Samakal:
2025-05-01@03:23:40 GMT

দুই দশক পর বেবী নাজনীন

Published: 24th, March 2025 GMT

দুই দশক পর বেবী নাজনীন

দুই দশক পর বিটিভি প্রাঙ্গণে দেখা মিলল নন্দিত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনের। ঈদের একক সংগীতানুষ্ঠানের জন্য শুক্রবার রাষ্ট্রীয় এই টিভি চ্যানেলে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এদিন সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় ‘প্রিয়তম একটু শোনো’ শিরোনামে একক সংগীতানুষ্ঠানের আটটি গান। 

সে তালিকায় রয়েছে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা গান ‘দু চোখে ঘুম আসে না’, ‘কাল সারারাত’, ‘মধুচন্দ্রিমা এই রাতে’, ‘সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে’, ‘দারুণও বরষায় নদী’, ‘প্রিয়তম একটু শোনো’ ও ‘বন্ধু তুমি কই’। এর পাশাপাশি রেকর্ড করা হয় ‘খোলা হাটের বালুচরে’ শিরোনামে একটি আঞ্চলিক বিয়ের গান।

অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় তিনটি গানে আলাদাভাবে কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির নির্বাহী প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন আফরোজা সুলতানা।

এ আয়োজন নিয়ে বেবী নাজনীন বলেন, ‘ঈদ উৎসব আনন্দময় করে তুলতেই দর্শক-শ্রোতার প্রিয় কিছু গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। নির্মাণেও আছে নান্দনিকতার ছাপ। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি অনেকের ভালো লাগবে বলেই আশা করছি।’

দুই দশক পর বিটিভিতে ফেরা নিয়ে এই শিল্পী আরও বলেন, ‘বিটিভি শুধু রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলই নয়, সেই সঙ্গে বহু শিল্পী ও তারকার আঁতুরঘর। দশকের পর দশক পেরিয়ে গেছে, তারপরও যেখানে গান গাওয়া যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে, তার ইতি টানা প্রয়োজন মনে করেননি কেউ। রাজনৈতিক কারণে শিল্পীদের অদৃশ্য এক কালো তালিকা তৈরি করে সেখানে একরকম প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। একজন শিল্পী হিসেবে জাতীয় গণমাধ্যমে গাইতে না পারা কষ্ট কেমন, তা দুই দশক ধরে উপলব্ধি করেছি। অবশেষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিটিভিতে ফিরে আসা। এই ফেরা অন্যরকম এক ভালো লাগার। এখন আমার একটাই চওয়া, অতীতের ঘটনাগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রত্যেক শিল্পী যেন স্বাধীনভাবে প্রচার মাধ্যমগুলোয় নিজস্ব সৃষ্টি ও প্রতিভা তুলে ধরার যেন সুযোগ পান।’

এদিকে বিটিভির পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যানেলের আরও কয়েকটি ঈদ অনুষ্ঠানে দেখা মিলবে বেবী নাজনীনের। এরই মধ্যে জিটিভির ‘টাইমলাইন বাংলাদেশ’ এবং একাত্তর টিভিতে জীবনীভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। শিগগিরই অংশ নেবেন যমুনা টিভির ‘যমুনার নিমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানে।

প্রসঙ্গত, ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ ও ‘উত্তরবঙ্গের দোয়েল’খ্যাত শিল্পী বেবী নাজনীনের সংগীত ক্যারিয়ার চার দশকের বেশি সময়ের। দীর্ঘ এই সংগীত সফরে তিনি টিভি, চলচ্চিত্র, বেতারসহ দেশ-বিদেশের মঞ্চে গান করে কুড়িয়েছেন অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা।

তাঁর গাওয়া ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘দু চোখে ঘুম আসে না’, ‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘ওই রংধনু থেকে’, ‘পত্রমিতা’, ‘মরার কোকিলে’, ‘আর কতদিন’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে’, ‘প্রিয়তমা’সহ আরও অসংখ্য গান আজও শ্রোতাদের মনে অনুরণন তুলে যাচ্ছে।

অনিন্দ্য কণ্ঠ আর অনবদ্য গায়কীর জন্য ভূষিত হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননায়। সংগীত সাধনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কমকাণ্ড নিয়েও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে এ শিল্পীর। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ব ন জন ন অন ষ ঠ ন দ ই দশক ন জন ন দশক প

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ