পঞ্চেন্দ্রিয়কে বশে রাখার প্রশিক্ষণ দেয় পবিত্র রমজান
Published: 24th, March 2025 GMT
রোজা হলো নৈতিক শক্তি, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও শুদ্ধাচারের পরম শিক্ষা। পবিত্র রমজানে রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় রোজাদার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সব ধরনের বৈধ পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকেন।
নির্জন–নিরালায় ও গোপন স্থানে অতি সংগোপনেও রোজাদার পানাহার তথা রোজার বিপরীত কোনো কাজ করেন না। সব কাজে সব সময় নেক আমলের জন্য কষ্টসহিষ্ণু ও পাপ বর্জনের জন্য মানসিক দৃঢ় মনোবল অর্জনই রোজার মূল শিক্ষা।
যদি কেউ রোজা পালন করেন, কিন্তু গুনাহ ছাড়তে না পারেন, তবে তাঁর রোজার প্রকৃত সুফল তিনি পাবেন না।
আল্লাহ পবিত্র ও সত্যময়। সত্যভাষণ, পবিত্র জীবন ও প্রেমিক মন আল্লাহর অতি প্রিয়। পবিত্র রমজান ইবাদত–বন্দেগি ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাস। যাঁরা পবিত্র রমজান মাসেও নীতিনৈতিকতার ধার ধারেন না, অনৈতিক ও অসামাজিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা পবিত্র রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পবিত্র রমজান মাসকে ব্যবসার উপলক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেন।
কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা পবিত্র রমজানে ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য অন্যায় ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। আরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পবিত্র রমজানের ঈদের রাতে কোথায় কোথায় ঘুরবেন এবং ঈদের দিন কোথায় কোথায় অযথা সময় কাটাবেন, সেই ছক কষতে থাকেন। ফলে পবিত্র ঈদের মহিমান্বিত ইবাদতের রজনীও অনর্থক হয়ে যায়। এ ধরনের কাজ মহা অন্যায় এবং রোজা ও পবিত্র রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হলো হালাল ও বৈধ অর্থসম্পদ উপার্জন ও হালাল খাদ্য গ্রহণ। হালাল উপার্জিত সম্পদের সঙ্গে হারাম বা অবৈধ সম্পদ যুক্ত হলে পুরো সম্পদই অপবিত্র বা হারাম হয়ে যায়। হিসাব অনুযায়ী জাকাত প্রদান না করলে সম্পদ পবিত্র হয় না। সে সম্পদ তাঁর মালিকের জন্য হালাল থাকে না। যেসব ব্যবসায়ী পবিত্র রমজান মাসেও ব্যবসায় লেনদেনে মিথ্যা বা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন, খাদ্যে ভেজাল মেশান, ওজনে বা মাপে কম দেন, এক নম্বর জিনিস বলে দুই–তিন নম্বর জিনিস ধরিয়ে দেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করেন, তাঁদের উপার্জনও হালাল হবে না। উপার্জন হালাল না হলে তাঁদের রোজা, নামাজ, হজ ও জাকাত কবুল হবে না; তাঁরা পবিত্র রমজানের শিক্ষা ও কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত থাকবেন। প্রিয় নবী (সা.
রোজার মূল শিক্ষা হলো জীবনটাকে রোজার মতো সুনিয়ন্ত্রিত করা। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত খেলাপের মতো ইবাদতের মাসে আরও বেশি ক্ষতির কারণ। তাই পবিত্র রমজানে রোজা অবস্থায় কোনো প্রকার ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের বরখেলাপ অবশ্যই নিষিদ্ধ ও অধিক নিন্দনীয়।
অনেককে দেখা যায় পবিত্র রমজানে দিনের বেলায় যে গুনাহর কাজটি করছেন না, রাতের বেলায় অবলীলায় তা করছেন; এটি মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।
মানুষকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জ্ঞান দ্বারা সম্মানিত করেছেন। মানুষ জ্ঞান দ্বারাই পরিচালিত হয়। জ্ঞানের উৎস হলো তথ্য। তথ্য লাভের বা জ্ঞান প্রাপ্তির মাধ্যম হলো পঞ্চেন্দ্রিয়। পঞ্চেন্দ্রিয় তথা পাঁচটি অনুভূতি গ্রহণ যন্ত্র হলো চোখ, কান, নাক, জিব ও ত্বক। পবিত্র রমজানে পঞ্চেন্দ্রিয়ের সঠিক সংযমী ব্যবহার নিশ্চিত করাই হলো মুখ্য। সঙ্গে সঙ্গে আজীবন এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা অর্জন করা হলো রোজার সফলতা। সত্যতা, পবিত্রতা ও প্রেমময়তা অর্জন হলেই সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় শ্রবণ, দর্শন ও কল্পনা–পরিকল্পনা এ সবকিছু সম্পর্কেই (বিচারের দিনে) প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৩৬)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ উপ র জ র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।