‘‘সড়ক সুশৃঙ্খল এবং ফাঁকা ছিল। তাই আজ বরিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৯টায় রাজধানীর ইস্কাটন থেকে রওনা হয়ে সকাল ১০ টায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় পৌঁছাই। টোলপ্লাজা এলাকাও ফাঁকা। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে টোল পরিশোধ করতে পেরেছি। এখন পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাব।’’  

এ সব কথা বলছিলেন মাদারীপুরের চন্নোসা গ্রামের বাসিন্দা মোটরসাইকেল যাত্রী তারা মিয়া। তিনি রাজধানীর ইস্কাটনের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

তারা মিয়া বলেন, ‘‘গত ৬ বছর ধরে ঈদ আসলে এভাবে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত করি। আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিমুলিয়া ঘাটে অপেক্ষার পর ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়েছি। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছি। প্রায় সময় সেতু এলাকায়ও জটলায় পড়েছি। তবে এবার কোথাও কোনো ভোগান্তি হয়নি। ঈদযাত্রায় এবারের মতো স্বস্তি আর কখনো পাইনি।’’ 

আরো পড়ুন:

সরেজমিন ফুলবাড়িয়া বাস কাউন্টার
প্রশাসন চলে গেলেই বাড়তি ভাড়া

খোলা ট্রাক-পিকআপে ছুটছে ঘরমুখো মানুষ

শুধু তারা মিয়া নয়, এ পথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার ঈদে ঘরমুখো সকল যাত্রী এবার নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো.

আল আমিন হোসেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, সড়ক পথে যাত্রী ও যানবাহন নিরাপদ ও ভোগান্তি বিহীন যাতায়াতের জন্য ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। গত দুই দিন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পদ্মা সেতুমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকলেও আজ রবিবার (৩০ মার্চ) একেবারে ফাঁকা ছিল। যানবাহন আসামাত্রই টোল পরিশোধ করে গন্তব্যে যেতে পারছে। যাত্রীরা সন্তুষ্ট, পুলিশও খুশি।

সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পদ্মা সেতু উত্তর থানা এবং টোলপ্লাজা এলাকা ফাঁকা দেখা যায়। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও যাত্রীবাহী বাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। এ সব পরিবহন অপেক্ষা ছাড়াই টোল পরিশোধ করে যার যার গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে।

বাস চালক আব্দুল্লাহ ও বাসযাত্রী খালেদার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য পথে পথে দুর্ভোগে পড়তে হতো। পদ্মা পাড়ি দেওয়ার জন্য শিমুলিয়া ফেরিঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কখনো এক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে সেই ভোগান্তি কমেছে। তবে সেতু চালু হওয়ার পর বিগত কয়েকটা ঈদে সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় মাঝেমধ্যে জটলা বাধার কারণে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এবারের যাত্রায় সেই অপেক্ষা ছিল না। 

সকাল পৌনে ১০টার দিকে যাত্রী মো. লিমন সিকদারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। লিমন চাকরির সুবাদে লৌহজংয়ের খানবাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায়।
 
লিমন বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু এলাকায় থাকি, তাই প্রতিদিনের চিত্র আমার জানা। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ সেতু এলাকায় হওয়াটা একেবারে স্বাভাবিক। তবে এবার কোনোরকম জটলা, ভোগান্তি দেখিনি। এমন স্বস্তির যাত্রা এর আগে কোনো ঈদে দেখিনি।’’ 

পদ্মা সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ জানান, এবার ঈদযাত্রায় শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের জটলা কিছুটা ছিল। শনিবার (২৯ মার্চ) সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও একবারের জন্য জটলা বাধেনি। আজ রবিবার (৩০ মার্চ) ভোরে সামান্য কিছু সময় গাড়ির চাপ ছিল। ৮টার পর একেবারে স্বাভাবিক। সব ধরনের যানবাহন পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এসে মুহূর্তের মধ্যে টোল পরিশোধ করে তাদের গন্তব্যে চলে যেতে পারছে। 

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ৩৬ হাজার ৯২৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ২৪ হাজার ৩০৫টি এবং জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ১২ হাজার ৬১৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। দুই প্রান্ত থেকে ৪ কোটি ৭ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকার টোল আদায় করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে পর দিন শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত টোল আদায় হয় ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা।
 

ঢাকা/রতন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন র ত ১২ট র জন য এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ