ঘাড়ে গ্ল্যান্ড টিবি হলে কীভাবে বোঝা যায়, চিকিৎসা কী
Published: 24th, March 2025 GMT
১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ জার্মান চিকিৎসক ও অণুজীববিজ্ঞানী ডা. রবার্ট কচ আবিষ্কার করেন যক্ষ্মা বা টিবি রোগের জীবাণু ‘মাইকোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস’। এই জীবাণু আবিষ্কারের ১০০ বছর পর, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, জীবাণু আবিষ্কারের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে এবং যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের এই দিনে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস।
এবার, অর্থাৎ ২০২৫ সালে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের স্লোগান হলো ‘হ্যাঁ! আমরা টিবি নিঃশেষ করতে পারি! আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, পদক্ষেপ নিই এবং আমাদের প্রতিশ্রুতি নবায়ন করি’।
আরও পড়ুননারীর জন্য যক্ষ্মা কেন বাড়তি হুমকি২৪ মার্চ ২০২২ফুসফুসে যক্ষ্মা হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি—৮৫ শতাংশ। তাই জনমনে ধারণা, যক্ষ্মা মানেই ফুসফুসের রোগ। আদতে তা নয়। দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের শরীরে এমন কোনো অঙ্গ নেই, যেখানে টিবি রোগ হয় না।
গ্ল্যান্ড টিবি কী, লক্ষণই-বা কীরোগীর ঘাড়ে বা গলার চারপাশে কয়েক দিন ধরে ফুলে যাওয়া গোটা, যা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে; সঙ্গে সন্ধ্যার পর জ্বর, ওজন কমে যাওয়া; হাত দিলে গোটাগুলো গরম লাগা—এসবই অন্যতম লক্ষণ। আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এই গুটি বা লসিকাগ্রন্থি (লিম্ফ নোড) থাকে। ঘাড়ের দুই পাশে আছে তিন শর মতো লিম্ফ নোড। এসবের মূল কাজ রক্ত পরিষ্কার রাখা এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করা। যক্ষ্মার কারণে যাঁদের ঘাড়ের লসিকাগ্রন্থি ফোলে, তাঁদের গুটিগুলোতে ব্যথা থাকে না। বরং একটার সঙ্গে আরেকটা দলা পাকিয়ে থাকে। কারও কারও গুটি ফেটে রস (ডিসচার্জিং সাইনাস) বের হয়, অর্থাৎ কখনো কখনো নোডগুলো পেকে ফেটে যায়।
লসিকাগ্রন্থি ফোলা নিয়ে আসা রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ নিরূপণের জন্য সাধারণ রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্ত গ্রন্থি থেকে সুচের মাধ্যমে কোষকলা নিয়ে এফএনএসি নামক সাইটোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়, যার মাধ্যমে সহজে গ্ল্যান্ড টিবি নির্ণয় করা সম্ভব। অনেক সময় ক্ষেত্রবিশেষে বায়োপসি লাগতে পারে।
আরও পড়ুনবোন টিবি বা হাড়ে যক্ষ্মা হলে বুঝবেন কীভাবে২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪গ্ল্যান্ড টিবির চিকিৎসাঘাড়ে বা গলার চারপাশের লিম্ফ নোড থেকে টিবি রোগ ধরা পড়লে কী করা হয়? গ্ল্যান্ড টিবির ক্ষেত্রে রোগীর ওজন অনুযায়ী ৬-৯ মাস, এমনকি ১ বছর পর্যন্ত খেতে হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, গ্ল্যান্ড টিবিতে আক্রান্ত রোগীর ফোড়া হলে অবশ্যই অস্ত্রোপচার করে তা কেটে ফেলতে হবে। কারণ, পুঁজ থাকলে টিবির ওষুধ কাজ করবে না। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলে রাখা দরকার, চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে আক্রান্ত গ্রন্থি হঠাৎ আরেকটু বড় হয়ে যেতে পারে বা নতুন করে কোনো গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। টিবির ওষুধ চলাকালে পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া প্রয়োজন। ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে, যেমন জন্ডিসের ভাব দেখা দিলে, চোখে ঝাপসা দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসককে জানানো দরকার। রোগী যেন কখনোই নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ না করেন।
দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই রোগের লক্ষণ গোপন করে যান। মানুষকে ব্যাপকভাবে জানানো দরকার যে যক্ষ্মার চিকিৎসার সুযোগ আছে বিনা মূল্যে। একসময় বলা হতো, ‘যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা’। এরপর চিকিৎসাবিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে এই ধারণা বদলে গেছে অনেকাংশে। এখন বলা হয়, ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই, এই কথার ভিত্তি নাই’।
ডা.
মো. আব্দুল হাফিজ শাফী, এফসিপিএস (ইএনটি); নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন; আবাসিক সার্জন (ইএনটি), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬: সূচি ও ভেন্যু ঘোষণা
নারী ক্রিকেটের বৈশ্বিক মঞ্চে আবারও আলো ছড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে ইংল্যান্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এবং ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) যৌথভাবে ঘোষণা করেছে ২০২৬ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়সূচি ও ভেন্যুর তালিকা। ১২ জুন শুরু হয়ে এই ক্রিকেট উৎসব চলবে ৫ জুলাই পর্যন্ত, যার সমাপ্তি ঘটবে ঐতিহ্যবাহী লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে জমকালো ফাইনালের মাধ্যমে।
এই আসরে প্রথমবারের মতো ১২টি দল অংশ নিচ্ছে, যারা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মোট ৩৩টি ম্যাচে। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ২৪ দিনের রোমাঞ্চকর এক প্রতিযোগিতা অপেক্ষা করছে।
টুর্নামেন্টের সূচি উন্মোচনের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় লর্ডসে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ, ইসিবি প্রধান রিচার্ড গুল্ড, ইংল্যান্ড নারী দলের কোচ চার্লট এডওয়ার্ডস এবং বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার।
বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে সাতটি ঐতিহাসিক ও আধুনিক ভেন্যুতে— লর্ডস (লন্ডন), ওল্ড ট্রাফোর্ড (ম্যানচেস্টার), হেডিংলি (লিডস), এজবাস্টন (বার্মিংহাম), হ্যাম্পশায়ার বোল (সাউদাম্পটন), দ্য ওভাল (লন্ডন) এবং ব্রিস্টল।
আরো পড়ুন:
স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সুপার সিক্স অনুর্ধ্ব-১৯ মেয়েরা
অস্ট্রেলিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েও বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙা হার
আগামী আসরে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল: স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। বাকি চারটি দল আসবে কোয়ালিফায়ার পর্ব পেরিয়ে, যেখানে বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দলকে লড়াই করতে হবে মূলপর্বে জায়গা পাওয়ার জন্য।
আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এক বার্তায় জানান, “২০১৭ সালে নারী ক্রিকেট ইতিহাসে যে অধ্যায় লর্ডসে রচিত হয়েছিল, এবার আমরা সেই আবহে ফিরে যেতে চাই। ২০২৮ সালের অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির দিকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
ইসিবি প্রধান রিচার্ড গুল্ড বলেন, “আমরা গর্বিত যে বিশ্বের সেরা কয়েকটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারছি। নারী ক্রিকেটকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর লর্ডসে ফাইনাল আয়োজন—এটা প্রতিটি ক্রিকেটারের স্বপ্নপূরণের এক সম্ভাবনা।”
ঢাকা/আমিনুল