রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন চাচ্ছে। দেশের মানুষ বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। কারণ দেশে অঘোষিত একদলীয় ও কর্তৃত্ববাদী শাসন ছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট সেই শাসনের অবসান হয়েছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশের দিকে অগ্রসর হবে। সেটি হতে হলে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দলকেও গণতান্ত্রিক হতে হবে। 

এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, দলের ভেতরে নেতা নয়, সদস্যরা সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে থাকবেন। যখন সদস্যরা দলের নীতি, কর্মসূচি ও পরিকল্পনায় মতামত দিতে পারবেন, অংশগ্রহণ করতে পারবেন, তখন তারা দলের সঙ্গে নিজেদের বেশি সম্পৃক্ত ভাবতে পারবেন। এমনকি তখন নিজেরা দলকে চাঁদা দিতে উৎসাহিত হবেন এবং এলাকার জনগণের কাছ থেকে দলের জন্য চাঁদা ওঠাতেও সক্ষম হবেন। কিন্তু সেটি চাঁদাবাজি হবে না, যা এখন বিরাজমান।

অন্তর্বর্তী সরকার যখন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে তখন রাজনৈতিক দলেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা ভোটারদের সামনে তুলে ধরুক, কীভাবে নিজ দলে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করছে। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি পরিপূর্ণভাবে লক্ষ্য করা যায় না। 
যেমন– সম্প্রতি গঠিত এনসিপি কীভাবে তাদের জমকালো আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান করল কিংবা কোথা থেকে ফাইভ স্টার হোটেলে ইফতার পার্টির টাকা আসছে, সেগুলো নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে পারছে না। শোনা যায়, ইফতার পার্টিতে আসনের বিনিময়ে অনুদান সংগ্রহ করা হয়েছে। এমনটা হয়ে থাকলে তা প্রকাশ করতে আপত্তি কোথায়? কারণ ‘ফান্ড রেইজিং ডিনার’ আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত।
সবাই মানবেন, রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড ‘হাওয়ার ওপর’ চলবে না; অর্থ দরকার রয়েছে। সেই অর্থ অন্যের কাছ থেকেই জোগাড় হয়ে থাকে। তাহলে অর্থ কীভাবে জোগাড় হলো, সেটি বলতে আপত্তি কোথায়? পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো বাসস্ট্যান্ড, টেম্পোস্ট্যান্ড, হাটবাজার থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করে। এটি সমর্থনযোগ্য নয়, আবার রাজনৈতিক দলগুলোর টাকাও লাগবে। তাহলে এর সমাধান কী?

একটা সহজ সমাধান হলো, দলের সদস্যদের চাঁদা ও সমর্থকদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ। বাংলাদেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ৪০ শতাংশ ভোট আছে। তার মানে ৪ কোটি ভোটার। তারা দলের সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত হলে এবং নিবন্ধন ফি ১ হাজার টাকা হলে দলের প্রাথমিক তহবিল হতে পারে ৪ হাজার কোটি টাকা। এরপর যদি সদস্যরা মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা দেয় তাহলে প্রতি মাসে ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা সংগ্রহ হবে। এরপর অনুদান তো রয়েছেই। পার্টি ফান্ডে সংগৃহীত টাকা ফিক্সড ডিপোজিট বা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। 

রাজনৈতিক দলগুলো যখন আর্থিকভাবে স্বাধীন হবে তখন তাদের সক্ষমতা বাড়বে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়বে। জনগণের মতামত প্রকাশেরও সুযোগ তৈরি হবে। তারা পুরো বছর বিভিন্নভাবে তাদের মতামত দেবে। এর মধ্য দিয়ে দলের সাধারণ সদস্য থেকে সব পর্যায়ের সদস্য নেতাকর্মী এবং জনগণ রাজনৈতিক দলটিকে নিজেদের বলে ভাবতে শুরু করবে।
প্রশ্ন হলো, চাঁদা আদায়ের স্বচ্ছতা কীভাবে প্রতিষ্ঠা হবে? এ জন্য ঘন ঘন দলের সভা-সমাবেশ করা যেতে পারে। গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সমাবেশগুলোতে যারা দলকে নিয়মিত চাঁদা দেয়, তারা উপস্থিত হবে এবং তাদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীর যোগাযোগ তৈরি হবে। এর মধ্য দিয়ে দলের সদস্য ও কর্মী এবং নেতারা জনগণের মনোভাব বুঝতে পারবে।

এখন বাংলাদেশ একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনার প্রারম্ভিক পৃষ্ঠাতে রয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের যতটা সম্ভব জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজনীতি গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভেতরে বোধ তৈরি হতে হবে যে এতদিন যা হয়েছে, তা ঠিক ছিল না বলেই শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। তাঁকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হাজার হাজার মানুষের রক্ত ঝরেছে।
রাজনৈতিক দলগুলো ঘিরে যে অস্বচ্ছতা দীর্ঘকাল ধরে গড়ে উঠেছে, সেটি ভেঙে ফেলার এখনই উপযুক্ত সময়। এখন রাজনৈতিক দলের নেতারা কতটা দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করতে পারবেন, সেটা তারাই ভালো বুঝতে পারবেন। তবে এর কোনো বিকল্প নেই। তারা যদি সুযোগ না নেন তাহলে যে দূরত্ব ছিল, সেই দূরত্ব আরও বাড়বে। জনগণ বোকা নয়। 
জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো বোঝে। কিন্তু জনগণ চায় রাজনৈতিক দলের নেতারা জনগণের সামনে এসে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করুক এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করুক। এবার যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দলের গণতান্ত্রিক অবস্থান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রমাণের সুযোগ নিতে না পারে তাহলে আর কখনোই তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
লুকোচুরি অপরাধের বিস্তার ঘটায়। দলকে অগণতান্ত্রিক, অস্বচ্ছ ও জবাবদিহিহীনের দিকে নিয়ে যায়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা বিশেষ করে ক্ষমতায় থাকা দলের বিভিন্ন পদের নেতা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন তথা নির্বাহী বিভাগকে নিজেদের মতো করে ব্যবহারের সুযোগ পান। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হন এবং জনগণকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।

কোনো রাজনৈতিক দলের ভেতরে কোনো নেতার আনুকূল্য বা প্রশ্রয় তৈরি হওয়া কীভাবে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে তা আমরা অতীতে বহুবার বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে দেখেছি। সর্বশেষ শেখ হাসিনা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন এবং কর্তৃত্ববাদী শাসকে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। পরিণতিতে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হবে এ দেশে ‘আরেকটি হাসিনা’ যাতে তৈরি না হতে পারে তা নিশ্চিত করা। 

মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক; প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ন র জন ত ক দল র ন ত র সদস য জনগণ র প রব ন দল র স ক ষমত অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম

বন্দর উপজেলা বিএনপি নেতা তাওলাদ মাহমুদকে প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দোসরা হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।

সে ঘটনা মামলা করা হলো এখনো বন্দর থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত মূল হোতাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার সাথে জড়িত হামলাকারীদের আগামী ৭২ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়েছে বন্দর উপজেলা বিএনপি।

‎শনিবার ( ১ নভেম্বর) সকালে মদনপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন তাওলাদ মাহমুদের উপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে হামলার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দোসরদের গ্রেপ্তারের এই দাবি জানান।

‎সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ফ্যাসিস শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল কিন্তু তার দোসরা এখনো রয়ে গেছে। মুছাপুর ইউনিয়ন তথা বন্দর উপজেলার বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা দীর্ঘ ১৭টি বছর  আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দোসর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিল। 

এখনো আওয়ামী লীগের দোষরদের দ্বারা বিএনপি নেতা কর্মীরা নির্যাতিত হবে এটা খুবই দুঃখজনক। ৫ তারিখের পরও কিন্তু তারা আত্মগোপনে ছিল। কিন্তু কতিপয় কিছু নেতা ও প্রশাসনের কারণে তারা এখনো আবারো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তারা আবারও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিএনপি নেতাকর্মী ও নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালাচ্ছে।

‎তারা আরও বলেন, তাওলাদ মাহমুদ উপর হামলার ঘটনায় মামলাআওয়ামী লীগে ও জাতীয় পার্টির দোসরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ঘটনায় মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। কিন্তু বন্দর থানা পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপে নিচ্ছে না। 

ফলে প্রতিনিয়ত তারা হামলা মামলা নির্যাতন সহকারে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছ । মুছাপুরের জনগণ তাদের হাত থেকে মুক্তি চায়। অবিলম্বে বিএনপি নেতা তাওলাত মাহমুদের ঘটনার সাথে জড়িত সকল আসামীদের গ্রেপ্তারের ৭২ ঘণ্টার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে সব সময় বেঁধে দিলাম আমরা উপজেলা বিএনপি।

যদি আগামী ৭২ ঘণ্টার মাধ্যমে তাওলাদ মাহমুদের উপর হামলাকারী মূল হোতাদেরকে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। তার জন্য কিন্তু সকল দায়ভার পুলিশ প্রশাসনকেই নিতে হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • গণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক
  • এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির দাবি
  • জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি