ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা খাতের কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত করবে। ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব কর্মসূচিতে কর্মরত অনেক কর্মী ইতিমধ্যে বেকার হয়ে গেছেন কিংবা অনেকে শিগগিরই বেকার হয়ে যাবেন।

২৪ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ার কারণে যক্ষ্মা শনাক্তের কাজ ঠিকমতো চলছে না। যক্ষ্মা রোগীর ১৭ শতাংশ রয়ে গেছেন অশনাক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যে সাতটি দেশে একই সঙ্গে সাধারণ যক্ষ্মা ও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, বাংলাদেশ এর অন্যতম। দীর্ঘদিন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া উদ্বেগজনক।

২০২৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর যক্ষ্মায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর তারা সারা দেশে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত করতে পেরেছে। এর অর্থ সন্দেহভাজন ৬৫ হাজার ৩৭৬ জন বা ১৭ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে। এসব রোগী চিকিৎসাসেবা না নেওয়ায় অন্যরাও সংক্রমিত হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই দশক ধরে ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশও (আইসিডিডিআরবি) সরকারি কর্মসূচিতে সহায়তা দেয়।

১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে। দেশে যেকোনো নাগরিকের জন্য যক্ষ্মা শনাক্তের পরীক্ষা, ওষুধ ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ ধরনের রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। চিকিৎসাসেবায় কোনো রকম বিচ্যুতি বা অনিয়ম হলে তাদের রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা কম।

অতীতে যক্ষ্মা নিয়ে অনেক রকম কুসংস্কার ছিল। কেউ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে পরিবারের পক্ষ থেকে সেই খবর গোপন রাখা হতো। তাঁরা মনে করতেন, যার হয় যক্ষ্মা, তার নেই রক্ষা। কিন্তু এখন যক্ষ্মাকে অনিরামেয় রোগ ভাবা হয় না। ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হলে রোগীদের সুস্থ করা যায়।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের কারণে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া না গেলেও যক্ষ্মা নিরোধ কর্মসূচি বন্ধ হবে না।

বক্ষব্যাধিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক আসিফ মাহমুদ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়বে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সরকারি অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি যক্ষ্মা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা ব্যবস্থাপনায় সরকারি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁর কথার ওপর আস্থা রেখেও আমরা বলতে চাই, পুরো কর্মসূচিটি নতুন করে সাজাতে হবে। প্রত্যেক যক্ষ্মা রোগীকে শনাক্ত করা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ বা গাফিলতির কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ