‘ঈদযাত্রায় এবারের মতো স্বস্তি আর কখনো পাইনি’
Published: 30th, March 2025 GMT
‘‘সড়ক সুশৃঙ্খল এবং ফাঁকা ছিল। তাই আজ বরিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৯টায় রাজধানীর ইস্কাটন থেকে রওনা হয়ে সকাল ১০ টায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় পৌঁছাই। টোলপ্লাজা এলাকাও ফাঁকা। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে টোল পরিশোধ করতে পেরেছি। এখন পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাব।’’
এ সব কথা বলছিলেন মাদারীপুরের চন্নোসা গ্রামের বাসিন্দা মোটরসাইকেল যাত্রী তারা মিয়া। তিনি রাজধানীর ইস্কাটনের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
তারা মিয়া বলেন, ‘‘গত ৬ বছর ধরে ঈদ আসলে এভাবে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত করি। আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিমুলিয়া ঘাটে অপেক্ষার পর ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়েছি। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছি। প্রায় সময় সেতু এলাকায়ও জটলায় পড়েছি। তবে এবার কোথাও কোনো ভোগান্তি হয়নি। ঈদযাত্রায় এবারের মতো স্বস্তি আর কখনো পাইনি।’’
আরো পড়ুন:
সরেজমিন ফুলবাড়িয়া বাস কাউন্টার
প্রশাসন চলে গেলেই বাড়তি ভাড়া
খোলা ট্রাক-পিকআপে ছুটছে ঘরমুখো মানুষ
শুধু তারা মিয়া নয়, এ পথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার ঈদে ঘরমুখো সকল যাত্রী এবার নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো.
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, সড়ক পথে যাত্রী ও যানবাহন নিরাপদ ও ভোগান্তি বিহীন যাতায়াতের জন্য ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। গত দুই দিন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পদ্মা সেতুমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকলেও আজ রবিবার (৩০ মার্চ) একেবারে ফাঁকা ছিল। যানবাহন আসামাত্রই টোল পরিশোধ করে গন্তব্যে যেতে পারছে। যাত্রীরা সন্তুষ্ট, পুলিশও খুশি।
সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পদ্মা সেতু উত্তর থানা এবং টোলপ্লাজা এলাকা ফাঁকা দেখা যায়। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও যাত্রীবাহী বাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। এ সব পরিবহন অপেক্ষা ছাড়াই টোল পরিশোধ করে যার যার গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে।
বাস চালক আব্দুল্লাহ ও বাসযাত্রী খালেদার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য পথে পথে দুর্ভোগে পড়তে হতো। পদ্মা পাড়ি দেওয়ার জন্য শিমুলিয়া ফেরিঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কখনো এক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে সেই ভোগান্তি কমেছে। তবে সেতু চালু হওয়ার পর বিগত কয়েকটা ঈদে সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় মাঝেমধ্যে জটলা বাধার কারণে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এবারের যাত্রায় সেই অপেক্ষা ছিল না।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে যাত্রী মো. লিমন সিকদারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। লিমন চাকরির সুবাদে লৌহজংয়ের খানবাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায়।
লিমন বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু এলাকায় থাকি, তাই প্রতিদিনের চিত্র আমার জানা। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ সেতু এলাকায় হওয়াটা একেবারে স্বাভাবিক। তবে এবার কোনোরকম জটলা, ভোগান্তি দেখিনি। এমন স্বস্তির যাত্রা এর আগে কোনো ঈদে দেখিনি।’’
পদ্মা সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ জানান, এবার ঈদযাত্রায় শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের জটলা কিছুটা ছিল। শনিবার (২৯ মার্চ) সড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও একবারের জন্য জটলা বাধেনি। আজ রবিবার (৩০ মার্চ) ভোরে সামান্য কিছু সময় গাড়ির চাপ ছিল। ৮টার পর একেবারে স্বাভাবিক। সব ধরনের যানবাহন পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এসে মুহূর্তের মধ্যে টোল পরিশোধ করে তাদের গন্তব্যে চলে যেতে পারছে।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ৩৬ হাজার ৯২৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ২৪ হাজার ৩০৫টি এবং জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ১২ হাজার ৬১৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। দুই প্রান্ত থেকে ৪ কোটি ৭ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকার টোল আদায় করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে পর দিন শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত টোল আদায় হয় ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা।
ঢাকা/রতন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন র ত ১২ট র জন য এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব