নাটোর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পুরোনো বাসভবন চত্বরে সন্ধান পাওয়া গত সংসদ নির্বাচনের বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার জব্দ করেছে থানার পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১১টা থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত শ্রমিক দিয়ে মাটি খুঁড়ে বড় ৭৯ বস্তা ব্যালট পেপার জব্দ করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজনের দাবি, জব্দ করা ব্যালট পেপার মাসখানেক আগে নওগাঁর এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যালট পেপার কারা, কীভাবে ডিসি বাংলোর মতো সংরক্ষিত স্থানে মাটিচাপা দিয়েছে, তাঁরা জানেন না।

অন্যদিকে নওগাঁর ওই ঠিকাদার বলছেন, তিনি ইতিমধ্যে তাঁর কেনা মালামাল নাটোর থেকে নিয়ে গিয়েছেন। মাটিচাপা দেওয়া ব্যালট পেপারের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় পুরোনো ডিসি বাংলো চত্বরে মাটিচাপা অবস্থায় বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপারের সন্ধান মেলে। এরপর গতকাল সারা দিন স্থানটি পুলিশ ও সেনাসদস্যরা পাহারা দিয়ে রাখেন। ব্যালট পেপারগুলো বড় একটা গর্তে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। গতকাল রাত ১১টা থেকে শ্রমিকেরা সেগুলো উদ্ধার করে বড় বড় বস্তায় ভরে রাখেন। সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ কতটি বস্তায় ভরা হয়েছে, নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।

উপস্থিত লোকজনের ভাষ্য, মোট ৭৯ বস্তা ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেগুলো সদর থানার হেফাজতে রাখা হয়। পুলিশ সুপার উদ্ধারকাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (নেজারত-এনডিসি) রাশেদুল ইসলাম কিছুক্ষণের জন্য সেখানে গেলেও পরে তিনি চলে আসেন।

সদর থানার ওসি মাহবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ ডায়েরি মূলে উদ্ধার করা ব্যালট পেপার নতুন করে বস্তাবন্দী করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাতের বেলা জব্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনের বেলা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই শ্রমিকদের সুবিধার জন্য রাতে কাজ করতে হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলা না থাকায় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নাটোরের তিনটি আসনের ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় কাগজ বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান এগুলো কিনে নেন। তার আগপর্যন্ত নিয়মানুযায়ী সব ব্যালট পেপার রিটার্নিং কর্মকর্তার (জেলা প্রশাসক) হেফাজতে সংরক্ষিত ছিল। কীভাবে বিক্রীত কাগজপত্রের একটা অংশ পুরোনো বাংলো চত্বরে রাখা হয়, তিনি জানেন না।

আরও পড়ুননাটোরে পুরাতন ডিসি বাংলো থেকে গত সংসদ নির্বাচনের ১০০ বস্তা ব্যালট পেপার উদ্ধার২৯ মার্চ ২০২৫

নওগাঁর ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ক্রয়কৃত মালামাল ইতিমধ্যে নাটোর থেকে নিয়ে এসেছি। এরপর কীভাবে এসব কাগজপত্র নাটোরে পুঁতে রাখা হয়েছে, তা বলতে পারব না।’

জেলা প্রশাসনের এনডিসি রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্রীত ব্যালট পেপারের কিছু অংশ ঠিকাদার না নেওয়ায় পুরোনো বাংলোতে সংরক্ষণ করা ছিল। জায়গা খালি করার জন্য সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। তবে কে কখন কাজটি করেছে, বলতে পারব না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ