এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে একটি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ তার ভৌগোলিক আয়তন নয়, তার অর্থসম্পদ বা প্রাকৃতিক সম্পদ নয়; সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে দক্ষ মানবসম্পদ—তাদের সৃষ্টিশীলতা, তাদের সৃজনশীলতা এবং তাদের কর্মকুশলতা।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্রম ও উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সন্দেহ নেই; কিন্তু শুদ্ধ শ্রমশক্তি বা যেনতেন প্রকারের উদ্যোগ কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিময় করতে পারে না। তার জন্য দরকার সৃষ্টিশীল শ্রমশক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন উদ্যোগ। অন্য কথায়, শুদ্ধ শ্রমশক্তিকে মানবসম্পদ হতে হবে এবং উদ্যোগকে হতে হবে সৃজনশীল। এ কথা বাংলাদেশের মতো একটি প্রাকৃতিক সম্পদ-অপ্রতুল ও জনবহুল দেশের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য।

কী কী পন্থায় একটি দেশের মানবসম্পদ সে দেশের উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারে?

মূলত তিনটি উপায়ে—এক.

উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় শ্রমশক্তিই একমাত্র উপকরণ নয়। কিন্তু মানবসম্পদের গুরুত্ব হচ্ছে সেখানেই যে উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় অন্যান্য উপকরণকে সার্থক ও কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে মানবসম্পদ অপরিহার্য। একটি অর্থনীতিতে মানবসম্পদ যদি না থাকে, তাহলে সে দেশের ভূমি, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল কিছু জড় পদার্থের সমষ্টি ভিন্ন কিছু নয়।

দুই. উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির প্রভাব ও অবদান অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। কিন্তু যথার্থ মানবসম্পদ অনুপস্থিত থাকলে দেয় প্রযুক্তিকে সেই প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাবে না। বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। আজকের বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের ফলে সক্ষম ও প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, যথাযথ মানবসম্পদের ঘাটতি থাকলে তথ্যপ্রযুক্তি-বিপ্লবের পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে না।

তিন. মানবসভ্যতার উত্তরণে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি, সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। একটি দেশের শ্রমশক্তি যখন এসব গুণ অর্জন করে, তখন সেটি শক্তিশালী মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়।

একটি দেশের জাতীয় আয়ে শ্রমসম্পৃক্ত আয় ও পুঁজিসম্পৃক্ত আয়ের অংশ থাকে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় শ্রমসম্পৃক্ত আয়ের অংশ বেশি থাকে। কারণ, সেসব দেশের শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বেশি। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে মোট জাতীয় আয়ে শ্রমশক্তিসম্পৃক্ত আয় ৬২ শতাংশ।

অন্যদিকে মেক্সিকোর মতো উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় আয়ে শ্রম ৩৫ শতাংশ। এর কারণ, মেক্সিকোর মতো দেশে শ্রমের উৎপাদনশীলতা কম। অন্যদিক থেকে দেখলে, উন্নত বিশ্বে শ্রমশক্তি মানবসম্পদে পরিণত হয়েছে, কিন্তু অনুন্নত বিশ্বে শ্রমশক্তি এখনো পরিপূর্ণ মানবসম্পদ হয়ে উঠতে পারেনি। উন্নত বিশ্বে যেহেতু মানবসম্পদের সক্ষমতা বেশি, এ কারণে তাদের মানবসম্পদ দেয় প্রযুক্তিকে ঠিকভাবে ব্যবহার করে দেশের অগ্রগতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব কর্মজগৎকেও পরিবর্তিত করেছে। এর ফলে নতুনতর ও ভিন্নতর মানবসম্পদের প্রয়োজন পড়েছে। আজকের বৈশ্বিক বাণিজ্যে জ্ঞানসম্পৃক্ত পণ্য বাণিজ্যের অংশ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।

পুঁজিঘন বা শ্রমঘন পণ্যের বাণিজ্যের তুলনায় জ্ঞানসম্পৃক্ত বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধিহার ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে জ্ঞানসম্পৃক্ত পণ্য বাণিজ্য বিশ্বের মোট পণ্য বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ। সুতরাং যাদের আজকের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার মতো সম্পদ ও দক্ষতা আছে, তারাই বর্তমান তথ্য ও সংখ্যাসম্পৃক্ত অর্থনীতিতে দ্রুত উন্নতি করছে।

বিশ্বে ২০২২ সাল নাগাদ স্বয়ংক্রিয়করণ এবং নতুন প্রযুক্তির কারণে সাত কোটি কর্মনিয়োজন হ্রাস পেয়েছে। অনুমিত হয়েছিল যে একই সময়ে উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন কাজের ক্ষেত্রে ১৩ কোটি নতুন কর্মনিয়োজন সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন যেসব কাজের জন্য বেশি চাহিদা লক্ষ করা গেছে, তার মধ্যে আছে উপাত্তবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষক; ই-বাণিজ্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষজ্ঞ; প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপক; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ। সন্দেহ নেই যে আগামী পৃথিবীর কর্মজগতে নতুন এক প্রকৃতির মানবসম্পদ প্রয়োজন হবে।

এ পটভূমি সামনে রেখে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। পরিশীলিত করছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠ্যসূচি, শিক্ষণপদ্ধতি। জোর দিচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে, ইংরেজিতে যাকে বলা হচ্ছে ‘এসটিইএম’ (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন)।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাঁরা সনদ নিয়ে বের হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে এ বলয়ের স্নাতক ৪০ শতাংশ। ভারতে এই পরিমাণ ৩০ শতাংশ। আজকের দিনে মানবসম্পদ গড়ে তোলার ব্যাপারে পাঁচটি দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এগুলোকে পাঁচটি ‘সি’ বলা চলে—কগনিটিভ স্কিল, কানেকটিভিটি, কমিউনিকেশন, কোলাবোরেশন ও কো–অর্ডিনেশন।

বলা বাহুল্য, আগামী দিনের কর্মজগৎ ও তার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার পরিপ্রেক্ষিতে এই চালচিত্র বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চালচিত্রটি কেমন?

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ‘বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে’ (গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স) ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ছিল ১১৩তম। একই বছরে ‘বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে’ (গ্লোবাল ইনফরমেশন ইনডেক্স) ১৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ছিল ১০৬তম। মনে হয় না যে জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনকেন্দ্রিক আগামী বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ নিজেকে তৈরি করছে।

বাংলাদেশে যে পাঁচটি দক্ষতার চাহিদা সবচেয়ে বেশি, সেগুলো হচ্ছে দলকর্ম ও নেতৃত্বের দক্ষতা (৯৩ শতাংশ), বিশ্লেষণী ক্ষমতা (৮৯ শতাংশ), প্রযুক্তিগত সাক্ষরতা (৮১ শতাংশ), মননশীল চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (৭০ শতাংশ) এবং সৃষ্টিশীল চিন্তার সক্ষমতা (৬৩ শতাংশ)। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত জোগান কি এসব চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?

আজকের বাংলাদেশে তরুণ শ্রমশক্তির পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৭০ লাখ, যা দেশের মোট শ্রমশক্তির ৩৬ শতাংশ। মোটামুটি ২০ লাখ তরুণ বেকার, যাঁরা দেশের মোট বেকারের ৭৯ শতাংশ। মোট ৮০ লাখ তরুণ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মনিয়োজন বলয়ের বাইরে স্থিত, যা দেশের সম্ভাবনার এক বিরাট ক্ষতি।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বর্ধমান; ২০১৩ সালে তা ছিল ২ দশমিক ৫ লাখ। ২০২৩ সালে সে সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ। শিক্ষার স্তরের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি—১৩ শতাংশ।

ভবিষ্যৎ দিনগুলোয় বাংলাদেশের তরুণসমাজকে শুধু দেশে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করলে চলবে না, তাদের বিশ্বের অন্যান্য তরুণসমাজের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হবে। সে লক্ষ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন:

প্রথমত, বাংলাদেশে বর্তমানে কোথায় কোথায় দক্ষতা বিদ্যমান, তার প্রকৃতি কী এবং সেই সঙ্গে কোথায় কোথায় দক্ষতার ঘাটতি, সেগুলোর প্রকৃতি কী রকম—এসব পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা।

এই প্রতিবেদন তৈরির সময় দেশজ উদ্যোক্তাদের মানবসম্পদ চাহিদা কী রকম, তা মাথায় রাখা প্রয়োজন। এসব বিষয়কে সমন্বিত করে বাংলাদেশের জন্য একটি মানবসম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। দেখতে হবে, এই পরিকল্পনা দেশের সার্বিক ও সামগ্রিক পরিকল্পনার সঙ্গে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

দ্বিতীয়ত, দেশের বাইরের কাজের জগতে কী কী কাজের সুযোগ আগামী দিনগুলোয় তৈরি হতে পারে, তার একটি নিরীক্ষামূলক অবেক্ষণ প্রস্তুত করা। এ প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের আপাতনকে মনে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সেসব কর্মসুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন হবে, তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, দেশের শিক্ষাকাঠামোর শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠ্যসূচি, শিখনপদ্ধতির একটি সমীক্ষা প্রস্তুত করা দরকার। সে সমীক্ষার লক্ষ্য হবে দেশের শিক্ষাকাঠামো উপরিউক্ত মানবসম্পদ পরিকল্পনার কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমচাহিদা মেটাতে অক্ষম, তা নির্ণয় করা। সে চালচিত্রের আলোকে পুরো শিক্ষাকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। সে কাঠামোয় তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে।

এটি প্রণয়নে একদিকে যেমন বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের দিকে নজর রাখতে হবে, তেমনি অন্যদিকে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা ও অর্জন সামনে রেখে সেখান থেকেও শিক্ষণীয় বিষয়গুলো শিক্ষাকাঠামোতে প্রবিষ্ট করাতে হবে।

চতুর্থত, মানবসম্পদ উন্নয়নকে কার্যকর করতে শিক্ষালব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতাকে আধুনিক, সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিরন্তরভাবে করা প্রয়োজন। এ জাতীয় প্রশিক্ষণ দেশের শ্রমশক্তিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি সেটা দরকার শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদেরও। প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও পন্থা ও উপকরণ দ্রুত বদলাচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রেও বহির্বিশ্বের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

পঞ্চমত, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে থাকতে পারে শিল্প ও বিদ্যায়তনের সহযোগিতাকে পুষ্ট করা, চাকরিরত অবস্থায়ই পরামর্শকের সেবা, সংস্থার মধ্যেই ব্যয়সাধ্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, দক্ষতাভিত্তিক প্রণোদনা দান, ভাষা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা, সরকারি দক্ষতা উন্নয়নের নানা কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণ করা, স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ও প্রশিক্ষণদাতাদের সঙ্গে মিলিতভাবে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা ইত্যাদি।

ষষ্ঠত, মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর্যুক্ত কাঠামোর নিয়মিত পরিবীক্ষণ, নিবিড় নিরীক্ষণ ও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের প্রয়োজন। এই সবকিছুর ভিত্তিতে সময় থেকে সময়ান্তরে সেই মানবসম্পদ-কাঠামোর পর্যালোচনা করা দরকার। সে পর্যালোচনার আলোকে সেই কাঠামোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিশীলন দরকার হতে পারে।

সপ্তমত, গত সিকি শতাব্দীতে বাংলাদেশের শিক্ষা বাজেট জাতীয় আয়ের ২ শতাংশের নিচে ছিল এবং এ বছর তা এসে ঠেকেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশে। একইভাবে দেশের স্বাস্থ্য বাজেট গত ২৫ বছরে জাতীয় আয়ের ১ শতাংশের কম ছিল। এর বিপরীতে ভারত তার জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে এবং ৪ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে। ভিয়েতনামে সংশ্লিষ্ট সংখ্যা দুটি যথাক্রমে ৪ ও ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের উচিত তার জাতীয় আয়ের ৪ থেকে ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা এবং স্বাস্থ্য খাতে এ ব্যয়ের অনুপাত হওয়া উচিত ৬ শতাংশ।

পৃথিবী বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে সমাজ ও মানুষ, তাদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা। বদলে যাচ্ছে মানবসম্পদের চাহিদা ও জোগান। এই পরিবর্তিত সময়ে বাংলাদেশ যেন তার এক ও অনন্য সম্পদ মানবসম্পদের যথার্থ ব্যবহার করতে পারে। এটি আমাদের উন্নতি ও অগ্রযাত্রার অন্যতম চাবিকাঠি।

সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের ভূতপূর্ব পরিচালক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর জ ত য় আয় র শ রমশক ত ব যবস থ পর প র র জন য আজক র র উৎপ সবচ য় দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার

প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা। 

কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।

মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ। 

এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা। 

কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে। 

কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। 

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ