জাকাত-ফিতরা ও ঈদ উপলক্ষে দান-খয়রাত সংগ্রহে রাজধানীতে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুক। রমজানের শুরু থেকেই এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রধান সড়কসহ অলি-গলি, ফুটপাত, ট্র্যাফিক সিগন্যাল, বিপণি বিতান, রেস্তোরাঁ, বাস টার্মিনাল, অফিস পাড়া, মসজিদ-মাজার, কবরস্থান এমনকি বাসা-বাড়িতে ভিক্ষা করছেন তারা।
ঢাকায় নিয়মিত ভিক্ষা করেন এমন কয়েকজন জানান, রমজান এলেই রাজধানীতে থাকা বিভিন্ন স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের আত্মীয়দের নিয়ে আসেন খণ্ডকালীন ভিক্ষাবৃত্তির জন্য। অনেকে রমজান মাসে বাসা ভাড়া বা আত্মীয়র বাড়িতে এসে রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। ঢাকার বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ ভিক্ষুকের লক্ষ্য থাকে অভিজাত এলাকা এবং এর আশপাশের ট্র্যাফিক সিগন্যাল। এছাড়া স্থানীয় ছোট-বড় মার্কেট ও মসজিদের সামনেও তারা নিয়মিত ভিড় করেন।
২০ রমজানের পর থেকেই মালিবাগের শান্তিবাগ সড়ক গলির দুই সারিতে ৩০–৪০ জন ভিক্ষুক ভিক্ষা করছেন। সড়কে চলার পথে জাকাত-ফিতরা ও রমজানে দান-খয়রাতে সওয়াবের পরিমাণ বেশি উল্লেখ করে মুসল্লিদের আকর্ষণ করেন তারা।
তাদের মধ্যে এই এলাকায় নিয়মিত ভিক্ষা করা হোসনে আরা (৬০) বলেন, দেশের নানা জায়গা থেকে ভিক্ষা করতে বহু লোক ঢাকায় আসে। বরিশাল, ভোলা, ময়মনসিংহ এসব এলাকা থেকে বেশি আসে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার রিকশাচালকরা গ্রাম থেকে রমজানের সময় স্ত্রীরে নিয়ে আসে ভিক্ষা করাতে। তাদের ব্যবসা এটা। আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় থাকে তারা। আবার ভিক্ষা করতে একসঙ্গে আসা কয়েকজন মিলেও ঘর ভাড়া নেয় এক মাসের জন্য।
ভৈরব থেকে রমজানের শুরুতে ঢাকায় এসেছেন জাহানারা বেগম (৩৭)। এই নারী ঢাকায় এসে উঠেছেন এক আত্মীয়ের বাসায়। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। দুইটা সন্তান পড়ালেখা করে। মানুষের বাসায় কাজ করে তাদের পড়াশোনা করানো কঠিন। তাই রমজান মাসে বাড়তি আয়ের আসায় ঢাকায় এসেছি। রমজানে মানুষ বেশি দান করে। আবার বাসায় ঘুরে ফিতরা ও জাকাতে টাকা ও জামাকাপড় পাওয়া যায়। এক মাসে ৩০–৪০ হাজার টাকা ফিতরা ও জাকাতে টাকা উঠলে সেটা দিয়ে ছেলে–মেয়ের পড়াশোনা খরচ চালানো যাবে।’
কাকরাইল এলাকার আরেক ভিক্ষুক আবসার বলেন, ‘মসজিদগুলাতে রমজান আইলে লোক বাড়ে। এরা তো সারা বছর এইখানে থাকে না। শুক্রবার হইলে ওদের জন্য ঠিক মতো কারও কাছে থেইকা সাহায্য নিতে পারি না। রোজাতে মানুষ কম-বেশি দান-খয়রাত করে। কিন্তু চাওয়ার মানুষ বেশি হইলে তখন সবাইরে ভাগ দিয়া—সেই সারা বছরই যা পাই তাই। আর এরা তলে দিয়া ফাউ এক মাসের কামাই নিয়া যায়।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রমজ ন র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা