“আপনি ন্যায্য মজুরি না দিতে পারলে প্রতিষ্ঠান করেন কেন? গার্মেন্টস মালিকদের মতো এসব কথা বলবেন না। সাংবাদিকদের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ব্যস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে কিনা, গণমাধ্যম মালিকদের মন্ত‌ব্যের জবা‌বে সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ এ প্রশ্ন করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাজের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

রবিবার (২৩ মার্চ) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি আরও ব‌লেন, আমরা শুধু আপনাদের খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করিনি, কমানোর জন্য অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব করেছি, যাতে একটি সংবাদমাধ্যম আরও অনেক বেশি স্বাবলম্বী হতে পারে।

এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশের তা‌লিকা : 

প্রধান উপ‌দেষ্টার কা‌ছে দেওয়া গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতি‌বেদ‌নের এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশগুলোর আলাদা তালিকা সোমবার (২৪ মার্চ) জমা দেওয়া হবে বলে জানান গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান। 

কামাল আহমেদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা আমাদের এখনই ব্যস্তবায়নযোগ্য সুপারিশের তালিকা আলাদা করে দিতে বলেছেন। আমরা সেটা দেবো। আমাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো অনতিবিলম্বে কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, “প্রতিটি মিডিয়া হাউসে ফ্যাক্টচেকিং ডেস্ক করা দরকার। সেটা আমরা অনেক আগে থেকে বলেছি। কিন্তু বিগত সরকার অনেক মিথ্যা উন্নয়নের বয়ান করেছে। তখন সেটা মিডিয়া হাউসগুলো প্রত্যাখ্যান করতে পারেনি। সরকারের সঙ্গে বিরোধ করতে পারেনি, ফ্যাক্টচেক ঠিকমতো হয়নি।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আগে মিথ্যা উন্নয়নের তথ্য ছড়িয়েছে। এখন পতনের পর অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য সুনামির মতো প্রচার হচ্ছে। আর মূলধারার অনেক মিডিয়া নানা ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে এখন তাদের গুরুত্ব হারিয়েছে। ফলে এখন মূলধারার মিডিয়া ভাইরাল হওয়ার নেশায় যা-তা ছড়াচ্ছে। ভারতের মূলধারার অনেক মিডিয়াও বাংলাদেশে গুজব ছড়াচ্ছে। রিপাবলিক বাংলা বা এমন আধা ডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা পতিত সরকারের বন্ধু চ্যানেল।”

“এটা রাজনৈতিকভাবে এখন মোকাবেলা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগ লাগবে। অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য নিয়ে খুব বড় বিপদ আসন্ন। কারণ, ফেসবুক ও অন্যান্য মিডিয়া ফ্যাক্টচেক কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদনে বলেছি, এর জন্য সরকারি উদ্যোগ ও প্রতিটা হাউসের একে অপরের একসঙ্গে কাজ করা দরকার।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ম ল আহম দ এখনই ব অন ক ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবেশ-প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এখনই যা দরকার

খুব সাধারণ চোখে তাকালেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের বাস্তুতন্ত্র কী পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, নদী-হ্রদ-বিল ও জলাভূমির মতো স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্র, শালবন, চিরসবুজ বন এবং পার্বত্য এলাকার বনভূমি, অর্থাৎ স্থলজ বাস্তুতন্ত্র, পাহাড়ি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং মনুষ্যসৃষ্ট বাসস্থান, যেমন গ্রাম, শহর ও কৃষিজমি—সবই এখন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের চেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে মানুষের আচরণের কারণে।

অতিরিক্ত মাছ ধরা, প্লাস্টিক ও পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার অভাব, রাসায়নিক ও তেলের দূষণ, বন ধ্বংস, অব্যবস্থাপনায় বনজ সম্পদের অপচয়, পাহাড় কাটা, প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, গাছ-মাছ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বহিরাগত প্রজাতির আগমন, পর্যটন ও উন্নয়নের নামে ব্যয়বহুল প্রকল্প—এসব মিলেই বাস্তুতন্ত্রে নেতিবাচক পরিবর্তন আসছে। এটি এখন প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তনের চেয়েও ভয়াবহ।

এ ধরনের ক্ষয় ঠেকাতে এখনই শক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতির ধরন বুঝে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। আমাদের যা হারিয়েছি, তা আর হারাতে দেওয়া যাবে না। এটা হওয়া উচিত জাতিগতভাবে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বাস্তুতন্ত্রের জীব ও জড় উপাদান একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। শক্তিপ্রবাহ, পুষ্টিচক্র, প্রজাতিগুলোর আন্তসম্পর্ক বাস্তুতন্ত্রকে কার্যকর রাখে। সুতরাং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা না করা মানেই আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের ঝুঁকিতে ফেলা। প্রাকৃতিক উপায়ে খাদ্যনিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার (ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন) একটি কার্যকর পথ। তবে এটি সহজ কিংবা তাৎক্ষণিক কোনো কাজ নয়, এটি সম্পন্ন করতে হলে আমাদের অর্থনীতি, কৃষি, খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনযাত্রার নানা দিকেই পরিবর্তন আনতে হবে। এর সৌন্দর্য হলো এটি যেকোনো স্কেলে ঘটতে পারে এবং এতে সবারই ভূমিকা রয়েছে।

পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার মানে শুধুই গাছ লাগানো নয়। আমরা অনেকেই ভাবি, গাছ লাগানো মানেই পরিবেশ বাঁচানো। বাস্তবে শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয়, কী গাছ লাগানো হচ্ছে, সেটা দেশি কি না, কোথায় লাগানো হচ্ছে, গাছের উপযুক্ত যত্ন হচ্ছে কি না—এসব বিবেচনাও গুরুত্বপূর্ণ। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো বাস্তুতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তা বোঝা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

সব সময় একটি পরিবেশকে তার অতীত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বা উচিতও নয়। যেমন আগে যেসব অঞ্চল বনভূমি ছিল, এখন সেগুলোর একটি বড় অংশ কৃষিজমি বা বসতিতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশকে বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে, ঠিক যেমন সমাজ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াচ্ছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) তথ্যমতে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে যদি ৩৫ কোটি হেক্টর ভূমি ও জলজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা যায়, তবে বিশ্ব প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিবেশগত সেবা পেতে পারে এবং ১৩ থেকে ২৬ গিগাটন গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে পারে। এ অর্থনৈতিক লাভ বিনিয়োগের তুলনায় ৯ গুণ বেশি। অন্যদিকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ক্ষতি তিন গুণ বেশি।

বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব সব ক্ষেত্রেই—বন, কৃষিজমি, শহর, জলাভূমি ও সাগর পর্যন্ত। উদ্যোগ নিতে পারে সরকার, উন্নয়ন সংস্থা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কমিউনিটি এমনকি ব্যক্তিপর্যায়ের মানুষও। কারণ, ক্ষতির ধরন বহুমাত্রিক এবং এর উৎসও বিভিন্ন। বস্তুত পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার মানে একটি সার্বিক পরিবর্তন—শুধু প্রকৃতির নয়, আমাদের আচরণেরও। এটা রোগনিয়ন্ত্রণ, জীবিকা রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলা, এমনকি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজিস) অর্জনের সঙ্গেও সরাসরি জড়িত।

জাতিসংঘ ঘোষিত ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারের দশক (ইউএন ডকেড অন ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন) আমাদের আহ্বান জানায়, যাতে আমরা ইকোসিস্টেমের, অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষয় রোধ করি, ধ্বংস থামাই ও পুনরুদ্ধারে সক্রিয় হই। এত দিন ধরে আমরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ আমাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি করেছি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বের সব কটি রাষ্ট্র আগামী এক দশক (২০২১-২০৩০) ধরে চেষ্টা করবে। এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক জলবায়ু সমাধান (ন্যাচারাল ক্লাইমেট সলিউশন), যা অভিযোজন ও প্রশমনে সহায়তা করে এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই পথ তৈরি করবে।

প্যারিস চুক্তি ও জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (ন্যাপস) আওতায়, দেশগুলো তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানে পরিবেশ পুনরুদ্ধার অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এ ছাড়া আরইডিডি+, অর্থাৎ ‘রেড’ হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বন ধ্বংস ও বন নষ্ট হওয়া থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানো। আর ‘+’ চিহ্নটি বোঝায় অতিরিক্ত কিছু বন-সম্পর্কিত কাজ, যেমন বনের ভালোভাবে দেখাশোনা করা, আর বনের কার্বন ধরে রাখা ও বাড়ানো, যেগুলো জলবায়ু রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে রেড‍+ এর আওতায় বন সংরক্ষণ ও কার্বন মজুতের উন্নয়ন সম্ভব। তবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থায়ন, যা এখনো সীমিত। এ ক্ষেত্রে ‘ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স’ (সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থায়ন) নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে আমরা অনেক সময় ধরে একটা চক্রেই যেন আটকে আছি—পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের সমস্যার সমাধান শুধু গাছ লাগানোর মধ্যেই যেন আমরা খুঁজে পাচ্ছি! তা–ও বলা বাহুল্য যে যথোপযুক্ত উপায়ে নয়।

যা হোক, আমরা যদি বাস্তুতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে পুনরুদ্ধার করতে চাই, তবে শুধু গাছ লাগানো নয়, পুরো বাস্তুতন্ত্রের প্রেক্ষাপট বুঝে কাজ করতে হবে। সময় খুব কম। এখনই উদ্যোগ না নিলে ক্ষতির মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছাবে, যেখান থেকে ফেরা আর সম্ভব হবে না।

সম্প্রতি জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) সহায়ক সংস্থার ৬২তম অধিবেশনে (এসবি–৬২) অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। জার্মানির বন এ অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে কপ–৩০ (২০২৫) সম্মেলনের আগে অভিযোজন ও অর্থায়ন ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরার ও এ দৃষ্টিকোণও তুলে ধরা সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিজ্ঞতা ও যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বললেই চলবে না। এখন দরকার বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও আমূল আচরণগত পরিবর্তন। পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের ঘোষিত দশকের (২০২১-২০৩০) মধ্যভাগে এসে আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, আমরা কি সত্যিই এগোচ্ছি? পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গুরুত্ব না দিই, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা রেখে যাব এক অস্থির, বিপন্ন ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ।

বিধান চন্দ্র পাল প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রভা অরোরা, ন্যাশনাল অপারেটর, ফাউন্ডেশন ফর এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন (এফইই), বাংলাদেশ এবং চেয়ার, মেইক এ ডিফারেন্স উইক সেলিব্রেশন গ্লোবাল কমিটি, সোসাইটি ফর ইকোলজিক্যাল রেস্টোরেশন (এসইআর)।

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পরিবেশ-প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এখনই যা দরকার