৬ বছর পর যেভাবে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারে ব্রাজিল
Published: 26th, March 2025 GMT
২০১৯ সালের পর আর্জেন্টিনাকে আর হারাতে পারেনি ব্রাজিল। এখন এসে সেই অধরা জয় ছিনিয়ে নিতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে গেছে তারা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া তো গোল করে আর্জেন্টিনাকে হারানোর আগাম ঘোষণাই দিয়ে রেখেছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আর্জেন্টিনাকে হারানো ব্রাজিলের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।
বিশেষ করে লিওনেল স্কালোনির অধীন একটি দল হয়ে খেলছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এ দলকে হারাতে হলে ব্রাজিলকে নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েই খেলতে হবে। পাশাপাশি রণকৌশলের দিক থেকেও দরিভাল জুনিয়রের দলকে অনেক নিখুঁত থাকতে হবে।
ব্রাজিলের বর্তমান দলটিকে চাইলে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একদিকে দলটি যেমন তারকা খেলোয়াড়ে ভরপুর, তেমনই এর আছে উদীয়মান খেলোয়াড়ও। তারকাদের মধ্যে ভিনিসিয়ুস, রাফিনিয়া ও রদ্রিগোরা বিশ্বসেরাদের মধ্যে থাকবেন।
আর তরুণদের মধ্যে বেন্তো, মুরিলো, ওয়েসলে এবং মাতেউস কুনিয়ারা আশা দেখাচ্ছেন দলটিকে। যদিও এই খেলোয়াড়দের তারকাখ্যাতি ভিনিসিয়ুস-রাফিনিয়াদের মতো নয়। কিন্তু ব্রাজিলকে জিততে হলে দুই পক্ষকেই একটি দল হয়ে খেলতে হবে। নিজেদের সমন্বয় ও বোঝাপড়া হতে হবে চমৎকার।
আরও পড়ুনআর্জেন্টিনার বিপক্ষে শেষ কবে জিতেছিল ব্রাজিল ১৯ ঘণ্টা আগেস্কালোনির আর্জেন্টিনা এখন ছন্দে থাকা দল। এমন উজ্জীবিত দলের বিপক্ষে এলোমেলো খেলে কোনোরকমে একটি গোল দিয়ে জিতে আসা সম্ভব নয়। আজ সকালে রিভার প্লেটের মাঠ মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে নামার আগে তাই নিজেদের সেরা প্রস্তুতিটুকুই নিতে হবে ব্রাজিলকে। পাশাপাশি তৈরি করতে হবে একটি কার্যকর রণকৌশলের নীলনকশাও।
পদ্ধতি
ব্রাজিল কোচ দরিভাল সাধারণত আক্রমণভাগে কখনো তিনজন বা কখনো চারজন খেলোয়াড় রেখে স্কোয়াড সাজান। ফলে বিভিন্ন সময় দলের ফরমেশনে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে, কিন্তু খেলার দর্শনগত জায়গায় কোনো পরিবর্তন হয় না। মাঠে ব্রাজিলকে সাধারণত ৪-৩-৩, ৪-২-৩-১ বা ৪-২-৪ ফরমেশন খেলতে দেখা যায়।
দরিভালের কৌশলটা হলো আক্রমণভাগে ও রক্ষণে বাড়তি খেলোয়াড় রাখা। এভাবেই মূলত প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করেন তিনি। আগামীকাল আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও একই চেষ্টা করবেন দরিভাল।
ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচ মানেই যেন উত্তাপ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ক দর ভ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।