কাজ শেষ করতে পারেনি স্বাস্থ্যের সংস্কার কমিশন
Published: 25th, March 2025 GMT
স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশন কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই কমিশন নির্ধারিত সময় ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না। কমিশন সরকারের কাছে আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে।
প্রতিবেদন চূড়ান্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে কমিশনের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে গত বছরের ১৭ নভেম্বর ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিশন কাজ শেষ করতে না পারায় সরকার সময় এক মাস বাড়িয়ে ৩১ মার্চ করে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
আরও পড়ুনচিকিৎসকদের জন্য ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেস’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করবে সংস্কার কমিশন২৪ মার্চ ২০২৫একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, কমিশন কাজ শেষ করতে পারেনি। একাধিক বিষয় নিয়ে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
একজন সদস্য বলেছেন, কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ লিখেছেন ইংরেজিতে। কিন্তু পুরো প্রতিবেদন বাংলায় অনুবাদ করতে হবে, তা সম্পাদনা করতে হবে। দাপ্তরিক ভাষায় অনুবাদ করা, তা সম্পাদনা করা ও অনুবাদ হওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন সদস্যদের পড়তে দেওয়ার পর তাঁদের মতামত নিতে সময় লাগবে।
অসমর্থিত একটি সূত্র বলেছে, একটি দাতা সংস্থার অর্থায়নে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য খাত সংস্কার নিয়ে ঢাকায় গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক করে। এসব সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক থেকে উঠে আসা সংস্কার প্রস্তাব ও সুপারিশ কমিশনের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি খুব শিগগির নিজস্ব প্রতিবেদন কমিশনকে দেবে।
অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের সংস্কার প্রতিবেদন না পেলে এই আলোচনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে—এমন কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের একজন সদস্য।
আজ মঙ্গলবার কমিশনের একাধিক সদস্যের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। একজন সদস্য বলেছেন, কমিশন আগামী ১৫ এপ্রিলের আগে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে না।
আরেকজন সদস্য বলেছেন, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটিসহ নানা কারণে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশনের কাছে প্রস্তাব জমা দিল বিএনপি০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কমিশনের প্রধান এ কে আজাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনে কমিশনের সব সদস্যের স্বাক্ষর দরকার। কমিশনের কোনো কোনো সদস্য পবিত্র ওমরাহ করতে যাওয়ায় স্বাক্ষর নেওয়া বাকি আছে।
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য খাত সংস্কার: চাই সেবার উন্নয়ন, বৈষম্যের নিরসন১৯ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনস্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের আলোচনায় যা উঠে এল২১ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জ শ ষ করত ন সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
মাকিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চুক্তি বাতিলকারী দেশগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর তার সেই বার্তাটি হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দাঙ্গাবাজ দেশ, যাকে বিশ্বাস করা যায় না।
শুল্ক স্থগিতাদেশের সময় চীন ছাড়া সবদেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাম্প যে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন, সেই সময়ের মধ্যে চীনা কর্মকর্তারা বিদেশী সরকারগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, একবার এই চুক্তিগুলো কার্যকর হয়ে গেলে, তিনি চান মার্কিন মিত্ররা ‘একটি দল হিসেবে চীনের সাথে যোগাযোগ করুক’, যাতে মার্কিন পক্ষ আলোচনায় আরো বেশি সুবিধা পায়।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত মার্কিন মিত্ররা নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভর করে এবং অর্থনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের উৎসাহ রয়েছে। অবশ্য চীন আরো সমান তালে শুল্ক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের পর থেকে বেইজিং মার্কিন রপ্তানি থেকে তার অর্থনীতিকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশটিতে নিবেদিতপ্রাণ এবং সক্রিয় সৈন্য সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী রয়েছে।
শি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার সরকার ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে যে, অন্য পক্ষ, অর্থাৎ চীনকে উত্তেজনা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, চীন নিজেকে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং অন্যান্য দেশকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক উ জিনবো বলেন, “এটি কেবল চীন-মার্কিন সম্পর্কে নয়। এটি আসলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে।”
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া উ জানান, অন্যান্য সরকারেরও বুঝতে হবে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা তাদের উপকার করেছে।
তিনি বলেন, “যদি চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, তাহলে আমেরিকা কীভাবে তাদের ৯০ দিনের বিরতি দিত। চীনের উপর শুল্ক আরোপের ফলে ট্রাম্প অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ বন্ধ করার জন্য আবরণ পেয়েছেন। তাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত।”
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই সোমবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ব্লকের দেশগুলোকে ট্রাম্পের দাবি প্রতিহত করার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আপনি যদি নীরব থাকেন, আপস করেন এবং পিছু হটতে চান, তাহলে এটি কেবল বুলিকে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।”
তার এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সাবটাইটেলসহ একটি ভিডিওতে ওয়াশিংটনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গত শতাব্দীতে জাপানি রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন পদক্ষেপ তোশিবার মতো কোম্পানিগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ওয়াং ই বলেছেন, “একজন ধর্ষকের কাছে মাথা নত করা ঠিক তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিষ পান করার মতো, এটি কেবল সংকটকে আরো গভীর করে তোলে। চীন পিছু হটবে না যাতে দুর্বলদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।”
ঢাকা/শাহেদ