সংসদ নির্বাচনের ব্যালট কারা, কীভাবে ডিসি বাংলোতে মাটিচাপা দিল, জানেন না কেউ
Published: 30th, March 2025 GMT
নাটোর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পুরোনো বাসভবন চত্বরে সন্ধান পাওয়া গত সংসদ নির্বাচনের বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার জব্দ করেছে থানার পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১১টা থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত শ্রমিক দিয়ে মাটি খুঁড়ে বড় ৭৯ বস্তা ব্যালট পেপার জব্দ করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজনের দাবি, জব্দ করা ব্যালট পেপার মাসখানেক আগে নওগাঁর এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যালট পেপার কারা, কীভাবে ডিসি বাংলোর মতো সংরক্ষিত স্থানে মাটিচাপা দিয়েছে, তাঁরা জানেন না।
অন্যদিকে নওগাঁর ওই ঠিকাদার বলছেন, তিনি ইতিমধ্যে তাঁর কেনা মালামাল নাটোর থেকে নিয়ে গিয়েছেন। মাটিচাপা দেওয়া ব্যালট পেপারের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় পুরোনো ডিসি বাংলো চত্বরে মাটিচাপা অবস্থায় বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপারের সন্ধান মেলে। এরপর গতকাল সারা দিন স্থানটি পুলিশ ও সেনাসদস্যরা পাহারা দিয়ে রাখেন। ব্যালট পেপারগুলো বড় একটা গর্তে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। গতকাল রাত ১১টা থেকে শ্রমিকেরা সেগুলো উদ্ধার করে বড় বড় বস্তায় ভরে রাখেন। সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ কতটি বস্তায় ভরা হয়েছে, নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।
উপস্থিত লোকজনের ভাষ্য, মোট ৭৯ বস্তা ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেগুলো সদর থানার হেফাজতে রাখা হয়। পুলিশ সুপার উদ্ধারকাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (নেজারত-এনডিসি) রাশেদুল ইসলাম কিছুক্ষণের জন্য সেখানে গেলেও পরে তিনি চলে আসেন।
সদর থানার ওসি মাহবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ ডায়েরি মূলে উদ্ধার করা ব্যালট পেপার নতুন করে বস্তাবন্দী করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাতের বেলা জব্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনের বেলা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই শ্রমিকদের সুবিধার জন্য রাতে কাজ করতে হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলা না থাকায় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নাটোরের তিনটি আসনের ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় কাগজ বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান এগুলো কিনে নেন। তার আগপর্যন্ত নিয়মানুযায়ী সব ব্যালট পেপার রিটার্নিং কর্মকর্তার (জেলা প্রশাসক) হেফাজতে সংরক্ষিত ছিল। কীভাবে বিক্রীত কাগজপত্রের একটা অংশ পুরোনো বাংলো চত্বরে রাখা হয়, তিনি জানেন না।
আরও পড়ুননাটোরে পুরাতন ডিসি বাংলো থেকে গত সংসদ নির্বাচনের ১০০ বস্তা ব্যালট পেপার উদ্ধার২৯ মার্চ ২০২৫নওগাঁর ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ক্রয়কৃত মালামাল ইতিমধ্যে নাটোর থেকে নিয়ে এসেছি। এরপর কীভাবে এসব কাগজপত্র নাটোরে পুঁতে রাখা হয়েছে, তা বলতে পারব না।’
জেলা প্রশাসনের এনডিসি রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্রীত ব্যালট পেপারের কিছু অংশ ঠিকাদার না নেওয়ায় পুরোনো বাংলোতে সংরক্ষণ করা ছিল। জায়গা খালি করার জন্য সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। তবে কে কখন কাজটি করেছে, বলতে পারব না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
৪,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব আহমদ কায়কাউসের বিরুদ্ধে অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক রেজাউল করিম। গতকাল বুধবার এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
দুদক গত ১৬ এপ্রিল এ নিয়ে আদেশ জারি করলেও গতকালই বিষয়টি জানাজানি হয়। দুদকের আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাশ কাটিয়ে আদানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকারের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন আহমদ কায়কাউস। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এ চুক্তি-সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ জন্য চুক্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় নথিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, বিদ্যুৎ কেনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম, পদবি, বর্তমান ঠিকানা এবং এ নিয়ে কোনো বিভাগীয় তদন্ত করা হয়েছে কিনা– খতিয়ে দেখতে হবে।
আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি শুরু থেকেই বিতর্কিত। ২৫ বছরের এ চুক্তির পদে পদে রয়েছে অসমতা। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত রয়েছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি।