বসতবাড়ির মাত্র ১৯ শতক জমি লিখে না দেওয়ায় নাসির উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে রোগী সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে। পরে ভাগ্নের জিডির ভিত্তিতে ৯ দিন পর ভুক্তভোগীকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড দোলং গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন ওই গ্রামের মৃত আবির মোল্লার ছেলে। তার স্ত্রীর নাম বেদেনা খাতুন (৪৫)।

এলাকাবাসী জানান, নাসির উাদ্দন ও বেদেনা দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। এদের মধ্যে বড় মেয়ে নাজমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে একই উপজেলার বোয়াইলমারী গ্রামের মৃত কিতাব মাস্টারের ছেলে আসাদ হোসেনের সঙ্গে। ছোট মেয়ে শামসুন্নাহারের বিয়ে হয়েছে পৌর সদরের আফ্রাতপাড়া মহল্লার মিছা প্রামানিকের ছেলে জাহিদ প্রামানিকের সঙ্গে। একমাত্র ছেলে মাসুম মোল্লা (২১) সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে বিএ (অনার্স) প্রথমবর্ষের ছাত্র।

আরো পড়ুন:

৩২ ওমরাহ যাত্রীর ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে উধাও এজেন্সি পরিচালক

ফতুল্লায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৩ 

অভিযোগে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটার কাজ করে সংসার চালান নাসির উদ্দিন। এক বছর আগে রামনগর গ্রামের মোফাজ্জল সরদারের কাছ থেকে বাৎসরিক ৪৫ হাজার টাকায় জমি লীজ নেন তিনি। সেই জমি আবাদ করে স্বচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। এক মাস আগে বসতবাড়ির ১৯ শতক জমি নাসির উদ্দিনকে লিখে দিতে বলেন তার ছেলে মাসুম। না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছেলে তার বাবাকে মারধরও করেন।

লীজ নেওয়া জমির মালিক মোফাজ্জল সরদারকে নাসির উদ্দিনের স্ত্রী-সন্তান বলেন তারা আর জমি লীজ নিবেন না। কিন্তু নাসির উদ্দিনের ইচ্ছা তিনি জমি লীজ নিয়ে আবাদ করবেন। তাতে বাধ সাধেন তার স্ত্রী বেদেনা খাতুন ও ছেলে মাসুম এবং জামাই আসাদ। এ নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। তখন নাসির উদ্দিনের ভাগ্নে শরীফুল ইসলাম জানতে পেরে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। নাসিরের স্ত্রী-সন্তান তাকে ভুল বুঝে সমাধান করতে দেননি।

ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন বলেন, “গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে আমাকে বেঁধে পাবনায় নিয়ে যায় এক ডাক্তারের কাছে। সেখানে আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে কিছু ওষুধ লিখে নিয়ে বাড়িতে আসে। আমি সেই ওষুধ খাই নাই ভয়ে। ইনজেকশনের ব্যথা এখনো আছে। তারপর আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। এর মধ্যে গত ১২ মার্চ আবারো জমি লিখে নিতে চান ছেলে মাসুম, স্ত্রী বেদেনা, মেয়ে জামাই। তাতে রাজী না হওয়ায় ১৩ মার্চ ভোরা রাতে রোগী সাজিয়ে হাত-পা ও কোমড় বেঁধে তারা আমাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায়।” 

তিনি আরো বলেন, “সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে পাশের বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল সুরমা ক্লিনিকে ভর্তি করে রেখে আসে। সুস্থ মানুষ হয়েও স্ত্রী, সন্তান, জামাইয়ের ষড়যন্ত্রে সেখানে ৯ দিন ভর্তি ছিলাম।”

নাসির উদ্দিনের ভাগ্নে শরীফুল ইসলাম বলেন, “নিখোঁজ মামার সন্ধান চেয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলেননি। পরে বাধ্য হয়ে গত ১৯ মার্চ চাটমোহর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করি। পরে পুলিশ জানতে পারে, পাবনায় সুরমা ক্লিনিকে মানসিক রোগী হিসেবে ভর্তি রয়েছেন নাসির উদ্দিন। এ ঘটনায় স্ত্রী-সন্তান নাসির উদ্দিনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন পুলিশকে। ২১ মার্চ বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন মামার স্ত্রী বেদেনা খাতুন ও ছেলে মাসুম। টের পেয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের আটক করি। এরপর ওইদিনই তাদের সঙ্গে করে পাবনায় সুরমা ক্লিনিকে গিয়ে নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী রেজাউল করিম বলেন, “নাসির উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর সবাই ধীরে ধীরে সব জানতে পারে। এটা একটা অমানবিক ঘটনা। সামান্য জমির জন্য বাবাকে কোনো ছেলে এভাবে পাগল সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে রাখতে পারে জানা ছিল না। এরা অমানুষ। সবাইতো নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলছে, কারো তো মনে হলো না তিনি পাগল। এমন বউ-ছেলের শাস্তি হওয়া উচিত।”

নাসির উদ্দিনের অভিযুক্ত ছেলে মাসুম মোল্লা বলেন, “আমার বাবা রাতে ঘুমায় না। মধ্যরাতে ঘরের বাইরে এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার কথাবার্তাও অসংলগ্ন বলেন। এর আগেও ডাক্তার দেখাইছি। ডাক্তার বলছেন, তার মাথায় সমস্যা আছে। আবার মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখাই। সেখানেও তাকে দেখে ওষুধ লিখে দেন ও হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন ডাক্তার। পরে সরকারি হাসপাতালে সিট না থাকায় পাশের ক্লিনিকে ভর্তি করি। এখানে আমাদের নামে যেসব কথা আব্বা বলছেন তা সঠিক নয়।”

নাসির উদ্দিনের স্ত্রী বেদেনা খাতুন বলেন, “ডাক্তার বলছে তার মাথায় সমস্যা আছে। আমাকেও যখন তখন যা তা ভাষায় বকাবকি করেন। জমি লিখে নেওয়ার কোনো বিষয় নয়। তখন ছেলে জামাই মিলে ডাক্তার দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি জোরাজুরি করছিলেন সে জন্য তাকে বাঁধা হয়েছিল। এখন তিনি যদি সুস্থ হন ভালো কথা।’

চাটমোহর থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘অভিযোগটি পাওয়ার পর সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। তখন সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ অফিসারকে ক্লিনিকে পাঠিয়ে আসলে নাসির উদ্দিন মানসিক রোগী কি না জানার চেষ্টা করি। সেখান থেকে নিশ্চিত হই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ নন।”

তিনি আরো বলেন, “হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে আমার পরিচিত বন্ধু ডাক্তারকে পাঠিয়ে জানতে পারি, ওই ওষুধও মানসিক রোগীর ওষুধ নয়। নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে আনার পর তার ইচ্ছামতো যেখানে তিনি নিরাপদ মনে করেন সেখানে থাকতে বলা হয়েছে। আসলে নাসির উদ্দিনের জামাই আমাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।”

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ ধ র অভ য গ ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক। 

 এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”

বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।” 

চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”

ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।” 

হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে। 

গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।

কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”

ঢাকা/রাঙামাটি/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে বসতবাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা ও প্রাননাশের হুমকি
  • ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব