সুনিতা ও ব্যারি উইলমোর এখন কী কী শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে পারেন
Published: 24th, March 2025 GMT
১৮ মার্চ পৃথিবীতে অবতরণের পরপরই সুনিতা উইলিয়ামস ও ব্যারি উইলমোরকে শারীরিক পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর নভোচারীদের শারীরিক অনেক পরিবর্তন হয় এবং পৃথিবীতে মানিয়ে নিতে লেগে যায় কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস, এমনকি বছর পর্যন্ত। নভোচারীরা মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে থাকার পর পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভেতর আসার পর বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন। এর মধ্যে হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু, দৃষ্টি, রক্তচাপ ও হাড়ের সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়। সবার আগে হয় শারীরিক ভারসাম্য রক্ষার সমস্যা ও বমিভাব। কানের ভেস্টিবুলার সিস্টেমের রিঅ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য এমন সমস্যা হয়।
হাড় ও পেশির ক্ষয়জনিত ক্ষতি: মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকার কারণে নভোচারীরা ভেসে ভেসে চলাফেরা করেন। তাই হাড় ও পেশির কাজ একেবারেই কমে যায়। এতে হয় মাসল অ্যাট্রফি বা পেশি শুকিয়ে যায় এবং ক্ষয়ে যায় হাড়। হাড় ভঙুরও হয়ে পড়ে। যদিও নভোযানে তাঁদের প্রতিদিন প্রায় দুই ঘণ্টা কার্ডিও ও রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিংয়ের মতো ব্যায়াম করতে হয়, তবুও মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে ফেরার পর তাঁদের নিজেদের শরীরকেই ভারী মনে হতে থাকে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: দীর্ঘদিন জীবাণুমুক্ত পরিবেশে থাকার পর হঠাৎ পৃথিবীতে আসার পর নভোচারীদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তাঁরা সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের আগেই কি শরীর বিশেষ কিছু জানান দেয়২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: দীর্ঘদিন জীবাণুমুক্ত পরিবেশে থাকার পর হঠাৎ পৃথিবীতে আসার পর নভোচারীদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তাঁরা সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
চোখে ঝাপসা দেখা: মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে থাকার ফলে নভোচারীদের শরীরের অন্যান্য জায়গা থেকে তরল পদার্থ মাথা, মুখ বা শরীরের ওপরের অংশে চলে আসে। এতে হাত-পা চিকন হয় ও মুখ ফুলে যায়, সঙ্গে চোখের অপটিক নার্ভ ফুলে রেটিনায় চাপ দেয় ও চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। তরল জমে মস্তিষ্কের গঠন ও আয়তনেরও পরিবর্তন আসে, যা স্পেসফ্লাইট আ্যাসোসিয়েটেড নিউরোঅকুলার সিনড্রোম নামে পরিচিত।
হৃৎপিণ্ডে সমস্যা: মহাকাশে হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির কাজ অনেকটা কমে যায়। অলস থাকতে থাকতে এসব অঙ্গ অ্যাট্রফি বা স্টিফ হয়ে যায়, যা এজিং প্রসেস বা বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া হৃদস্পন্দনও এলোমেলো হয়ে যায়।
আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২ ঘণ্টা আগেবেবি ফিট: নভোচারীদের মহাকাশ বা নভোযানে অনেকটা সময় ভেসে থাকতে হয়। সেখানে তাঁদের হাঁটতে হয় না। ফলে তাঁদের পায়ের গঠন শিশুদের মতো নরম ও কোমল হয়ে যায়। একে বলে ‘বেবি ফিট’। ফলে পরবর্তী সময়ে তাঁদের পা আর শরীরের ভার নিতে পারে না বা নিতে সময় নেয়। হাঁটতে গেলে পায়ে তীব্র ব্যথা হয়। তাই সুনিতা ও ব্যারিকে একটা লম্বা সময় হুইলচেয়ারে থাকতে হতে পারে।
উচ্চতায় পরিবর্তন: মহাকাশে নভোচারীদের উচ্চতা ১-২ ইঞ্চি বেড়ে যায়, যা পৃথিবীতে আসার পর আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এ কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
স্কিন র্যাশ: নাসার গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীরা র্যাশ বা ফুসকুঁড়িসহ বিভিন্ন রকম ত্বকের সমস্যায় ভোগেন।
ক্যানসারের ঝুঁকি: কিন্তু সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এতে ক্যানসারের আশঙ্কাও থাকে। দীর্ঘ সময় মহাজাগতিক তেজস্ক্রিয়তার ফলে ডিএনএতে পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এত কিছুর পরও মহাকাশ ভ্রমণ একটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। এক বিশাল মহাকাশে নভোযানে বসে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখতে পাওয়া একটা ভাগ্যের বিষয় নিঃসন্দেহে।
ডা.
আফলাতুন আকতার জাহান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত ৩, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।