শরীয়তপুরের এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই
Published: 3rd, April 2025 GMT
দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে গড়ে তোলা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সেখানে প্রশিক্ষিত একজন স্বাস্থ্যকর্মী থাকেন। অ্যান্টিবায়োটিক ও জটিল রোগের ওষুধ ছাড়া প্রায় সব ধরনের ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে রোগীদের বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। এখন শরীয়তপুরের এমন স্বাস্থ্যকর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না ৯ মাস ধরে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও বন্ধ থাকছে। রোগীরা এসেও ফিরে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি আসলে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বেতন না পেয়ে অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শরীয়তপুরের ১৪৩ জন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কর্মী (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার)। ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা গত বছরের জুলাই থেকে বেতন পাচ্ছেন না। ৯ মাস ধরে বেতন না পেয়ে এসব স্বাস্থ্যকর্মী পরিবার নিয়ে অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এত দীর্ঘ সময় ধরে বেতন বন্ধ থাকলে এমন করুণ পরিস্থিতি হওয়াই স্বাভাবিক।
প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালের পর শরীয়তপুরে ওই ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও জেলার ৬৫টি ইউনিয়নের দুটি করে ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ও জটিল রোগের ওষুধ ছাড়া প্রায় সব ধরনের ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে রোগীদের বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় অনেক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়মিত কমিউনিটি ক্লিনিকে যান না। প্রথম আলোর প্রতিবেদক ১০ দিনে কয়েকটি উপজেলার ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে অন্তত ৮টি বন্ধ পেয়েছেন। ওই ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাওয়া যায়নি। অনেকে দিনের যেকোনো সময় খুলে দু-এক ঘণ্টা অবস্থান করে বন্ধ করে চলে যান। এরপর চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যান।
সাধারণত দরিদ্র মানুষেরাই কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন। ফলে এসব ক্লিনিক যখন বন্ধ থাকে, তাতে বঞ্চিত হন এসব মানুষই। যেমন নারায়ণপুর ইউনিয়নের পুটিয়া এলাকায় অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকটি বন্ধ পেয়ে একজন অসুস্থ নারী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অসুস্থ হলে এখানে ছুটে আসি। কখনো খোলা পাই, আবার কখনো বন্ধ থাকে। তখন ওষুধ না নিয়েই ফিরে যেতে হয়।’
সিভিল সার্জন রেহান উদ্দিন বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন দেওয়া হতো। এখন ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।’ আশা করি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়মিত হবেন, সেটিই কাম্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর ম বন ধ থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।
আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।
এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকতুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।
ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫