বর্ণিল বিকেলে শিশুদের ব্যতিক্রমী ঈদ আনন্দ
Published: 3rd, April 2025 GMT
চারপাশে সবুজ শালবন। মাঝে দূর্বা ঘাসে ঢাকা সমতল মাঠ। প্রকৃতির সবুজ এই কার্পেটে শিশুরা দৌড়াচ্ছে, খেলছে, বেলুন ওড়াচ্ছে, কর্কশ বেলুনবাঁশি বাজাচ্ছে। শিশুদের আনন্দ উদ্যাপন দেখে মনে হতেই পারে, ঈদ এখনো ফুরোয়নি।
গতকাল বুধবার বিকেলে এই দৃশ্য দেখা যায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পাবরিয়াচালা গ্রামের কফুরচালা মাঠে। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের নাম ‘শিশুদের ঈদ আনন্দ’। আয়োজন করে স্থানীয় ‘পারুলী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন’। শিশুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক সেলিম রেজা, নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরীসহ সমাজের নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ।
গতকাল বিকেলে চারটার দিকে কফুরচালা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এক প্রান্তে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। আর সামনের মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে শিশুরা। হঠাৎ মঞ্চ থেকে ঘোষণা এল, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শুরু হতে যাচ্ছে। ঘোষণা শুনেই শতাধিক শিশু সবুজ ঘাসে বসে ইচ্ছেমতো ছবি আঁকতে শুরু করে। ১৫ মিনিটের এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রায় সব শিশুই অংশ নেয়। এরপর মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে চলছিল বিভিন্ন বয়সী শিশুদের দৌড় প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি। বাঁশির সংকেত পেয়েই দে ছুট! কে কার আগে দৌড়ে গিয়ে মাঠের বিপরীত পাশের দড়িটি ছুঁতে পারে, সে চেষ্টায় ব্যস্ত হয় তারা। তবে এই প্রতিযোগিতায় সবাইকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
পরের পর্বে ছিল শিশুদের বিস্কুটদৌড় প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন বয়সী শিশুরা সুতায় বাঁধা বিস্কুট মুখে নেওয়া চেষ্টায় লাফিয়ে উঠছিল। কেউ কেউ বিস্কুট মুখে পুরে দৌড়ে মাঠের অন্য প্রান্তে থাকা বিচারকদের কাছে উপস্থিত হয়। বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হওয়ায় আগেই মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে বসে বল নিক্ষেপের আয়োজন। শিশুদের দুই দলে ভাগ করে নির্দিষ্ট দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়। এক দলের সদস্য অন্য দলের সদস্যের দিকে বল নিক্ষেপ করতে থাকে। এভাবে ১০ মিনিট ধরে বল নিক্ষেপ করে বিজয়ী নির্বাচিত হয়। সন্ধ্যার আগে আগে শিশুদের সঙ্গে আসা মায়েদের জন্য ছিল ‘চেয়ার সিটিং’ খেলা। সেখানে পায় ৩০ মিনিট পর বিজয়ী নির্বাচিত হয়। এরপর মঞ্চে বসে জাদুর আসর। শিশুদের আনন্দ বাড়িয়ে একের পর এক চমকপ্রদ জাদু দেখান শিল্পী খলিলুর রহমান। এ ছাড়া বিকেলজুড়ে মঞ্চে শিশুদের জন্য ইচ্ছেমতো গান গাওয়া ও কবিতা, ছড়া আবৃত্তির সুযোগ রাখা হয়।
এসব খেলায় অংশ নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিশুরা। আমাতুল নামের এক শিশু জানায়, সে অনুষ্ঠানে খুবই আনন্দ পেয়েছে। আরেক শিশু সিফাত জানায়, ঈদের এই আয়োজনে সে অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছে। নুসরাত চেঁচিয়ে জানায়, সে মায়ের সঙ্গে অনুষ্ঠানে এসে দারুণ আনন্দ করেছে। ছড়া পাঠে পুরস্কার জেতার পর ছোঁয়ার বাধভাঙা আনন্দ আর দেখে কে!
অনুষ্ঠান শেষে শিশুদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক সেলিম রেজা। এমন আয়োজনের উদ্দেশ্য জানাতে পারুলী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আহ্বায়ক সুমগ্ন সৌর বলেন, ‘আমরা চাই ঈদে শিশুরা দেশীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’