রমজান ইবাদত-বন্দেগির মাস, সংযম ও সাধনার মাস। আর আল্লাহপ্রেমীদের কাছে রমজান হলো আল্লাহার ভালোবাসা অর্জনের মাস। কেননা মুমিন তাঁর জীবনে যত ইবাদত করে, যত ভালো কাজ করে সব কিছুর লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জন করা। এজন্য মুমিন জায়নামাজে যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়ায় তখন ঘোষণা করে ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুখি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সব কিছু আল্লাহর জন্য। আর পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মুমিন তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৫)
আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেওয়া, আল্লাহর জন্য অন্য সব কিছু বিসর্জন দেওয়া, পার্থিব জীবনের বিপরীতে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কোনো সন্দেহ নেই আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি বান্দার জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। বান্দার যাবতীয় ইবাদত ও বন্দেগির মূলে থাকে আল্লাহর ভালোবাসা। আল্লাহর ভালোবাসাহীন ইবাদত নিষ্প্রাণ ও নিষ্ফল। এজন্য মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি নামাজ আদায় করো আমার স্মরণে।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১৪)
অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসার অনুরাগ অন্তরে ধারণ করে তোমরা নামাজ আদায় করো। আর বান্দা যখন আল্লাহর ভালোবাসার অনুরাগ ও স্মরণ নিয়ে নামাজ আদায় করে তখন নামাজ মিরাজে (আল্লাহর সাক্ষাতের মাধ্যম) পরিণত হয়। এ কারণেই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘নামাজ মুমিনদের জন্য মিরাজস্বরূপ।’ (মিশকাত)
আরো পড়ুন:
যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হয় এবং যারা প্রাপ্য
জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান
রমজান মাসে মুমিন দান করে, জাকাত দেয় এবং রোজাদারকে ইফতার করায়। এ সবের উদ্দেশ্যও আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন, বরং আল্লাহর ভালোবাসা যখন সম্পদের ভালোবাসা থেকে প্রবল হয়, তখনই মুমিন আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে পারে। পবিত্র কোরআনের ইরশাদ হয়েছে, ‘আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বে তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীকে আহার করায়। আর তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়।’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৮-৯)
আল্লাহর ভালোবাসা এবং সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করলেই তা ইবাদত হয়ে ওঠে এবং উদ্দেশ্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু থাকলে সেটা প্রকৃতপক্ষে কোনো ইবাদতই নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে যতক্ষণ না তোমরা ব্যয় করবে ততক্ষণ তোমরা কোনো পুণ্য লাভ করবে না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯২)
রমজানে মুমিনের সবচেয়ে বড় ইবাদত রোজা। রোজা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। শর্ত হলো তা বিশ্বাস ও সাওয়াবের আশায় আদায় করা। রোজা যখন বান্দা আল্লাহর জন্য আদায় করে তখন স্বয়ং আল্লাহ রোজার প্রতিদান হয়ে যান। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান হয়ে যাই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)
রমজান মাসে ওমরাহ করা একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। হাদিসের ভাষ্যানুসারে রমজান মাসে ওমরাহ করা রাসুলুল্লাহ (সা.
আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলছেন, ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিন্দ্রায় অতিবাহিত করে এবং তারা রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৭-১৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে তারা দান করে।’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ১৬)
রমজান মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল কোরআন তিলাওয়াত। পূর্বসূরী আলেমরা বলতেন, কোরআন তিলাওয়াত হলো আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের মতোই। তাই মুমিন যখন আল্লাহর কোরআন তিলাওয়াত করে, তখন সে তার ভালোবাসায় আপ্লুত হয়। আল্লাহর স্মরণে তাঁর হৃদয় বিগলিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের কাছে পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২)
প্রশ্ন হলো, ইবাদত কীভাবে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যম হয় এবং তা আল্লাহর প্রেমময় স্মরণে পূর্ণতা পায়? বুজুর্গ আলেমরা বলেন, আল্লাহর ভালোবাসা অন্তরে জাগ্রত হয় দুই কাজের মাধ্যমে। তা হলো, আল্লাহর পুরস্কারের আশা এবং শাস্তির ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখা এবং আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের আকাঙ্ক্ষা করা। সুরা বাকারার একটি আয়াত থেকে এমনটিই ইঙ্গিত মেলে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো এবং এটা আল্লাহ-ভীরু ছাড়া অন্যদের জন্য নিশ্চিতভাবে কঠিন। তারাই আল্লাহ-ভীরু যারা বিশ্বাস করে যে, তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে তাদের নিশ্চিতভাবে সাক্ষাৎ ঘটবে এবং তাঁর দিকেই তারা ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৫-৪৬)
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে লেখেন, ‘আল্লাহর ভালোবাসায় অন্তরের শক্তি, আত্মার খোরাক ও চোখের প্রশান্তি। সেটা এমন জীবনীশক্তি, যা থেকে যে বঞ্চিত হয় সে যেন প্রকৃতার্থেই মৃত, এটা এমন আরোগ্য যে তা হারিয়ে ফেলে তার অন্তরে বাসা বাঁধে সব ব্যাধি। আল্লাহর ভালোবাসাই ঈমান ও আমলের প্রাণসত্তা।’ (মাদারিজুস সালিকিন : ৩/৮)
আল্লাহ সবাইকে রমজানে তাঁর ভালোবাসা অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন ম স ন আল ল হ র জন য সব ক ছ স মরণ ক রআন সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার’ ও ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ইন ফিজিক্স’ প্রদানের জন্য দেশের পদার্থবিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
কোন সালের জন্য পুরস্কার —ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের গবেষণা কাজের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
পুরস্কার মল্যমান কত —১. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য পুরস্কার পাওয়া গবেষককে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।
২. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন বিজ্ঞানী বা গবেষককে নগদ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
আবেদনের শেষ তারিখ —আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে—আবেদনকারীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিন কপি আবেদনপত্র, তিন প্রস্থ জীবনবৃত্তান্ত, তিন প্রস্থ গবেষণাকর্ম এবং তিন কপি ছবি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
দরকারি তথ্য—১. জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশিত গবেষণাকর্ম পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে।
২. যৌথ গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে গবেষণা পুরস্কারের অর্থ সমান হারে বণ্টন করা হবে। এ ক্ষেত্রে সহযোগী গবেষক বা গবেষকের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে হবে।
৩. আবেদনকারী যে বছরের জন্য আবেদন করবেন পাবলিকেশন ওই বছরের হতে হবে।
৪. একই পাবলিকেশন দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য আবেদন করা যাবে না।
৫. কোন কারণে একজন প্রার্থী পুরস্কারের জন্য আবেদন করলে প্রার্থিতার স্বল্পতা বিবেচনা করে তাঁর আবেদন বিবেচনা করা হবে।
৬. পরীক্ষক তাঁর গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য সুপারিশ না করলে তাঁকে পুরস্কারের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে না।
৭. পদার্থবিজ্ঞানে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার একবার প্রাপ্ত গবেষকও পরবর্তী সময়ে আবেদন করতে পারবেন।
৮. নতুন গবেষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
৯. যদি মানসম্মত গবেষণা কাজ না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে পূর্বের পুরস্কার পাওয়া গবেষকের নতুন গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য পরীক্ষকের সুপারিশের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।
# আবেদন জমা দেওয়ার ঠিকানা: প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।