Samakal:
2025-09-18@03:00:26 GMT

একদিন ডলু ছিল নৌবাণিজ্যের রুট

Published: 22nd, March 2025 GMT

একদিন ডলু ছিল নৌবাণিজ্যের রুট

একসময় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও ডলু ছিল প্রধান নৌরুট। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে ডলুই ছিল সাতকানিয়া, লোহাগাড়াবাসীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সাতকানিয়ার মানুষ ডলু নদী দিয়ে প্রতিদিন নৌকাযোগে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করতেন, পণ্য পরিবহনও করতেন। এ নদীটি আন্তর্জাতিক নৌরুটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে পাকিস্তানের করাচি ও ভারতের কলকাতা থেকে সেলাই করা ও থান কাপড় নৌকাযোগে সাতকানিয়ায় আসত ডলু নদী হয়ে।
সাতকানিয়ার সেই আন্তর্জাতিক নৌরুট ডলু নদী এখন জৌলুস হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নাব্য হারিয়ে যাওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন নদীতে জমেছে পলিমাটির স্তূপ। সেখানে চলছে ধান ও সবজি চাষ। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় ঝুঁকিতে থাকে পৌর শহর রক্ষাবাঁধ। পাহাড়ি ঢলের পানি উপচে পড়ে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়, নষ্ট হয় ক্ষেতের ফসল। 
পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে প্রবাহিত হয়ে ডলু নদী চট্টগ্রামের লোহাগাড়া হয়ে সাতকানিয়া উপজেলায় প্রবেশ করে সাঙ্গু নদীতে পড়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ৪৬ মিটার। নদীর প্রকৃতি সর্পাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের ৬ নম্বর নদী।
সাতকানিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী রহমত আলীপাড়ার বাসিন্দা ৯০ বছর বয়সী আব্দুল মতলব বলেন, ‘ডলু নদী আন্তর্জাতিক নৌরুটের অন্তর্ভুক্ত থাকায় ব্রিটিশ আমল থেকে নদীতে বাঁধ ও বেড়া দেওয়া যাবে না–এমন একটি সরকারি নিয়ম প্রচলিত ছিল। সে সময় পাকিস্তানের করাচি ও ভারতের কলকাতা থেকে ডলু নদী হয়ে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকাযোগে তৈরি পোশাক ও থান কাপড় সাতকানিয়ায় আনা হতো। পরে কাপড়গুলো বর্তমান লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের এম চরহাট (ফকিরহাট) এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো। পুটিবিলায় ছিল পোশাক তৈরির শিল্প। সেখানে এখনও জোলাপাড়া নামে একটি পাড়া আছে।’ 
তিনি আরও বলেন, ‘ডলু নদী খনন করে অতীত ব্যবসার গৌরব ফিরিয়ে আনা যায়। পাশাপাশি মানুষ নিরাপদে ও কম খরচে যাতায়াত করতে পারবেন। বন্যার প্রকোপও কমে যাবে।’
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোয়ালিয়াপাড়ার ৮০ বছর বয়সী আব্দুল হাকিম জানান, চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই থেকে গদি নৌকাযোগে মনিহারি পণ্য ও মুদি দোকানের মালপত্র সাতকানিয়া থানা ঘাট এলাকায় আসত। পরে সড়কপথে তা চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ও টেকনাফের হ্নীলায় নিয়ে যাওয়া হতো। স্বাধীনতার আগে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুনার বাপের দোকান এলাকায় গদি নৌকাযোগে বড় জট বাঁধানো সুতার লট নিয়ে আসা হতো। এসব সুতা পৌরসভার ঘাটিয়াপাড়া এলাকায় জট খুলে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাপড় তৈরির জন্য নিয়ে যাওয়া হতো।
পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের রামপুর বনিকপাড়ার বাসিন্দা জীবন চন্দ্র ধর বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে মিয়ানমার ও ভারত থেকে মালভর্তি জাহাজ ডলু নদী হয়ে পৌরসভার বাদশা মিয়া ও কালু মিয়ার ঘাটে ভিড়ত। বণিকরা সেখান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করতেন। আমাদের বনিক পাড়ার লোকজন বিভিন্ন ব্যবসা করতেন। এ ঘাট দুটিতে আমরাও মালামাল আনতাম। পরে সড়কপথ উন্নত হওয়ায় নৌপথে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ডলু নদীর দক্ষিণে সাতকানিয়া সদর ও সোনাকানিয়া ইউনিয়নের গারাংগিয়া সেতুর উত্তর পাশে হায়দারের টেক, দানুর মার ঘাট থেকে তিন খালের মুখ, পৌরসভা এলাকার নৌকা ঘাট, রামপুর বায়তুশ শরফের উত্তর পাশে ফয়েজ্জার ঘাটা এবং আমিলাইষ ইউনিয়নের হাঙ্গর মুখ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য ছোট-বড় মাটির স্তুপ রয়েছে।এখানে নদীর বুকে স্থানীয়রা সবজি চাষ করেছেন। আবার অনেকেই সবজির জন্য তৈরি করা মাচাংয়ে কাপড় শুকাচ্ছেন। ছমদরপাড়া ও হাঙ্গর মুখ এলাকায় মাটির স্তুপের পাশে আট থেকে ১০ হাত প্রস্থের সরু খাল দিয়ে চলাচল করছে পানি। ভোয়ালিয়াপাড়া এলাকায় দেখা গেছে, পৌর শহর রক্ষা বাঁধটি গত বর্ষায় বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে গিয়ে অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বর্জ্য, পৌরসভার কাঁচা বাজারের পচে যাওয়া মাছ ও সবজির ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় নদীতে। ফলে নদীতে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহ অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। 
মাছ বিক্রেতা জেলেপাড়ার বাসিন্দা বিনেন্দ্র জলদাস, সোনারাম জলদাস ও আমিলাইশ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্বপন জলদাস জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে ডলু নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ ধরে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা। তবে ডলু এখন আর নদী নেই। ডলু নদীতে পানি না থাকায় মাছও পাওয়া যায় না।’ নৌকার মাঝি পশ্চিম ঢেমশার আবদুল মন্নান মাঝি, রামপুর ওয়ার্ডের রবিশ্বর জলদাস ও সাধন জলদাস বলেন, ‘একসময় ডলু নদীতে পানি থাকায় সারা বছর নৌকা চালিয়ে সংসার চালাতে পারতাম। এখন তারা অন্য কোন পেশায়ও যেতে পারছে না। যারা শারীরিকভাবে কিছুটা সবল তারা অন্য পেশায় চলে গেছেন।’
নদী তীরবর্তী পৌরসভার রামপুর ঘাটিয়াপাড়ার আবদুল শুক্কুর, সামিয়ার পাড়ার আবদুল হাকিম ও ভোয়ালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আবদুল গণি জানান, ‘নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় প্রতিবছর বর্ষায় বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করে। পানির স্রোত বেশি থাকলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ঘর-বাড়ি। তাই বন্যার সময় দুই পাড়ের মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকে, কখন  ঘরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।’ সাতকানিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নওয়াব মিয়া ও নেচার আহমদ চৌধুরী জানান, নদী ভাঙন থেকে পৌরবাসীকে বাঁচাতে নদী খননে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করেছেন। তবে কোন কাজ হয়নি।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো.

মহিউদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় ডলু নদীর পানিতে প্রতিবছর পৌরসভা ও উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার বসতঘর প্লাবিত হয়, নষ্ট হয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল। ভেসে যায় কোটি কোটি টাকার মাছ।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পটিয়া) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আনিস হায়দার খান বলেন, ‘ডলু নদী ড্রেজিংয়ের বিষয়ে বৃহৎ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এর অংশ হিসেবে এবারের ডিসি সম্মেলনে ডলু নদী খননের প্রস্তাব হিসেবে পাঠানো হয়েছে।’
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরসভার প্রশাসক মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘ডলু নদীর খননের বিষয়ে জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। এবারের ডিসি সম্মেলনেও জেলা প্রশাসক ডলু নদী খননের বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী অবগত রয়েছেন। আশা করি প্রকল্পটি পাস হলে ডলু নদীর পানি প্রবাহ আগের মত ফিরে আসবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ প রসভ র এল ক য় বন য র করত ন আবদ ল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার

যশোরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার আইনজীবীকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর। 

অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি, রফিকুল ইসলাম এবং তরফদার আব্দুল মুকিত।

জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ওই চার আইনজীবীর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক এক এনজিওর ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা ফেরত দিতে তিনি অঙ্গীকার করে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই চেক ডিজ অনার হয় এবং একই সাথে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মক্কেল আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।

অন্যদিকে, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ওই জমির মালিককে পূর্ণাঙ্গ টাকা না দিয়ে তালবাহানা করেন। শেষমেষ আট লাখ টাকা না দেওয়ায় জমির মালিক আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।

এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নিজে আইনজীবী হয়েও আরেক আইনজীবী নুরুল ইসলামকে নির্বাহী আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম অভিযোগ দেন। অন্যদিকে, তরফদার আব্দুল মুকিত এক মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেননি। এছাড়া তিনি ওই মক্কেলের কাগজপত্র আটকে রেখে জিম্মি করে রাখেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সমিতিতে। 

এসব অভিযোগ জেলা আইনজীবী সমিতি পৃথকভাবে তদন্ত করে। একই সাথে চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর। 

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবগত করা হবে।”

ঢাকা/রিটন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ