বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কিছু দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে সবারই। হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি স্মৃতিভ্রমের মতো রোগও আছে এই তালিকায়। এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কার কতটা বেশি, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে জীবনধারার ওপর। খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, বিশ্রাম ও চাপমুক্ত জীবনযাপন এ কারণেই এতটা গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশোধিত (রিফাইনড) শস্য এবং প্রক্রিয়াজাত অন্যান্য খাবার, চর্বিজাতীয় খাবার, লাল মাংস প্রভৃতি খেলে দীর্ঘমেয়াদি এসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এসব খাবারের বদলে বরং ছোটবেলা থেকেই এমন খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন, যা খেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের রোগের ঝুঁকি কমে। এমনটাই বলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা.

তাসনোভা মাহিন

নানান ধরনের বাদাম ও অন্যান্য বীজ

নানান ধরনের বীজে রয়েছে ভিটামিন ই। ভিটামিন ই একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। দীর্ঘ মেয়াদে শরীর সুস্থ রাখতে যেকোনো বীজ খেতে পারেন আপনি। মিষ্টিকুমড়ার বীজ, লাউয়ের বীজ, পুঁইয়ের দানা, চিয়া সিড, তিসি—নানান কিছু রাখতে পারেন আপনার খাদ্যতালিকায়। চিয়া সিড, তিসি, আখরোট ও অন্যান্য বাদামে পাবেন ভিটামিন ই এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের দেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ঝুঁকি কমায়। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে।

আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ‍্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২৪ মার্চ ২০২৫ফলমূল, শাকসবজি

রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন এ। মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক, কচুশাক, গাজর, পাকা আম, পাকা পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ, বিটরুট ইত্যাদিতে পাবেন প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ। আম, জলপাই, লাল ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, পালংশাক, শর্ষেশাক প্রভৃতিতে আরও রয়েছে ভিটামিন ই। টক ফলে পাবেন ভিটামিন সি। তাই পেয়ারা, জলপাই, চালতা, লেবু, কমলা, কাঁচা আম প্রভৃতি ফল থেকে কোনো না কোনোটি খেতেই হবে রোজ। এই তিন ভিটামিনই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাই এসব খাবার খেলে আপনার নানান রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কমবে। তবে মনে রাখবেন, তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফলের আচার খেলে ভিটামিন সি পাবেন না। ফলমূল ও শাকসবজিতে যে আঁশ থাকে, তা আবার রক্তের খারাপ চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে বহু রোগের ঝুঁকি কমে। যেসব ফলমূল বা সবজির খোসা খাওয়া সম্ভব, সেগুলো খোসাসমেত খাওয়ার চেষ্টা করুন। আলাদাভাবে সবজির খোসা দিয়েও কিছু মজাদার পদ তৈরি করা যায়। যেমন লাউ বা কুমড়ার খোসা অনায়াসেই ভিন্ন কোনো পদ তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঅল্প বয়সেও কেন হার্ট অ্যাটাক হয়৩০ মার্চ ২০২৫স্বাস্থ্যকর তেল

যে তেলে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই থাকে, তা গ্রহণ করা ভালো। সূর্যমুখী তেল, জলপাই তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল স্বাস্থ্যকর। মাছের তেলও ভালো খাবার। তবে মাছের চর্বি স্বাস্থ্যকর নয়। তবে খুব বেশি বড় আকারের মাছগুলোর তেল কক্ষ তাপমাত্রায় জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। এ ধরনের তেল না খাওয়াই ভালো। যকৃতের তেলও এড়িয়ে চলুন।

রান্নার জন্য স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহারের খরচ বেশি বলে অনেকেই অবশ্য এসব তেল কিনতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন—

ডুবোতেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। কম তেলে খাবার রান্না করুন। যে তেল কক্ষ তাপমাত্রায় জমাট বেঁধে থাকে, সেই তেল গ্রহণ করবেন না। ডালডা, মারজারিন প্রভৃতি বর্জনীয়।

একবার ব্যবহার করা তেল আবার ব্যবহার করবেন না।

ভাজাপোড়া খাবারের বদলে কিছু সেদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। যেমন সবজি পাকোড়া না করে সবজির সালাদ করতে পারেন সামান্য জলপাই তেল আর কিছু স্বাস্থ্যকর মসলা দিয়ে। স্বাদ পাবেন, সুস্থও থাকবেন।

আরও পড়ুনকোলেস্টেরল কমাবেন কীভাবে?১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর ব যবহ র ধরন র জলপ ই

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক রাতের বৃষ্টিতে ৪৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতভর বৃষ্টিতে পাকা-আধাপাকা ধান, ভুট্টা, শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির আবাদি ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অফিস।  

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১০ বছরে একরাতে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই।  

আরো পড়ুন:

তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, মিলেছে শীতের আভাস

গাছ থেকে সাইনবোর্ড ও পেরেক তোলার অভিযান হিলি পৌরসভার

লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সারা দিন আকাশ মেঘলা ছিল। সন্ধ্যার পরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত সাড়ে ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হতে থাকে। 

জেলার বিদিরপুর এলাকার আমন ধান চাষি আমানউল্লাহ বলেন, ‘‘আমার দুই বিঘা জমির ধান পুরোপুরি ডুবে গেছে। কয়েক দিন পরে ধান কাটা শুরু হতো। শেষ মুহূর্তে দুর্যোগের কবলে পড়ে অধিকাংশ ধান শেষ হয়ে গেছে।’’ একই এলাকার আরেক চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘‘আমরা কল্পনাও করিনি এই সময়ে এসে এত বৃষ্টি হবে।’’    

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর রোপা আমন ধান, ৩৭ হেক্টর আলু, ৯১৭ হেক্টর সরিষা, ৩১৬ হেক্টর শাকসবজি, ২৪৪ হেক্টর পেঁয়াজ, ২৫০ হেক্টর মাসকলাই, ৬৮ হেক্টর ভূট্টা, ১৩ হেক্টর স্ট্রবেরি এবং ৩৭৯ হেক্টর রসুন রয়েছে।’’  

তিনি আরো বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে পাকা ধান হেলে পড়েছে, সেগুলো কিছুটা ক্ষতি হবে। এর পাশাপাশি শাকসবজির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।’’ 

তবে জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে এবং আর বৃষ্টি না হলে ফসলের বেশি ক্ষতি হবে না বলেও জানান তিনি। 

ঢাকা/শিয়াম/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক রাতের বৃষ্টিতে ৪৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে