গ্রাহকের মাপজোখ নিয়ে সুনিপুণ হাতে কাপড় কাটছেন কাটিং মাস্টার। কাটা টুকরো সেলাই করে পছন্দের পোশাক তৈরি করছেন কারিগররা। কেউবা করছেন ইস্ত্রি। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এমনই ব্যস্ততা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার দর্জিপাড়ায়। গতকাল সোমবার দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি, গণমোড় ও পাবলিক লাইব্রেরি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
আসন্ন ঈদ ঘিরে খুব সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন দর্জিরা। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। মাস্টার ও কারিগরদের এমন ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।
কথা হয় নিউ ঢাকা টেইলার্সের মাস্টার অমল চন্দ্র শর্মার সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, প্রথম দিকে তেমন কাজ ছিল না। ১০ রোজার পর থেকে ভিড় বেড়েছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক অর্ডার জমা পড়েছে। প্রতিটি থ্রিপিস ও পাঞ্জাবি তৈরিতে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। প্রতিটি শার্টে ৪০০, আর প্যান্ট তৈরিতে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, আগের মতো আর কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না এ কাজে।
১১ মাস পর কাজের চাপ বেড়েছে। চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। হেঁসে হেঁসে কথাগুলো বলেন নিউ ঢাকা টেইলার্সের কারিগর কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করছি। দিনে ৪ থেকে ৬টি শার্ট (জামা) বা প্যান্ট তৈরি করা যাচ্ছে।’ তাঁর ভাষ্য, রমজান চলে গেলেই কাজ কমে যাবে। তখন অনেক দিন একটাও কাজ থাকে না। অনেকেই দর্জির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।
বাজারে তুলনামূলক স্বল্প মূল্যের তৈরি পোশাকে সয়লাব। দর্জির মজুরির টাকায় বস্ত্রালয়ে পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। সে জন্য দিনে দিনে পোশাক তৈরিতে আগ্রহ কমছে মানুষের। রমজান ব্যতীত অন্য সময় দর্জিদের তেমন একটা কাজ থাকে না। আবার দর্জির কাজ শিখতে সময় লাগে বেশি। এসব কারণে এ কাজে নতুন লোক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সংসারের খরচ মেটাতে দর্জির কাজ ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন কেউ কেউ। এসব তথ্য জানিয়েছেন কাটিং মাস্টার ও কারিগররা।
শুধু শহর নয়, গ্রাম-গঞ্জের দর্জিপাড়ায়ও ব্যস্ততা বেড়েছে। কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রার জয় বাংলা বাজার, চৌরঙ্গী, পান্টি, চাপড়া, বাগুলাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে কারিগরদের ব্যস্ততা।
দর্জিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কোনো উৎসব বা ঈদে মানুষ সাধারণত দুই ধরনের পোশাক পছন্দ করে। একটি হলো তৈরি পোশাক, অন্যটি নিজের ইচ্ছে মতো ডিজাইন ও রুচিশীল পিস বা সিট কাপড় কিনে দর্জি দিয়ে বানানো পোশাক।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় দর্জিপাড়ায় সেকালের খটখট শব্দ আর শোনা যায় না। ১০-১২ বছর আগে কুমারখালী শহরে ৮-১০টি দর্জির দোকানে কাজ করতেন ৪০ থেকে ৫০ জন দর্জি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই শহরে দোকান বেড়ে হয়েছে ১৫ থেকে ১৮টি। কিন্তু দোকান বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি দর্জির সংখ্যা। বর্তমানে কাজ করছেন ৪৫ থেকে ৬০ জন দর্জি। এ বছর প্রতিটি প্যান্ট তৈরির মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা, শার্ট তৈরিতে ৪০০-৪৫০, পাঞ্জাবিতে ৫০০-৫৫০ এবং থ্রিপিস ও টুপিসের মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা।
৪৭ বছর ধরে পোশাক তৈরি করছেন কুমারখালী পৌরসভার গণমোড় এলাকার ঢাকা ট্রেইলার্সের কাটিং মাস্টার কমল শর্মা। তিনি জানান, পাঁচ বছর আগেও দোকানে ১২ জন কারিগর ছিলেন। এখন আছেন মাত্র তিনজন। আগের চেয়ে আয় বেড়েছে, তবে কারিগর বাড়েনি। তাঁর ভাষ্য, বছরের অন্যান্য সময় তেমন কাজ থাকে না। সে সময় কারিগরদের সংসার চলে না। তাই অনেকেই দর্জি পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ৬ মাস আগে মিজানুর রহমান নামে তাঁর এক কারিগর পেশা বদল করে ভ্যান চালাচ্ছেন।
পেশা বদল করা মিজানুর রহমান শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রামের বাসিন্দা। ফোনে তিনি বলেন, দর্জির মজুরির টাকায় এখন বাজারে ভালো পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। মানুষ আর আগের মতো পোশাক বানাতে চায় না। দর্জির কাজ করে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় হতো। তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই এখন ঋণের টাকায় ভ্যান তৈরি করে চালাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা আয় হচ্ছে।
একই এলাকার দর্জি গোলাম মোস্তফা জানান, রমজানের পরে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করেন তিনি। কখনওবা খরচ জোগাতে ঢাকায় যেতে হয় তাঁকে।
কাজ শিখতে সময় বেশি লাগা, তৈরি পোশাকের দাপট, বছরের অন্যান্য সময়ে কাজ না থাকাসহ নানা কারণে কারিগরের সংকটের কথা জানালেন কুমারখালী দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অল্প দিনে কাজ শেখানোর ব্যবস্থা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে কারিগর বাড়ানো সম্ভব হতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলামের ভাষ্য, পোশাক তৈরির প্রাচীন এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দর জ র ক জ দর জ প ড় র দর জ ক জ কর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ