মজুতদারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দরকার
Published: 31st, March 2025 GMT
বাংলাদেশের মানুষে প্রতিদিনের পুষ্টির বেশির ভাগই আসে ভাত থেকে। এর মূল কারণ, পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য বেশির ভাগ মানুষের নেই। এ কারণে চালের দাম বাড়লে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর জীবনমানের ওপর চাপ পড়ে, অনেকে আরও কম খাবার খেতে বাধ্য হন। এ বাস্তবতায় চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে যদি মজুতদারদের ভূমিকা থাকে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে, তাহলে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এটা সত্যি যে গত বছর পরপর কয়েক দফা বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আমনের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে, কিন্তু তাই বলে চালের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়ার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে? বাংলাদেশের ধান-চাল উৎপাদনের অন্যতম বড় কেন্দ্র নওগাঁ। সারা দেশের চালের বাজাররে ওপর নওগাঁর চালের দাম প্রভাব ফেলে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, কী কারণে নওগাঁর বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো সরু ধানের সরবরাহ কমে যাওয়া, সরু চালের সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকা, চালের বাজারে করপোরেট কোম্পানি ও গুটিকয় বড় মিল কোম্পানি একচ্ছত্র আধিপত্য এবং অবৈধ মজুতদার গোষ্ঠী ধান-চালের ব্যবসায় যুক্ত হয়ে ধান-চাল কিনে মজুত করা।
এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে সরবরাহের ঘাটতির ব্যাপারটি যেমন আমরা দেখতে পাই, আবার মজুতদারি ও বাজার কারসাজির ঘটনাও রয়েছে। সামগ্রিকভাবে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের ঘাটতি এখানে সুস্পষ্ট।
মিলমালিক ও আড়তদারেরা চালের বাজার অস্বাভাবিক হওয়ার পেছনে মজুতদারদের দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, চালকলের মালিকেরা বাজারে ওঠা ধানের এক-তৃতীয়াংশ কিনলেও বাকি অংশ এই মজুতদার গোষ্ঠী কিনে থাকেন। তাঁদের অনেকেরই খাদ্যশস্যের সংগ্রহের লাইসেন্স নেই। তাঁরা মৌসুমের সময় কম দামে ধান কেনেন, পরে বেশি দামে বিক্রি করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, খাদ্যশস্য সংগ্রহের লাইসেন্স না থাকার পরও মজুতদারেরা কীভাবে ধান মজুত করছেন? প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাহলে কী করছে? শুধু মজুতদার নন, মিলমালিক ও আড়তদারেরাও অনেক সময় কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ আছে। ফলে চালের বাজারে কঠোর তদারকি প্রয়োজন।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার প্রতি মৌসুমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ করে। সেটা যে যথেষ্ট নয়, তা চালের ঊর্ধ্বমুখী দামই বলে দেয়। আবার বাজারে যাতে চালের জোগান স্থিতিশীল থাকে, তার জন্য প্রয়োজনে আমদানি করাও প্রয়োজন। সেখানেই সরকারের পদক্ষেপ খুব একটা কাজে আসেনি।
চালের দাম বাড়লে তার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। তাদের কষ্টটা বাড়ে। চালের বাজার স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের কার্যকর পরিকল্পনা ও ভূমিকা থাকা দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম
ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।
সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।