ঈদযাত্রায় রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চে যাত্রী নেওয়ার সেই চিরচেনা হাঁকডাক নেই। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে যাত্রীও। তারপরেও বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছেন লঞ্চ মালিকেরা।  অনেকেই আবার সড়ক ছেড়ে স্বস্তির নৌপথ বেছে নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, পন্টুনে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রীর কিছুটা চাপ থাকলেও বরিশাল-ঝালকাঠি-ভোলা-বরগুনা রুটের লঞ্চগুলো অনেকটাই ফাঁকা। লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে সুনসান নীরবতা। যাত্রীদের টিকিট কেনার হিড়িক নেই। অথচ বছর দুয়েক আগেও রমজানের শুরু থেকেই সরগরম থাকতো এসব কাউন্টার। স্টাফদের দম ফেলার ফুরসত যেখানে থাকতো না, সেখানে এখন যাত্রী সংকট।

লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সূত্রে জানা যায়, আগে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর ৩৫ শতাংশ নৌপথে যেতেন। পদ্মা সেতু চালু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এখন তা প্রায় ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলমুখী লঞ্চযাত্রী অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে মহাসড়ক নির্মাণ ও বিভিন্ন নদীর ওপর সেতু হওয়া এবং সদরঘাটমুখী সড়কে তীব্র যানজটের ভোগান্তির কারণে লোকজন এখন লঞ্চে তেমন একটা যাতায়াত করতে চান না। তবে পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি ও স্বস্তির যাত্রার জন্য আবার অনেকে নৌপথে চলাচল করে।

লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগে ঢাকা থেকে ৪৩টি নৌপথে ২২৫টির মতো লঞ্চ চলাচল করত। এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০টি। যাত্রী সংকট কমেছে নৌপথও। এখন রুট ৩৫টি। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলে বিভিন্ন পথে। বরিশাল, ভান্ডরিয়া ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চযাত্রী একেবারেই কমে গেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ১৮টি লঞ্চ চললেও এখন চারটিতে নেমে এসেছে। কখনো কখনো একটি লঞ্চও চলে। তবে চাঁদপুর, ভোলার চরফ্যাসন, লালমোহন ও বরগুনা রুটে লঞ্চ তেমন কমেনি।

স্থানীয় যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে সদরঘাটের চাপ কমলেও গত কয়েক দিনে যাত্রীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ঈদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে লঞ্চগুলোর রং করা হচ্ছে। যদিও আগের মতো ভিড় এবং লোকজনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। 

লঞ্চের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু ঈদের সময় ডেকের ভাড়া ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ২০০ ও ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার ৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ভাড়া না বাড়ানোর দাবি জানান লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।

সুন্দরবন লঞ্চের স্টাফ আবির হোসেন বলেন, ‘গত এক যুগ ধরে আমি লঞ্চে স্টাফ হিসেবে আছি। আগে এমন সময় এক মুহূর্তে লঞ্চ ভর্তি হয়ে যেত আর এখন যাত্রী খরা, খালি লঞ্চ ছাড়তে হয়।’ 

টিকিট বিক্রির বিষয়ে আবির আরও বলেন, ‘এখন অগ্রিম টিকিট তেমন বিক্রি হয় না। যাওয়ার উদ্দেশ্যে এলেই সহজে টিকিট পাওয়া যায়। কেবিন, সোফা কিংবা লঞ্চের ডেকের ভাড়া আগের মতোই রয়েছে।’

যুবরাজ লঞ্চে বরিশালে বাড়িতে যাওয়ার জন্য কেবিন বুক করেছেন মাহতাব লিমন। তিনি বলেন, ‘আগে সপ্তাহ খানেক আগেও লঞ্চের কেবিন পাওয়া যেত না। কিন্তু আজ ঘাটে এসে কেবিন পেয়ে গেছি। আগের মতো ভিড় নেই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে বাসেই যাতায়াত করতাম। কিন্তু ঈদের মধ্যে বাস বেপরোয়া ভাবে চালায় আবার টিকিটের দামও বেশি। তাই লঞ্চেই বাড়িতে যাচ্ছি।’

ব্যাংক কর্মকর্তা নীলা বেগম বরগুনায় বাবার বাসায় ঈদ করবেন। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সদরঘাটে এসেছেন তিনি। নীলা বেগম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান আজ থেকে ছুটি হয়ে গেছে। আজ থেকেই ভিড় কিছুটা বাড়লেও ২৭ রমজান থেকে সেটি আরও বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশা ২৭ রমজান থেকে লঞ্চের যাত্রী আরও বাড়বে। সুন্দরবন লঞ্চের ম্যানেজার মুসাব্বির বলেন, ‘বরিশালের মানুষের যাতায়াতের প্রিয় বাহন লঞ্চ। এখনও সবাই ছুটি পায়নি। ছুটি পেলে লঞ্চের যাত্রী আরও বাড়বে।’

ঈদুল ফিতরে নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বুধবার থেকে সদরঘাট হতে বরিশালে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে। যা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ফিরতি যাত্রীদের জন্য চালু থাকবে।

ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বন্দর কর্তৃপক্ষও। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) স্পষ্ট নির্দেশনা, কোনো অনিয়মে ছাড় নয়। অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই কেড়ে নেওয়া হবে লঞ্চের লাইসেন্স। এছাড়া ঈদযাত্রা ভোগান্তিমুক্ত ও নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর এবং ঘাট এলাকায় যানজট নিরসনেও নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি।

ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ মালিকরা নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটালেই তাদের লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এছাড়াও সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের রুট পারমিট বাতিল করে দেব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র পদ ম স ত প রস ত ত ঈদয ত র সদরঘ ট বর শ ল আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। ‘বিশ্বের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত এই শহরে প্রথমবার এমন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির চলতি ধারার একদম বিপরীতমুখী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান পার্টি এক ‘শ্বেতকায়, খ্রিষ্টান ও রক্ষণশীল’ আমেরিকার কথা বলছেন।

জোহরান মামদানি শ্বেতকায় নন, তিনি বাদামি রঙের দক্ষিণ এশীয়। তিনি খ্রিষ্টান নন, একজন মুসলিম। তিনি অবশ্যই রক্ষণশীল নন, তিনি খোলামেলাভাবে একজন প্রগতিশীল, যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলতে দ্বিধা করেন না।

‘মামদানি একজন ভয়ানক মানুষ’, সাবধান করে বলেছেন অ্যান্ড্রু কুমো, মঙ্গলবারের নির্বাচনে যিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী। সারা জীবন ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য থাকলেও বাছাইপর্বে পরাজিত হয়ে তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এই নির্বাচনে তিনি একজন অদৃশ্য প্রার্থী। কুমোর পক্ষ নিয়ে তিনিও এই নির্বাচনের একজন অংশগ্রহণকারী। বড় ব্যবধানে মামদানির বিজয় হলে অনেকেই তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা হিসেবেই দেখবেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা। তিনি কোনোভাবেই চান না মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হোন। তাঁর বিবেচনায় মামদানি শুধু একজন পাক্কা কমিউনিস্টই নন, রীতিমতো উন্মাদ। এমন একজনকে নির্বাচিত করা হলে তিনি নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মামদানি একজন অবৈধ অভিবাসী। তা প্রমাণিত হলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মামদানি যদি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের চলতি অভিযানে বাধা দেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি।

ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়

শুধু নিউইয়র্কে নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আরও অন্তত তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হবে আগামীকাল, যার ফলাফল ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের ব্যাপারে একটি রেফারেন্ডাম বা জনরায় হবে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচন। এই দুই রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চ পরিষদেও ভোট গ্রহণ করা হবে। উভয় রাজ্যই ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই রাজ্যেই ট্রাম্পের হার হয়, কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় তিনি অনেক ভালো ফল করেন। দেখার বিষয়, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে এই দুই রাজ্যে ট্রাম্পের জনসমর্থন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে।

এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর গেভিন ন্যুসাম নির্বাচনী ম্যাপ পরিবর্তনের অনুমতি চেয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করেছেন। আগামী বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি বড় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তা ঠেকাতেই ট্রাম্পের নির্দেশে টেক্সাসের নির্বাচনী ম্যাপ ঢেলে সাজানো হয়েছে, যার ফলে রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে আরও পাঁচটি আসন নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হবে ভাবা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘ব্লু স্টেট’ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ন্যুসামের নির্দেশে নির্বাচনী ম্যাপ বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কংগ্রেসে পাঁচটি আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এই তিনটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই ভোটারদের মনে থাকবেন ট্রাম্প, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আইনি বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক শহরে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের নামে সেনাসদস্যদের পাঠাচ্ছেন তিনি। যেসব ডেমোক্রেটিক নেতাকে শত্রু মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট দেয়নি এমন ডেমোক্রেটিক রাজ্যের কেন্দ্রীয় অনুদান বাতিল করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একাধিক সরকারি দপ্তর আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে মাদক পাচার বন্ধের নামে ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমায় সামরিক হামলা চালাচ্ছেন। আমদানি শুল্কের নামে যে বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন, তার ফলে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছে।

গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

এসব কার্যকলাপের ফলে সারা দেশে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমেছে। অধিকাংশ জনমত জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থন ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় অন্য আর কোনো প্রেসিডেন্টের জনসমর্থনে এমন ধস নামেনি।

এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প কোনো রাজ্যেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচারে আসেননি। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে সরব সমর্থনও জানাননি। এর একটা সম্ভাব্য কারণ, জয়ী হবেন এমন প্রার্থীর সমর্থন দিতেই ট্রাম্প ভালোবাসেন। আগামীকালের নির্বাচনে তেমন সম্ভাবনা কম।

এই নির্বাচন যে ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়, তার আরেক প্রমাণ নির্বাচনী প্রচারণায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অংশগ্রহণ। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জাতীয় নেতা বলতে তিনিই সবেধন নীলমণি। শনিবার নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী মাইকি শেরিলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। একই দিন ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী এবিগেইল স্প্যানবার্গারের পক্ষেও প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। উভয় রাজ্যেই ওবামা কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতির কারণেই আমেরিকা আজ এক দুঃসময়ের মুখোমুখি।

জনমতে এগিয়ে মামদানি

ওবামা মামদানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেননি। তবে তিনি যে মামদানির পাশে আছেন, সে কথাও গোপন রাখেননি। মামদানির ক্যাম্পেইন থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ওবামা নিজেই ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর (মামদানির) বিজয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেছেন, মামদানির নির্বাচনী প্রচার ‘ইম্প্রেসিভ’ বা নজরে পড়ার মতো।

কুমো ক্যাম্প থেকে অহোরাত্রি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে প্রচার সত্ত্বেও মামদানি যেসব জনমত জরিপে এগিয়ে, তার একটি বড় কারণ মাঠপর্যায়ে তাঁর এই ‘ইম্প্রেসিভ’ প্রচারণা। শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি। এতে তিনি ফল পাচ্ছেন, গত দুই সপ্তাহে মামদানির সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ১০ শতাংশের মতো কমে এসেছে। নিউইয়র্কের চলতি মেয়র নির্বাচন থেকে এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় কুমোর লাভ হয়েছে সন্দেহ নেই, তবে এখনো মামদানির সঙ্গে যে ১৬-১৭ পয়েন্টের ব্যবধান রয়েছে, তা অতিক্রম করা কার্যত অসম্ভব, এই মত অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের।

ভূমিধস পরিবর্তন

একটা বিষয় স্পষ্ট। মেয়র নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে তা মার্কিন রাজনীতিতে প্রজন্মগত ও নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করবে। ভূমিধস পরিবর্তন আসবে ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে। মধ্যপন্থী ও ডানঘেঁষা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এই দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম জনপ্রিয়। এই দলে যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, করপোরেট আমেরিকার কাছে এদের হাত-পা বাঁধা। ইসরায়েল প্রশ্নে তাদের সমর্থন এখনো আগের মতো নতজানু।

পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল প্রশ্নে এখন নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে এমন আমেরিকানের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ, যা তিন বছর আগের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ধনতন্ত্রের প্রতিও আমেরিকানদের সমর্থন নিম্নগামী। গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি খোলামেলাভাবে অভিবাসনবিরোধী, দক্ষিণপন্থী, খ্রিষ্টবাদী ও রক্ষণশীল। চলতি সপ্তাহের নতুন উদ্বাস্তু নীতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শ্বেতকায় ও ইউরোপীয় আশ্রয়প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেবে। এই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায় নাগরিকবৃন্দ, ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে যারা সে দেশের সরকারের বৈষম্যের শিকার।

এই প্রতিক্রিয়াশীল রিপাবলিকান পার্টির বিপরীতে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য ওকাসিও-কর্তেজ ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। সবাই মানেন, মামদানির মতো তরুণ ও বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।

এই সম্ভাবনার কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর কথায়, এই দেশ করপোরেট আমেরিকার নির্দেশে চলবে, না তার রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ—এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ‘যদি আমরা দ্বিতীয় পথটি বেছে নিতে চাই, করপোরেট আমেরিকার বদলে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিই, তাহলে আমাদের মামদানির পাশে দাঁড়াতে হবে।’

কোন পথ বেছে নেবে নিউইয়র্ক, মঙ্গলবারেই তা নিশ্চিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ