বগুড়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত হয় এক স্কুলছাত্র, নিখোঁজ হন একজন চাকরিজীবী। আজও শোকে বিহ্বল তাদের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ; নেই নতুন পোশাক কেনাকাটা।
আন্দোলনে গুলিতে নিহত ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র জুনাইদ আহম্মেদ রাতুল বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমানের ছেলে। ঈদের প্রাক্কালে ছেলের স্মৃতি বাবা-মাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মা রোকেয়া বেগম রাতুলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদের কমপক্ষে ২০ দিন আগে রাতুল ঈদের পোশাক কিনত। সঙ্গে আমাকে নিয়ে যেত। ওর পোশাক কেনার সময় আমাকেও জোর করে শাড়ি কিংবা থ্রি-পিস নিতে বাধ্য করত। বাবার জন্যও পাঞ্জাবি কিনত।’
ছেলের ম্মৃতি মনে করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোকেয়া বলেন, রাতুলের পছন্দ ছিল মেরুন রঙের পাঞ্জাবি। সঙ্গে নিত একই রঙের টি-শার্ট। জুতা কিনত অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে। এই ছিল ঈদে কেনাকাটা।
এবারের ঈদে রোকেয়া বেগম কেনাকাটা করেননি। ছেলে ছাড়া ঈদ কীভাবে কাটাবেন, জানেন না। সব সময় শুধু ছেলের কথাই মনে পড়ছে। রাতুলের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, এবার আমি কিছু কিনব না। যে টাকায় ঈদের পোশাক কিনতাম, তা বাবা-মাহারা এতিম শিশুদের দান করব।
মুদি দোকানি জিয়াউর রহমানের দুই সন্তানের মধ্যে রাতুল ছিল ছোট। মেয়ে জেরিন সুলতানার বিয়ে হয়ে গেছে। রাতুল স্থানীয় উপশহর পথ পাবলিক স্কুলের ছাত্র ছিল। ৫ আগস্ট সে বাড়ি থেকে কাউকে না বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তার চোখে ও শরীরে প্রায় সাতশ শটগানের গুলি বিদ্ধ হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ৪৯ দিন পর সে মারা যায়।
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে ১৮ জন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ রাতুল।
ঢাকার আশুলিয়ায় বায়িং হাউসে চাকরি করা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার জোড়গাছা এলাকার মনিরুজ্জামান মিলন আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হন। আজও তাঁর খোঁজ মেলেনি। মিলনের স্ত্রী সবিতা বেগম স্বামীর শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। কন্যা মানছুরা সারাক্ষণ শুধু বাবাকে খুঁজে ফিরছে। ঈদে বাবা নতুন জামা কিনে দেবে– সেই আশায় আছে। বাড়িতে কেউ গেলেই ২ বছর বয়সী মানছুরা বাবা বাবা বলে ডাকে। হয়তো সে সবার কাছে বাবার খোঁজ জানতে চায়।
সবিতা বেগম আফসোস করে জানান, তাঁর স্বামী এই বয়সে চলে যাবে– ভাবতেও পারছেন না। ঈদের সময় মানছুরাকে আগে তার বাবা ঈদের নতুন জামা কিনে দিতেন। জামা এনে লুকিয়ে রেখে মেয়ের চোখ ধরে বলতেন, মা, বলো তো– আমি তোমার জন্য কী এনেছি। চোখ খোলার পর নতুন জামা পেয়ে বাবা-মেয়ের সে কী আনন্দ! সবিতার এবার ঈদের জামা কিনতে ইচ্ছে করছে না। তাঁর ভাশুর ও বাবার বাড়ি থেকে জামা পাঠিয়েছে। তা দিয়েই ঈদ করতে হবে। বাবাকে ছাড়া মানছুরা কীভাবে ঈদ করবে– ভাবতেই কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।
মিলনের বড় ভাই কলেজ শিক্ষক সামিউল ইসলাম মিল্টন বলেন, তাঁর ভাইকে দেশের সব মর্গে খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি। মিলনের কী পরিণতি হয়েছে, তা জানতে তারা উদগ্রীব।
সামিউল জানান, ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ায় বায়িং হাউসের অফিস থেকে তাঁর ভাই বের হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আশুলিয়া এলাকায় যোগ দেন। আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সময় মিলন ফোনে তাঁকে বলেছিলেন, ‘ভাই, আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারছি না। আমি আন্দোলনে যোগ দিলাম। আমার কিছু হলে তুমি মা ও আমার স্ত্রী-সন্তানকে দেখে রেখো।’ মিলনের সেই শেষ কণ্ঠস্বর এখনও তাঁর কানে বাজে। ছোট ভাইয়ের এমন আকুতি ও আবেগের কথা কী করে ভুলবেন তিনি? সেই ফোনালাপ এখনও তাঁকে পীড়া দেয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী