বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের ঘটনায় করা এক মামলায় আসামি জড়িত নয় বলে হলফনামা (অ্যাফিডেভিট) দেন বাদী। পরে নিজে আদালতে হাজির হয়ে জামিনে আপত্তি নেই জানান। আসামি করেও আবার জামিন চাওয়ায় আদালত কারণ জানতে চান। তবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বাদী। পরে বাদীকে হাজতখানায় পাঠিয়ে দেন আদালত। পাঁচ ঘণ্টা হাজতবাসের পর মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান বাদী তছলিমা আক্তার। আজ সোমবার চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, হাটহাজারীর একটি মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আবুল মনসুর ও মো.

হাসানের জামিনের আবেদন করা হয় মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। কয়েক মাস আগে এই দুজনসহ ৩১ জন আসামি জড়িত নন দাবি করে হলফনামা দিন বাদী তসলিমা আক্তার।

আসামি আবুল মনসুর হাটহাজারী ধলই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে ধরতে গিয়ে পুলিশ বাধার সম্মুখীন হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। পরদিন মনসুরকে হাটহাজারী থানার ৪ আগস্টের একটি মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা রয়েছে।

আবুল মনসুর ও মো. হাসান গত ৫ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জামিন শুনানির সময় আসামিদের জামিনে আপত্তি নেই জানান বাদী। তখন বিচারক বাদীর কাছে জানতে চান, কেন মামলা করলেন, আবার হলফনামা দিলেন ৩১ আসামির নামে। এখন জামিনে আপত্তি নেই জানালেন। বাদী কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে বিচারক বাদীকে হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

সরকারি কৌঁসুলি আরও বলেন, বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা হাজতবাসের পর বাদী ভবিষ্যতে আর এই ধরনের কাজ করবেন না বলে আদালতে লিখিত মুচলেকা দেন। পরে আদালত তাঁকে ছেড়ে দেন।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ২১৯টি। গুলিতে মারা যান ১০ জন। আহত হন অন্তত পাঁচ শ বেশি। শুরু থেকে এসব মামলায় বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মনস র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই আন্দোলনে হামলা মামলার আসামিও হলেন বাদী

গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হামলার অভিযোগে করা একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁকে। তিনিই আবার ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। তাঁর নাম কফিল উদ্দিন। পুলিশ জানায়, অস্ত্র, মাদক আইনে তিনটি মামলা রয়েছে কফিলের বিরুদ্ধে।

শুধু কফিল নন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হামলার অভিযোগে করা মামলার অন্তত ২০ জন বাদীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। নানা ত্রুটিতে ভরা তাঁদের দায়ের করা মামলার এজাহার। অনেক আসামিকে চেনেন না স্বয়ং বাদী। মামলা থেকে বাদ যাননি চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা লোকজনও।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ১৪৮টি। এসব মামলায় ঢালাও আসামি করার অভিযোগ ওঠে শুরু থেকেই। তদন্ত চলা অবস্থায় একের পর এক আসামির নাম বাদ দিতে বাদীরা আদালতে আবেদন শুরু করেন। হলফনামা দিয়ে বাদীরা বলছেন ‘ভুলবশত’ আসামি করা হয়েছে। আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৪০ মামলা থেকে ৬৭৫ জন আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে গেছেন বাদীরা। এ জন্য তাঁরা ৩৫৪টি আবেদন ও হলফনামা দিয়েছেন।

কফিল উদ্দিন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপঅর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরীর অনুসারী। গত বছরের ১০ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় ২৭৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন মো. রাইয়ান নামের এক ছাত্র। সেখানে কফিলকে ২৩ নম্বর আসামি করা হয়।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামে হামলা, হামলার পরিকল্পনা ও হামলার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে ১৯ নভেম্বর মামলা করেন সেই কফিল উদ্দিন। সেখানে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী রাইয়ানকে আসামি করেন। কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছেন। কোনো সুবিধার জন্য মামলা করেননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিতে আহত হওয়ার পর মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। ওই ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ ৭০০ জনের বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর মামলা হয়েছে। তবে যিনি এই মামলার বাদী তাঁর নিজের বিরুদ্ধেই মাদক, মারামারি, এবং পরিবেশ আইনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে কমপক্ষে পাঁচটি মামলা রয়েছে। নিহত হৃদয় চন্দ্র ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না বাদী আজিজুল হকের। হৃদয় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রতন চন্দ্র তরুয়া ও অর্চনা রানীর ছেলে।

জুলাই আন্দোলনের সময় অস্ত্র হাতে হামলাকারীরা। চট্টগ্রামের আসকারদীঘির পাড়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই আন্দোলনে হামলা মামলার আসামিও হলেন বাদী