Samakal:
2025-08-01@20:12:35 GMT

যক্ষ্মা হইতে রক্ষা পাইতে হইবে

Published: 24th, March 2025 GMT

যক্ষ্মা হইতে রক্ষা পাইতে হইবে

বাংলাদেশ যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে অনেক সাফল্য অর্জন করিলেও প্রাণঘাতী এই রোগ অদ্যাবধি নির্মূল করিতে পারে নাই। এহেন পরিস্থিতির মধ্যে যখন যক্ষ্মা নির্মূলে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থায়ন বন্ধ হইয়া যায় তখন নূতন উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে নূতন সরকার ক্ষমতাসীন হইবার পর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বন্ধ হইয়া গিয়াছে ইউএসএআইডির অর্থায়ন। ইহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িয়াছে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়। বন্ধ হইয়া গিয়াছে বেসরকারিভাবে পরিচালিত রোগ শনাক্তকরণ, গবেষণা ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড। হাসপাতালে মিলিতেছে না ঔষধপ্রতিরোধী যক্ষ্মার সেবা। ইহাতে যক্ষ্মার নূতন ঝুঁকিতে পড়িতে যাইতেছে বাংলাদেশ। এহেন উদ্বেগের কারণ হইল, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এখনও শনাক্তের বাহিরে ১৭ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী। এই সকল রোগী নিজেদের অজান্তেই অতি সংক্রামক যক্ষ্মার জীবাণু প্রসারে ভূমিকা রাখিতে পারেন। অন্যদিকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বন্ধের কারণে নূতন রোগী শনাক্ত কার্যক্রমও এক প্রকার বন্ধ। যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচির বাস্তবায়ন সংকট এমন সময়ে শুরু হইল যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলিতেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করিতে হইলে শনাক্তের বাহিরে থাকা রোগীদের চিহ্নিত করিয়া দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনিতে হইবে। তদুপরি মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতারও অভাব রহিয়াছে। যক্ষ্মার চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া 
যাইবার তথ্যও যখন অনেকের রোগটির বিপদ সম্পর্কে হুঁশ ফিরাইতে পারে নাই, তখন বিনামূল্যের চিকিৎসা বন্ধ হইবার পরিণাম কী হইতে পারে, উহা কল্পনা করা কঠিন নহে। 

আমরা জানি, যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছয় মাস নিয়মিত ঔষধ সেবন করিতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়মিত এবং পূর্ণ মেয়াদে ঔষধ না খাইলে যক্ষ্মার জীবাণু ওই ঔষধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়িয়া তোলে। বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের অবহেলা ও অসচেতনতায় এই ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর টিবি ক্রমবর্ধমান বলিয়া সরকারি-বেসরকারি উৎসের সকল তথ্যই বলিতেছে। বিদেশি সহায়তা বন্ধের ফলে ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী বৃদ্ধি পাইলে পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ গ্রহণ করা বিচিত্র কিছু নহে। কারণ তখন প্রচলিত ঔষধে সচেতন রোগীদেরও যক্ষ্মা নিরাময় কঠিন হইতে পারে।

শুধু উহা নহে, সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যক্ষেত্রে উহার প্রভাব ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হইতে পারে। দেশের অর্থনীতির জন্যও যে ইহা সুখকর কোনো সংবাদ নহে– এই কথাও বলা প্রয়োজন। স্বীকার করিতে হইবে, শারীরিক পুষ্টিহীনতার সহিত যক্ষ্মার একটা নিবিড় সংযোগ রহিয়াছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসও এই রোগ সম্প্রসারণের অন্যতম কারণ। এই কারণে সাধারণত সমাজের নিম্নআয়ের মানুষদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়, যাহাদের উপর শিল্প-কৃষিসহ রাষ্ট্রের প্রায় সকল উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড নির্ভরশীল। অতএব যক্ষ্মা হইতে বিশেষত শ্রমজীবী মানুষদের রক্ষার্থে কার্যকর পন্থা উদ্ভাবন জরুরি।
যদিও জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা.

জাহাঙ্গীর কবির অনেকটা অভয়দানের সুরে বলিয়াছেন, এনটিপি মূলত গ্লোবাল ফান্ডে চলে। তাই শুধু ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধে সরকারি কোনো প্রকল্পে প্রভাব পড়িবে না। তথাপি তাঁহার এই কথায় আশ্বস্ত না হইবার কারণ যথেষ্ট বিরাজমান। এমন অভিযোগ অমূলক নহে যে, প্রধানত দরিদ্ররা আক্রান্ত হয় বলিয়া এই খাতে রাষ্ট্রের নিজস্ব সম্পদ বরাদ্দে মহলবিশেষের কার্পণ্য থাকিতে পারে। তাই আমরা মনে করি, এখনই স্থগিত যক্ষ্মা নির্মূল কার্যক্রম সচল করিতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। অন্য উৎস হইতে সহায়তা পাইতে হইলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনই কার্যক্রম আরম্ভ করিতে হইবে। জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা সমাধানে সরকার, তৎসহিত বেসরকারি খাতকেও অগ্রসর হইতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে, যক্ষ্মা 
নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সেবা জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাইবার বিষয়ও 
নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ