অতীতের ঘটনাগুলো যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে: বেবী নাজনীন
Published: 24th, March 2025 GMT
দুই দশক পর বিটিভি প্রাঙ্গণে দেখা মিলল নন্দিত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনের। ঈদের একক সংগীতানুষ্ঠানের জন্য শুক্রবার রাষ্ট্রীয় এই টিভি চ্যানেলে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এদিন সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় ‘প্রিয়তম একটু শোনো’ শিরোনামে একক সংগীতানুষ্ঠানের আটটি গান।
সে তালিকায় রয়েছে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা গান ‘দু চোখে ঘুম আসে না’, ‘কাল সারারাত’, ‘মধুচন্দ্রিমা এই রাতে’, ‘সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে’, ‘দারুণও বরষায় নদী’, ‘প্রিয়তম একটু শোনো’ ও ‘বন্ধু তুমি কই’। এর পাশাপাশি রেকর্ড করা হয় ‘খোলা হাটের বালুচরে’ শিরোনামে একটি আঞ্চলিক বিয়ের গান।
অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় তিনটি গানে আলাদাভাবে কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির নির্বাহী প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন আফরোজা সুলতানা।
এ আয়োজন নিয়ে বেবী নাজনীন বলেন, ‘ঈদ উৎসব আনন্দময় করে তুলতেই দর্শক-শ্রোতার প্রিয় কিছু গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। নির্মাণেও আছে নান্দনিকতার ছাপ। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি অনেকের ভালো লাগবে বলেই আশা করছি।’
দুই দশক পর বিটিভিতে ফেরা নিয়ে এই শিল্পী আরও বলেন, ‘বিটিভি শুধু রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলই নয়, সেই সঙ্গে বহু শিল্পী ও তারকার আঁতুরঘর। দশকের পর দশক পেরিয়ে গেছে, তারপরও যেখানে গান গাওয়া যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে, তার ইতি টানা প্রয়োজন মনে করেননি কেউ। রাজনৈতিক কারণে শিল্পীদের অদৃশ্য এক কালো তালিকা তৈরি করে সেখানে একরকম প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। একজন শিল্পী হিসেবে জাতীয় গণমাধ্যমে গাইতে না পারা কষ্ট কেমন, তা দুই দশক ধরে উপলব্ধি করেছি। অবশেষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিটিভিতে ফিরে আসা। এই ফেরা অন্যরকম এক ভালো লাগার। এখন আমার একটাই চওয়া, অতীতের ঘটনাগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রত্যেক শিল্পী যেন স্বাধীনভাবে প্রচার মাধ্যমগুলোয় নিজস্ব সৃষ্টি ও প্রতিভা তুলে ধরার যেন সুযোগ পান।’
এদিকে বিটিভির পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যানেলের আরও কয়েকটি ঈদ অনুষ্ঠানে দেখা মিলবে বেবী নাজনীনের। এরই মধ্যে জিটিভির ‘টাইমলাইন বাংলাদেশ’ এবং একাত্তর টিভিতে জীবনীভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। শিগগিরই অংশ নেবেন যমুনা টিভির ‘যমুনার নিমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানে।
প্রসঙ্গত, ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ ও ‘উত্তরবঙ্গের দোয়েল’খ্যাত শিল্পী বেবী নাজনীনের সংগীত ক্যারিয়ার চার দশকের বেশি সময়ের। দীর্ঘ এই সংগীত সফরে তিনি টিভি, চলচ্চিত্র, বেতারসহ দেশ-বিদেশের মঞ্চে গান করে কুড়িয়েছেন অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা।
তাঁর গাওয়া ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘দু চোখে ঘুম আসে না’, ‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘ওই রংধনু থেকে’, ‘পত্রমিতা’, ‘মরার কোকিলে’, ‘আর কতদিন’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে’, ‘প্রিয়তমা’সহ আরও অসংখ্য গান আজও শ্রোতাদের মনে অনুরণন তুলে যাচ্ছে।
অনিন্দ্য কণ্ঠ আর অনবদ্য গায়কীর জন্য ভূষিত হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননায়। সংগীত সাধনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কমকাণ্ড নিয়েও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে এ শিল্পীর। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ব ন জন ন অন ষ ঠ ন ন জন ন
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।