Risingbd:
2025-06-16@08:55:51 GMT

জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান

Published: 24th, March 2025 GMT

জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান

জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম ফরজ বিধান এবং ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম আর্থিক উৎস। ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রে জাকাতের ভূমিকা বহুমুখী। এটি শুধু আর্থিক ইবাদত নয়, বরং এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাকাত এমন একটি বিধান যা পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মেও ছিল। যেমন ঈসা (আ.

) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।’ (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৩১)

কোরআন ও হাদিসে জাকাত 

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহ জাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ পাশাপাশি আনা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো এবং জাকাত দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৩)

আরো পড়ুন:

রমজানে নেক আমল ও সমাজসংস্কার 

রমজানের শেষ দশকে যেসব আমল গুরুত্বপূর্ণ

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নামাজ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। সদকা তথা জাকাত হচ্ছে দলিল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪২২)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে জাকাত দেয়, তার সম্পদ ক্ষয় হয় না, বরং তা বৃদ্ধি পায়।’ (সহিহ মুসলিম)

যাদের ওপর জাকাত ফরজ

ইসলামী শরিয়ত কেবল সামর্থবান মানুষের ওপর জাকাত ফরজ করেছে। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্তারোপ করেছে। তা হলো :

মুসলিম হওয়া : জাকাত শুধু মুসলমানের ওপর ফরজ। 
স্বাধীন হওয়া : দাস বা পরাধীন ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ নয়।
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া : নিসাব হলো শরীয়ত নির্ধারিত সম্পদের সর্বনিম্ন পরিমাণ। যারা পূর্ণ বছর এই পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবে কেবল তারাই জাকাত দেবে।
সম্পদ এক বছর মালিকানায় থাকা : কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, সাধারণত এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত আদায় করতে হয়।
ঋণমুক্ত হওয়া : ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হয়। (দুররুল মুখতার : ৩/১৮২; হিদায়া, জাকাত অধ্যায়)

জাকাতের নিসাব

নিসাব হলো সম্পদের সর্বনিম্ন পরিমাণ, যার ওপর জাকাত ফরজ হয়। কারো কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ (৮৭.৪৮ গ্রাম) এবং সাড়ে ৫২ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা থাকে তাহলে তাকে জাকাত দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বর্ণের হিসাব তখনই প্রযোজ্য হবে যখন স্বর্ণ ছাড়া রূপা, নগদ অর্থ অথবা অন্য কোনো সম্পদ থাকবে না। যদি স্বর্ণের সঙ্গে রূপা বা নগদ অর্থ থাকে তবে সে ক্ষেত্রে রূপার হিসাবে জাকাত প্রদান করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৮০; আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৮০)

জাকাত কখন দিতে হবে

জাকাত বছরের যে কোনো সময় দেওয়া যায়। তবে রমজান মাসে যেহেতু আল্লাহ আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন তাই আলেমরা রমজানে জাকাত দেওয়া উত্তম বলেন। আশা করা যায়, কেউ রমজানে জাকাত দিলে আল্লাহ কমপক্ষে ৭০টি ফরজ দানের সাওয়াব দেবেন। এছাড়াও রমজান থেকে রমজান হিসাব রাখাও ব্যক্তির জন্য সহজ হবে।

আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে জাকাত প্রদানের তাওফিক দিন। আমিন।

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন র ওপর জ ক ত ফরজ স বর ণ পর ম ণ আল ল হ ইসল ম রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

তাণ্ডব হচ্ছে ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট

তান্ডব সিনেমা কি সত্যিই তান্ডব বইছে নাকি অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই না? সবই মিডিয়ার হাইপ? মোটাদাগে তান্ডবের প্রধান দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, প্রতিশোধ নিতে একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জিম্মি করে স্বাধীনে টিম (শাকিব)। জিম্মিদের সাথে আলোচনা হবে টিভি লাইভে, যেনো দেশবাসী সরাসরি জানতে পারে। কেনো জিম্মি করলো, শুরু হয় শাকিবের গ্রামের গল্প। প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশা- হতাশার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এর মাঝে উঠে আসে, বেকারত্ব, মামা-চাচার জোর না থাকলে চাকরি না পাওয়ার চিত্র।  এই সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনীতিবীদ, প্রশাসন, টিভি চ্যানেল ও বড় ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধাবাদিশ্রেনি সিন্ডিকেট করে সব কিছু নিজেদের দখলে রাখে, বঞ্চিত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। এই হল তাণ্ডবের গল্প। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু মাত্র। 

সিনেমার শেষের দিকে একবার মনে হতে পারে গল্প শেষ, কিন্তু নিশোর আগমন বাড়তি টুইস্ট যোগ করে। তান্ডবের সিক্যুয়ালে শাকিব, নিশোর লড়াই বেশ জমজমাট হবে, এমন ইংগিত দেওয়া হয়েছে এতে। গল্পে সাবিলা নূরের ট্রাজেডি খুব একটা যুক্ত সঙ্গত ছিল না। পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো। গল্পে ইমপেক্ট পড়ে নাই সিয়ামের ক্যামিও চরিত্র। তবে সিনেমা তার  চরিত্রে সিয়াম অসাধারণ অভিনয় করেছে। অনেক তারকার ভীড়ে তান্ডবের সব আলো কেড়ে নিয়ে একাই জ্বলজ্বল করছেন শাকিব খান।  

চেনা চেনা লাগে: ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিনেমা তাণ্ডব। গল্পে থ্রিল আছে তবে ইউনিক না। থ্রিলগুলো খানিকটা ধার করা বলা যায়। কারো কারো মনে হতে পারে,  বহু সিনেমার বহু দৃশ্যের সুষম মিশ্রণ। দৃশ্যটি দেখলে, চরিত্রের ডিটেইলটা চেনা চেনা লাগতে পারে। বিশেষ করে গল্পের শুরুতে সবাই মুখোশ পড়ে আসে। এটি বহুল প্রচারিত দৃশ্য কিন্তু ভালো লাগবে। গল্পে শাকিব খান মুখোশ পড়ে যে ভাবে হাত দিয়ে উড়ার মতো করে আসে, এই দৃশ্যও দর্শকদের আনন্দিত করেছে, সিনেমা হলে উল্লাস করেছে। তবে গল্পাংশ, চরিত্রায়ণ যেখান থেকেই মিল থাকুক না কেনো, সব মিলিয়ে সিনেমাটি দেখতে দারুণ লাগবে।

গান: তিনটি গানের মধ্যে “লিচুর বাগান” গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের বিশেষ দিক হলো, বাংলা লোকগানের আধুনিক মিউজিক আয়োজন। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ধরণের গান কোক স্টুডিও বাংলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এই গান। যদিও গানটি মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব ভালো ছিল। একটি টাইটেল ট্রাক ছিল, সেই গানের শব্দগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। রোমান্টিক গানটা  শ্রুতিমধুর ছিল।

অভিনয় ও চরিত্রায়ণ: শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছেন। একটা গ্রামের ছেলে আরেকটা গ্যাংস্টার। দুইটা কন্ঠ দুই রকম ছিল। বডি ল্যাগুয়েজ, হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণে ভিন্নতা ছিল। গ্যাংস্টারে খষখষে কন্ঠ হওয়াতে চরিত্রের মধ্যে ডায়মেনশন এসেছে। শাকিব দিন দিন অভিনয়ে গড হয়ে উঠছে যেনো। সাবিলা নূর এই চরিত্রের জন্য খুবই মানানসই। এক ঝাঁক তারকা অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। সবাই চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছেন। তবে আলাদা করে বলতে হয় জয়া আহসানের কথা। জয়া ঠিকই নিজের চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে, এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কল্পনা করার সুযোগ ছিল না। আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, নাঈম, সালাউদ্দীন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, সাইফুল জার্নাল, রোজী সিদ্দিকী নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ। যদিও কারো কারো চরিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি ঠিক মতো।  

সেট, লাইট, কস্টিউম: তান্ডবের সেট লাইট দারুণ। দৃশ্যে আয়োজন, আলোর ব্যবহার খুবই মানানসই। টিভি চ্যানেলের সেট বিশ্বাসযোগ্য ছিল। চরিত্রানুযায়ী পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব, জয়া, সাবিলার পোশাক সুন্দর লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রের পোশাকও ছিল দারুণ।  

আবহ সঙ্গীত, সংলাপ: সংলাপ দারুণ। কিছু কিছু গালি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। গল্পের সাথে গালিগুলো যথাযথ ভাবেই মানিয়ে গেছে, তাই অশ্লীল লাগে নাই। আবহ সঙ্গীত মনে দাগ না কাটলেও খারাপ লাগে নাই। গল্পের মুড বুঝেই আবহ সঙ্গীত এগিয়ে গেছে। সংলাপে যখন দেশের কথা বলে, তখন বুকিশ লাগে নাই, শুনতে ভালো লেগেছে।

নির্মাণ: আধুনিক নির্মাণের সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। শট ডিজাইন, ট্যাকিং, ক্লোজ আপের ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পরিচালক। মুভমেন্ট শটগুলো গল্পকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। জনবহুল বড় বড় দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক তুলে আনা গেছে। 

সবশেষে: তাণ্ডব একটি গ্যাংস্টার মুভি। কতগুলো অসৎ লোকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ধরণের মুভি গরম গরম দেখতে ভালো লাগে, বিনোদন পাওয়া যায়, সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল পাওয়া যায় কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোন ইমপেক্ট পড়ে না। শেষ কথা হলো, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সিনেমা সোনালী অতীত পেরিয়ে এখন ডায়মন্ড যুগে প্রবেশ করেছে। তাণ্ডব  হলো সেই ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট।   

লেখক: লেখক ও নাট্যকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ