মিয়ানমারে ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা তিন হাজার তিন-এ দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৩৯ জন আহত এবং ৩৭৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের সময় মসজিদে অবস্থানকারী সাত শতাধিক মুসল্লি নিহত হয়েছেন। দুর্যোগে দুর্গম এলাকায় জরুরি ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পে থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ২২। দেশটিতে শত শত ভবন ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৭২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। খবর আলজাজিরার। 

শুক্রবার মান্দালয়ের কাছে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে; লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু। ভূমিকম্পবিধ্বস্ত অনেক এলাকায় আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো। তারা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে সরকারি সহযোগিতা চাওয়ার পর বুধবার মিয়ানমারের জান্তা ২০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যম এমআরটিভি। 

ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করতে এ যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়েছে জানিয়ে বিদ্রোহীরা হামলা চালালে পাল্টা ‘যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে জান্তা। ভূমিকম্পের পর দেশটিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে আন্তর্জাতিক মহলের ব্যাপক চাপ ছিল। মঙ্গলবার বিদ্রোহীদের বড় একটি জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সও এক মাসের একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। 

এদিকে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যেও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশটিতে চীনা দূতাবাসের ত্রাণ প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য স্থানীয় রেড ক্রসকে ১৫ লাখ ইউয়ান (২,০৬,৬৮৫ ডলার) মূল্যের নগদ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। চীনা রেড ক্রসের একটি ত্রাণবহরে মিয়ানমার জান্তার গুলির ঘটনাও ঘটেছে। বিবিসি বলছে, মঙ্গলবার রাতে ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে আসা একটি দলের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি চালায়। 

মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দাবি, গুলির ঘটনাটি সতর্কতামূলক ছিল। গাড়িবহরটি এ অঞ্চল দিয়ে যাবে, তা তাদের জানানো হয়নি। বহরটি থামানোর জন্য গুলি চালানো হয়, তবে কেউ আহত হয়নি। 

ভূমিকম্পে ছয়টি অঞ্চলের ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খাদ্য, আশ্রয়, পানি, স্যানিটেশন, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও অন্যান্য পরিষেবার জন্য জরুরি তহবিলে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। 

 বুধবারও মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে একটি হোটেলের ধ্বংসাবশেষ থেকে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। যেসব অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার লড়াই চলছে, সেসব অঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা চ্যালেঞ্জের মুখে। 

রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ভূমিকম্প জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের জন্য কূটনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে। ভূমিকম্পের ফলে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ত্রাণ সহায়তা পাঠানোয় কূটনৈতিক কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে। 

থাই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিন অং হ্লাইং কাল শুক্রবার ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে (৩-৪ এপ্রিল) যোগ দেবেন। সংস্থাটির সদস্য দেশগুলো হলো– বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। 

ভূমিকম্পের পর জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলেন। এসব দেশ থেকে লাখ লাখ ডলার সহায়তা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। শত শত উদ্ধারকর্মী মিয়ানমারে পৌঁছেছেন।     

২০২১ সালের অভ্যুত্থানে সৃষ্ট সংঘাতের ফলে জান্তা সরকার কূটনৈতিকভাবে ক্রমাগত তাদের অবস্থান হারিয়ে ফেলে। যুদ্ধ পরিস্থতি সৃষ্টির ফলে মিন অং হ্লাইংয়ের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়