Samakal:
2025-08-01@20:11:54 GMT

রাজধানীতে মৌসুমি ভিক্ষুক

Published: 28th, March 2025 GMT

রাজধানীতে মৌসুমি ভিক্ষুক

জাকাত-ফিতরা ও ঈদ উপলক্ষে দান-খয়রাত সংগ্রহে রাজধানীতে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুক। রমজানের শুরু থেকেই এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রধান সড়কসহ অলি-গলি, ফুটপাত, ট্র্যাফিক সিগন্যাল, বিপণি বিতান, রেস্তোরাঁ, বাস টার্মিনাল, অফিস পাড়া, মসজিদ-মাজার, কবরস্থান এমনকি বাসা-বাড়িতে ভিক্ষা করছেন তারা।

ঢাকায় নিয়মিত ভিক্ষা করেন এমন কয়েকজন জানান, রমজান এলেই রাজধানীতে থাকা বিভিন্ন স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের আত্মীয়দের নিয়ে আসেন খণ্ডকালীন ভিক্ষাবৃত্তির জন্য। অনেকে রমজান মাসে বাসা ভাড়া বা আত্মীয়র বাড়িতে এসে রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। ঢাকার বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ ভিক্ষুকের লক্ষ্য থাকে অভিজাত এলাকা এবং এর আশপাশের ট্র্যাফিক সিগন্যাল। এছাড়া স্থানীয় ছোট-বড় মার্কেট ও মসজিদের সামনেও তারা নিয়মিত ভিড় করেন।

২০ রমজানের পর থেকেই মালিবাগের শান্তিবাগ সড়ক গলির দুই সারিতে ৩০–৪০ জন ভিক্ষুক ভিক্ষা করছেন। সড়কে চলার পথে জাকাত-ফিতরা ও রমজানে দান-খয়রাতে সওয়াবের পরিমাণ বেশি উল্লেখ করে মুসল্লিদের আকর্ষণ করেন তারা। 

তাদের মধ্যে এই এলাকায় নিয়মিত ভিক্ষা করা হোসনে আরা (৬০) বলেন, দেশের নানা জায়গা থেকে ভিক্ষা করতে বহু লোক ঢাকায় আসে। বরিশাল, ভোলা, ময়মনসিংহ এসব এলাকা থেকে বেশি আসে। 

তিনি আরও বলেন, ঢাকার রিকশাচালকরা গ্রাম থেকে রমজানের সময় স্ত্রীরে নিয়ে আসে ভিক্ষা করাতে। তাদের ব্যবসা এটা। আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় থাকে তারা। আবার ভিক্ষা করতে একসঙ্গে আসা কয়েকজন মিলেও ঘর ভাড়া নেয় এক মাসের জন্য। 

ভৈরব থেকে রমজানের শুরুতে ঢাকায় এসেছেন জাহানারা বেগম (৩৭)। এই নারী ঢাকায় এসে উঠেছেন এক আত্মীয়ের বাসায়। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। দুইটা সন্তান পড়ালেখা করে। মানুষের বাসায় কাজ করে তাদের পড়াশোনা করানো কঠিন। তাই রমজান মাসে বাড়তি আয়ের আসায় ঢাকায় এসেছি। রমজানে মানুষ বেশি দান করে। আবার বাসায় ঘুরে ফিতরা ও জাকাতে টাকা ও জামাকাপড় পাওয়া যায়। এক মাসে ৩০–৪০ হাজার টাকা ফিতরা ও জাকাতে টাকা উঠলে সেটা দিয়ে ছেলে–মেয়ের পড়াশোনা খরচ চালানো যাবে।’

কাকরাইল এলাকার আরেক ভিক্ষুক আবসার বলেন, ‘মসজিদগুলাতে রমজান আইলে লোক বাড়ে। এরা তো সারা বছর এইখানে থাকে না। শুক্রবার হইলে ওদের জন্য ঠিক মতো কারও কাছে থেইকা সাহায্য নিতে পারি না। রোজাতে মানুষ কম-বেশি দান-খয়রাত করে। কিন্তু চাওয়ার মানুষ বেশি হইলে তখন সবাইরে ভাগ দিয়া—সেই সারা বছরই যা পাই তাই। আর এরা তলে দিয়া ফাউ এক মাসের কামাই নিয়া যায়।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ