বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চাকধালা সীমান্তে গতকাল শনিবার দুপুর একটার দিকে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আবদুস সালাম (৪২) নামের এক কৃষকের পা উড়ে গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

চাকধালা এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গতকাল দুপুরে সীমান্তের ওপারের জঙ্গল থেকে আবদুস সালামের কলার বাগানে একপাল বানর ঢুকে পড়ে। বানরের পাল তাড়াতে তিনি শূন্যরেখা পার হয়ে মিয়ানমারের ভূখণ্ডে যান। সেখানে হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ উড়ে যায়। ডান পায়েও স্প্লিন্টারের আঘাত পেয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর লোকজন আবদুস সালামকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অংশে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হওয়ার পর কোনো জনবসতি না থাকায় সেখান থেকে বন্য প্রাণীর পাল এসে উপদ্রব করে। বানর তাড়াতে গিয়ে আবদুস সালাম পা হারালেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক জানিয়েছেন, শূন্যরেখা থেকে ৩০০ মিটার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিস্ফোরণের ঘটনায় আবদুস সালাম আহত হয়েছেন। মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা সে দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) দখলে রয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, আরাকান আর্মি তাদের প্রতিপক্ষ রোহিঙ্গা দলগুলোকে বাধাগ্রস্ত করতে মাইন স্থাপন করেছে। নানা প্রয়োজনে সীমান্তের লোকজন সেখানে গেলে মাইন বিস্ফোরণের শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল থেকে আট বছরে অন্তত ২০টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চাকধালা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশারতলী সীমান্তে ১৫ জন পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখনো চাকধালা আমতলী বাজার এলাকার আমির উদ্দিন (৩৫) নামের একজন নিখোঁজ রয়েছেন। মানুষ ছাড়াও কুকুর, গরু ও ছাগল মারা যাচ্ছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে বিতাড়নের পর থেকে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ঘুমধুম, দোছড়ি ও সোনাইছড়ি—এই তিন ইউনিয়নসহ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৩৫ জনের অধিক মাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছেন বলে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (চাকধালার বাসিন্দা) ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

ধারাবাহিক মাইন বিস্ফোরণ সম্পর্কে নাইক্ষ্যংছড়ির ওসি মাসরুরুল হক সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত তিন মাসে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় ছয়জন সীমান্তবাসী পা হারিয়েছেন। এর আগের কতটি ঘটনা ঘটেছে এবং কতজন হতাহত হয়েছেন তা তাঁর জানা নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ স স ল ম উপজ ল ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবি উপাচার্য-প্রক্টরসহ ৩ জনকে আইনি নোটিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলে নিজের সিট ফিরে পাওয়াসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্য, প্রক্টর ও হলটির প্রাধ্যক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক শিক্ষার্থী।

ওই শিক্ষার্থী হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আলোচিত ভিপি পদপ্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল। 

আরো পড়ুন:

রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল, উত্তাল রাতের ক্যাম্পাস

চাকসু: ৩ পদ শূন্য রেখে বামপন্থিদের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন (মুন্সী বেল্লাল) স্বাক্ষরিত এক আইনি নোটিশে তিনি ঢাবি প্রশাসনের কাছে তিন দফা দাবি জানান।

জালাল আহমদ অভিযোগ করে জানান, হলে বহিরাগত ও মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের মদদে তার ওপর মব হামলাও চালানো হয়। কিন্তু তদন্ত ছাড়াই হল প্রাধ্যক্ষ তাকে বহিষ্কার করেন এবং প্রশাসন তার নামে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে।

এর আগে, হলের রুমমেটকে মারধর এবং ভাঙা টিউবলাইট দিয়ে আঘাত করার ঘটনায় জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালালের বিরুদ্ধে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন এবং ২৭ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর আদালত জামিন মঞ্জুর করলে কারাগার থেকে মুক্ত হন জালাল।

ওই শিক্ষার্থীর দাবিগুলো হলো— হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও প্রশাসনের ক্ষমা প্রার্থনা; অবৈধভাবে বাতিল হওয়া তার বৈধ সিট ফেরত দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বহিরাগত ও মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্ছেদ করা।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ