রোজা হলো নৈতিক শক্তি, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও শুদ্ধাচারের পরম শিক্ষা। পবিত্র রমজানে রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় রোজাদার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সব ধরনের বৈধ পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকেন।

নির্জন–নিরালায় ও গোপন স্থানে অতি সংগোপনেও রোজাদার পানাহার তথা রোজার বিপরীত কোনো কাজ করেন না। সব কাজে সব সময় নেক আমলের জন্য কষ্টসহিষ্ণু ও পাপ বর্জনের জন্য মানসিক দৃঢ় মনোবল অর্জনই রোজার মূল শিক্ষা।

যদি কেউ রোজা পালন করেন, কিন্তু গুনাহ ছাড়তে না পারেন, তবে তাঁর রোজার প্রকৃত সুফল তিনি পাবেন না।

আল্লাহ পবিত্র ও সত্যময়। সত্যভাষণ, পবিত্র জীবন ও প্রেমিক মন আল্লাহর অতি প্রিয়। পবিত্র রমজান ইবাদত–বন্দেগি ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাস। যাঁরা পবিত্র রমজান মাসেও নীতিনৈতিকতার ধার ধারেন না, অনৈতিক ও অসামাজিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা পবিত্র রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পবিত্র রমজান মাসকে ব্যবসার উপলক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেন।

কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা পবিত্র রমজানে ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য অন্যায় ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। আরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পবিত্র রমজানের ঈদের রাতে কোথায় কোথায় ঘুরবেন এবং ঈদের দিন কোথায় কোথায় অযথা সময় কাটাবেন, সেই ছক কষতে থাকেন। ফলে পবিত্র ঈদের মহিমান্বিত ইবাদতের রজনীও অনর্থক হয়ে যায়। এ ধরনের কাজ মহা অন্যায় এবং রোজা ও পবিত্র রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হলো হালাল ও বৈধ অর্থসম্পদ উপার্জন ও হালাল খাদ্য গ্রহণ। হালাল উপার্জিত সম্পদের সঙ্গে হারাম বা অবৈধ সম্পদ যুক্ত হলে পুরো সম্পদই অপবিত্র বা হারাম হয়ে যায়। হিসাব অনুযায়ী জাকাত প্রদান না করলে সম্পদ পবিত্র হয় না। সে সম্পদ তাঁর মালিকের জন্য হালাল থাকে না। যেসব ব্যবসায়ী পবিত্র রমজান মাসেও ব্যবসায় লেনদেনে মিথ্যা বা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন, খাদ্যে ভেজাল মেশান, ওজনে বা মাপে কম দেন, এক নম্বর জিনিস বলে দুই–তিন নম্বর জিনিস ধরিয়ে দেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করেন, তাঁদের উপার্জনও হালাল হবে না। উপার্জন হালাল না হলে তাঁদের রোজা, নামাজ, হজ ও জাকাত কবুল হবে না; তাঁরা পবিত্র রমজানের শিক্ষা ও কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত থাকবেন। প্রিয় নবী (সা.

) বলেছেন, ‘যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়।’ (তিরমিজি: ১৩১৫)

রোজার মূল শিক্ষা হলো জীবনটাকে রোজার মতো সুনিয়ন্ত্রিত করা। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত খেলাপের মতো ­­­­ ইবাদতের মাসে আরও বেশি ক্ষতির কারণ। তাই পবিত্র রমজানে রোজা অবস্থায় কোনো প্রকার ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের বরখেলাপ অবশ্যই নিষিদ্ধ ও অধিক নিন্দনীয়।

অনেককে দেখা যায় পবিত্র রমজানে দিনের বেলায় যে গুনাহর কাজটি করছেন না, রাতের বেলায় অবলীলায় তা করছেন; এটি মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।

মানুষকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জ্ঞান দ্বারা সম্মানিত করেছেন। মানুষ জ্ঞান দ্বারাই পরিচালিত হয়। জ্ঞানের উৎস হলো তথ্য। তথ্য লাভের বা জ্ঞান প্রাপ্তির মাধ্যম হলো পঞ্চেন্দ্রিয়। পঞ্চেন্দ্রিয় তথা পাঁচটি অনুভূতি গ্রহণ যন্ত্র হলো চোখ, কান, নাক, জিব ও ত্বক। পবিত্র রমজানে পঞ্চেন্দ্রিয়ের সঠিক সংযমী ব্যবহার নিশ্চিত করাই হলো মুখ্য। সঙ্গে সঙ্গে আজীবন এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা অর্জন করা হলো রোজার সফলতা। সত্যতা, পবিত্রতা ও প্রেমময়তা অর্জন হলেই সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় শ্রবণ, দর্শন ও কল্পনা–পরিকল্পনা এ সবকিছু সম্পর্কেই (বিচারের দিনে) প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৩৬)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ উপ র জ র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে আমনের ক্ষতির শঙ্কা, ধান কাটার পরামর্শ কৃষি বিভাগের 

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিলনা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। এ বছর ৫৪ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছিলেন আমন ধান। পেকে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। পরিকল্পনা ছিল, পরিবারের যোগান মিটিয়ে, কিছু ধান বিক্রি করে পুরো বছর চালাবেন ১০ জনের সংসার। তবে, তার সেই স্বপ্ন নষ্ট করে দিল দমকা হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টি। ধান হেলে পড়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তা এখন নষ্ট হতে বসেছে।

এই কৃষক বলেন, “সাংসারে স্ত্রী, ছেলে, নাতীসহ ১০ জন আছে। এ বছর ৫৪ শতাংশ জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। জমির ধানও পেকেছিল। ভেবেছি, কয়েকদিন পর ধান কেটে ঘরে তুলব। এই ধান আর ঘরে তুলতে পারলাম না। ঝড়ো হওয়া আর বৃষ্টিতে হেলে পড়ে পানিতে তলিয়ে ধান এখন নষ্ট হতে বসেছে। সারা বছর কীভাবে চলব তা চিন্তাই করতে পারছি না।” শুধু সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসই নয়, এমন অবস্থা কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষকের।

আরো পড়ুন:

খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা

দিনাজপুরে টানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত

কৃষি বিভাগ বলেছে, ধান দ্রুত কেটে নিলে ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ১২ হাজার ৩০৮ হেক্টর জমিতে আমান ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর, উফশী জাতের ৮ হাজার ২০৩ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। 

রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তীব্র বাতাস বয়ে যাওয়ায় হেলে পড়ে পাকা আমন ধান। জমিতে জমে থাকা পানিতে কেটে রাখা ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা গেছে। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট থাকায় হেলে পড়া ধান কাটতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। দ্রুত পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে তা মাঠেই নষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

কৃষক মহানন্দ দে বলেন, “বৃষ্টি আগে ধান কাটা শেষ করতে পারলে বিঘা প্রতি ৪০ মণ পেতাম। ধান হেলে পড়ায় ও তলিয়ে যাওয়ায় ২০ মণ পাব কিনা সন্দেহ রয়েছে। ধান কাটতে আগে ৭-৮ জন শ্রমিক লাগলেও এখন লাগবে অন্তত ১৫ জন। ফলে আমরা ধান হারানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”

জমি থেকে ধান কাটায় ব্যস্ত চাষিরা

সিঙ্গারকুল গ্রামের কৃষক বিশ্বম চন্দ্র সরকার বলেন, “পাকা ধান বৃষ্টির কারণে নষ্ট হতে বসেছে। এ ধান না যাবে খাওয়া, না যাবে বিক্রি করা। এমনকি খড় পচে যাচ্ছে যা গরুকেও খাওয়ানো যাবে না। দেনা করে ফসল ফলিয়েছি। এখন ধার কীভাবে মেটাব, আর সারা বছর কীভাবে চলব সেই চিন্তায় দিন কাটছে।”

কৃষক মফিজুর ইসলাম বলেন, “এমন একটা দুর্যোগ গেলেও কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের খোঁজ নেননি। শুধু আজ নয়, কোনো সময়ই আমাদের খোঁজ রাখেন না তারা। আমরা কোনো পরামর্শও পাই না তাদের কাছ থেকে। এখন যদি সরকার আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়, তাহলে আমাদের মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন, “গত শনিবারের বৃষ্টিতে জেলায় ধানসহ কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। ক্ষতি কমাতে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দিতে ঊর্ধ্বতণ কর্মকর্তাদের জানানো হবে।

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ