বিএনপির দু’পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা, শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি
Published: 26th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় উপজেলা শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শহীদ মিনার এলাকার ৫০০ গজের মধ্যে জরুরি অবস্থা জারি থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার ভোর ৬টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এটি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের নবগঠিত কমিটির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ২৪ মার্চ থেকে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে যেকোনো সময় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে মিরসরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে জানমালের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসন চত্বর ও আশপাশের মধ্যে ৫০০ গজ এলাকায় ২৬ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ২৭ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এ সময় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, গণ-জমায়েত, বিক্ষোভ, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র বহনসহ পাঁচজনের অধিক ব্যক্তি একত্রে চলাচলে বা অবস্থান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপে বিভক্ত। দলীয় গ্রুপিং নিরসনে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ নুরুল আমিনের পক্ষ থেকে শাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপ থেকে গাজী নিজাম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি। একইসঙ্গে দুই গ্রুপের সমন্বয়ে মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌরসভা কমিটিও ঘোষণা করা হয়।
গত গত ১২ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের উপস্থিতিতে বিভাগীয় পুনর্গঠন কমিটির এক সভায় মিরসরাই উপজেলার তিনটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। গত সোমবার (২৪ মার্চ) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আব্দুল আউয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুল ইসলাম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ৮৩ সদস্যের উপজেলা কমিটি, মাঈনুদ্দীন চৌধুরী লিটনকে আহ্বায়ক ও জসীম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে বারইয়ারহাট পৌরসভা ও জামশেদ আলম কমিশনারকে আহ্বায়ক ও কামরুল হাছান লিটনকে সদস্যসচিব করে মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়।
কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের দুয়েকজন ছাড়া সবাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ওই কমিটির ঘোষণা পরপরই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান সমর্থিত নেতাকর্মীরা ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় কয়েক জায়গায় ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। নতুন কমিটি বাতিল করা না হলে তাদের মিরসরাইয়ে প্রতিহতের ঘোষণা দেয় নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। ফলে মিরসরাইয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, ঘোষিত কমিটি জাতীয়তাবাদী দলের কমিটি। একপেশে কোনো কমিটি হয় না। যারা আজ ক্ষুব্ধ তারা দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে আসছে। যা দলীয় উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অবগত।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, আমাদের দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করলে কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। আগের কমিটি দায়িত্ব পালনে কিছুটা ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুনর্গঠন কমিটির পরামর্শে সে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছি। নতুন কমিটিতে অতীতের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করে পদ দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ১৪৪ ধ র জ র ১৪৪ ধ র ম রসর ই ব এনপ দ ই গ র প র স ঘর ষ ন ত কর ম ই উপজ ল ম রসর ই ব এনপ র ন কম ট র কম ট কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, থানায় অভিযোগ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় কয়েক বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন তার স্বজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীর নানা আজগর আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়ভাবে বখাটে হিসেবে পরিচিত আল-আমিন নামে এক যুবক ও তার সহযোগীরা। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আজগর আলী রায়দক্ষিণ গ্রামে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। অভিযুক্ত আল-আমিন একই গ্রামের মৃত কালু প্রামাণিকের ছেলে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, যে শিশুটিকে উত্ত্যক্ত করত বখাটেরা, তার মা পাঁচ বছর আগে মারা যান। মেয়েটি নানা আজগর আলীর বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে শিশুটিকে প্রায় উত্ত্যক্ত এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করত আল-আমিন। এ নিয়ে আজগর আলীসহ মেয়েটির স্বজন বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। গত সোমবার মেয়েটির নানা আজগর আলী সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার অভিযোগটি তদন্ত করার পর তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় আল-আমিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আল-আমিন চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে সহযোগীদের নিয়ে আজগর আলীর চায়ের দোকানে যায়। তারা বৃদ্ধ আজগর আলীকে দোকান থেকে বের করে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাটিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা চলে গেলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আজগর আলীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আজগর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজগর আলীর শ্যালক নজরুল ইসলাম জানান, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত বখাটে আল-আমিন।
সিংগাইর থানার ওসি তৌফিক আজম বলেন, নিহতের বড় ছেলে আইয়ুব খান বুধবার আল-আমিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।