১৮ মার্চ পৃথিবীতে অবতরণের পরপরই সুনিতা উইলিয়ামস ও ব্যারি উইলমোরকে শারীরিক পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর নভোচারীদের শারীরিক অনেক পরিবর্তন হয় এবং পৃথিবীতে মানিয়ে নিতে লেগে যায় কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস, এমনকি বছর পর্যন্ত। নভোচারীরা মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে থাকার পর পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভেতর আসার পর বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন। এর মধ্যে হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু, দৃষ্টি, রক্তচাপ ও হাড়ের সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়। সবার আগে হয় শারীরিক ভারসাম্য রক্ষার সমস্যা ও বমিভাব। কানের ভেস্টিবুলার সিস্টেমের রিঅ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য এমন সমস্যা হয়।

হাড় ও পেশির ক্ষয়জনিত ক্ষতি: মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকার কারণে নভোচারীরা ভেসে ভেসে চলাফেরা করেন। তাই হাড় ও পেশির কাজ একেবারেই কমে যায়। এতে হয় মাসল অ্যাট্রফি বা পেশি শুকিয়ে যায় এবং ক্ষয়ে যায় হাড়। হাড় ভঙুরও হয়ে পড়ে। যদিও নভোযানে তাঁদের প্রতিদিন প্রায় দুই ঘণ্টা কার্ডিও ও রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিংয়ের মতো ব্যায়াম করতে হয়, তবুও মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে ফেরার পর তাঁদের নিজেদের শরীরকেই ভারী মনে হতে থাকে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: দীর্ঘদিন জীবাণুমুক্ত পরিবেশে থাকার পর হঠাৎ পৃথিবীতে আসার পর নভোচারীদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তাঁরা সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হন।

আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের আগেই কি শরীর বিশেষ কিছু জানান দেয়২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: দীর্ঘদিন জীবাণুমুক্ত পরিবেশে থাকার পর হঠাৎ পৃথিবীতে আসার পর নভোচারীদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তাঁরা সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হন।

চোখে ঝাপসা দেখা: মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে থাকার ফলে নভোচারীদের শরীরের অন্যান্য জায়গা থেকে তরল পদার্থ মাথা, মুখ বা শরীরের ওপরের অংশে চলে আসে। এতে হাত-পা চিকন হয় ও মুখ ফুলে যায়, সঙ্গে চোখের অপটিক নার্ভ ফুলে রেটিনায় চাপ দেয় ও চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। তরল জমে মস্তিষ্কের গঠন ও আয়তনেরও পরিবর্তন আসে, যা স্পেসফ্লাইট আ্যাসোসিয়েটেড নিউরোঅকুলার সিনড্রোম নামে পরিচিত।

হৃৎপিণ্ডে সমস্যা: মহাকাশে হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির কাজ অনেকটা কমে যায়। অলস থাকতে থাকতে এসব অঙ্গ অ্যাট্রফি বা স্টিফ হয়ে যায়, যা এজিং প্রসেস বা বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া হৃদস্পন্দনও এলোমেলো হয়ে যায়।

আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ‍্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২ ঘণ্টা আগে

বেবি ফিট: নভোচারীদের মহাকাশ বা নভোযানে অনেকটা সময় ভেসে থাকতে হয়। সেখানে তাঁদের হাঁটতে হয় না। ফলে তাঁদের পায়ের গঠন শিশুদের মতো নরম ও কোমল হয়ে যায়। একে বলে ‘বেবি ফিট’। ফলে পরবর্তী সময়ে তাঁদের পা আর শরীরের ভার নিতে পারে না বা নিতে সময় নেয়। হাঁটতে গেলে পায়ে তীব্র ব্যথা হয়। তাই সুনিতা ও ব্যারিকে একটা লম্বা সময় হুইলচেয়ারে থাকতে হতে পারে।

উচ্চতায় পরিবর্তন: মহাকাশে নভোচারীদের উচ্চতা ১-২ ইঞ্চি বেড়ে যায়, যা পৃথিবীতে আসার পর আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এ কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।

স্কিন র‌্যাশ: নাসার গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীরা র‌্যাশ বা ফুসকুঁড়িসহ বিভিন্ন রকম ত্বকের সমস্যায় ভোগেন।

ক্যানসারের ঝুঁকি: কিন্তু সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এতে ক্যানসারের আশঙ্কাও থাকে। দীর্ঘ সময় মহাজাগতিক তেজস্ক্রিয়তার ফলে ডিএনএতে পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

এত কিছুর পরও মহাকাশ ভ্রমণ একটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। এক বিশাল মহাকাশে নভোযানে বসে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখতে পাওয়া একটা ভাগ্যের বিষয় নিঃসন্দেহে।

ডা.

আফলাতুন আকতার জাহান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা

আরও পড়ুনহার্ট সুস্থ রাখতে কী খাবেন২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ