দ উৎসব।

স্থানীয়দের দাবি, কয়েকশ’ বছরের মধ্যে কোন কারণেই মেলাটি বন্ধ হয়নি। এমনকি ১৯৭১ সাল এবং করোনা মহামারিতেও স্বল্প পরিসরে মেলাটি চালু ছিল। দীর্ঘ দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউল আজম বাবু মিয়া কমিটির সভাপতি হয়ে মেলা পরিচালনা করেছেন। পট পরিবর্তনের কারণে তারা দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ১৫ মার্চ স্থানীয় বিএনপির দু’টি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষ থানায় দু’টি মামলা করে। দুই পক্ষ মেলা পরিচালনার জন্য দুটি কমিটি জমা দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন মেলার অনুমতি না দিয়ে বন্ধ করে দেয়। মেলার এক সপ্তাহ আগেই বিভিন্ন পণ্যের দোকান নিয়ে দোকানিরা চলে আসেন মেলা চত্বরে। এ বছর অনেকে দোকানপাট নিয়ে এসেও ফিরে গেছেন। 

এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দেওয়ান শাগির শাহ’র ৩৫১তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে গ্রামীণ মেলাটি আগামী ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত অনুমোদনের জন্য রূপাপাত ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আক্কাচ মন্টু ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিচুর রহমান টিটু ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৫ মার্চ আবেদন করেন। অপরদিকে ১৬ মার্চ সাতদিনের অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন কাটাগড় দেওয়ান শাগির শা’র মাজারের খাদেম ইরাদত ফকির।
 
এক পক্ষের মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাদ মোল্যা বলেন, সাড়ে তিনশ’ বছর ধরে এ মেলা হচ্ছে। এ বছর স্থানীয়দের মধ্যে কোন্দলের কারণে দুই পক্ষ মেলার কমিটি বানিয়ে অনুমতির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। মেলা কমিটি নিয়ে দুই পক্ষে মারামারি হয়। মারামারির ঘটনায় মামলাও হয়। অনেকেই জেলে আছে। অনেকে  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রশাসন জানিয়েছিল, যদি দুই পক্ষ মিলেমিশে মেলা করতে পারেন তাহলে অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু দুই পক্ষ এক হওয়ার কোন সুযোগ নেই, তাই এ বছর মেলা বন্ধ থাকবে।
 
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহামুদুল হাসান বলেন, মেলা নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। দুই পক্ষের মামলা আছে। অনেকে আহত আছে। মেলার আগেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মেলার সময় বা পরে আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এই আশঙ্কায় মেলার অনুমোদন না দেওয়ার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
 
বোয়ালমারীর ইউএনও তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় দুটি পক্ষের হানাহানির কারণে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় পক্ষগুলোই চায় না মেলা হোক। তাই তারা কি করতে পারেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র র অন ম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এখনো শ্রমিকদের লড়াই করতে হচ্ছে, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি

ন্যায্য মজুরি ও অধিকার আদায়ের জন্য এখনো শ্রমিকদের লড়াই করতে হচ্ছে। বিভিন্ন সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে নিপীড়িত শ্রমিকদের এই লড়াই ও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিলে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রামের সভাপতি ও সরকার গঠিত শ্রম কমিশনের সদস্য শ্রমিকনেতা তপন দত্ত এসব কথা বলেন। টিইউসি নগরের কাজীর দেউড়ি মোড়ে এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে তপন দত্ত সভাপতিত্ব করেন।

সমাবেশে নির্মাণ, হোটেল, বেসরকারি হাসপাতাল, চা, পোশাক, রিকশা, পরিবহন, জাহাজভাঙা, পাটকলশ্রমিকসহ বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।

তপন দত্ত বলেন, ‘১৮৮৬ সালে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলনের শুরু হয়েছিল, তা এখনো চলছে। শ্রমিকদের আট ঘণ্টার কর্মঘণ্টা ও ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা যায়নি। কর্মক্ষেত্রে তাঁরা এখনো নিপীড়নের শিকার। কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকের ঘামে গড়ে উঠেছে এই দেশ এই উন্নতি। তাই শ্রমিক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। জনগণ বাঁচবে।’

তপন দত্ত বলেন, ‘সরকার একটা শ্রম সংস্কার কমিশন করেছে। এই কমিশন স্থায়ী জাতীয় মজুরি কমিশন গঠন, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, রেশনিং প্রথা চালুসহ নানা সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতা ইফতেখার কামাল খান, ফজলুল কবির, বেসরকারি হাসপাতাল কর্মচারী ও শ্রমিকনেতা আবদুর রহিম, হোটেল রেস্তোরাঁ শ্রমিক নেতা মো. হানিফ, মাহিন উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

পরে একটি লাল পতাকা মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কাজীর দেউড়ি থেকে মেহেদীবাগ হয়ে প্রবর্তক মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে গণসংগীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ।

মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নগরের নিউমার্কেট এলাকায় পৃথক সমাবেশ করেছে। এতে প্রধান বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী। এরপর লাল পতাকা মিছিল বের করা হয়।

বাংলাদেশ শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী দিবসটি উপলক্ষে পৃথক সমাবেশ ও মিছিল করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সিদ্ধিরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের র‌্যালি
  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু 
  • ক্ষমতায় গেলে নারীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে: জামায়াত আমির
  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল
  • এখনো শ্রমিকদের লড়াই করতে হচ্ছে, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি
  • করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 
  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা