অবশেষে সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম নৌপথে ‘মধ্যযুগীয় যাতায়াত ব্যবস্থার অবসান হয়েছে। ঈদের আগে প্রথমবারের মতো এই রুটে চালু হয়েছে ফেরি সার্ভিস। গত ২৪ মার্চ সকাল ১০টায় ৬ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ভিড়ে ফেরি কপোতাক্ষ। ফেরি পাওয়ার আনন্দে এখনও উন্মাতাল দ্বীপবাসী। তবে এ আনন্দ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে সেই শঙ্কাও রয়েছে মানুষের মনে।  
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরদিন থেকেই সন্দ্বীপ চ্যানেলে যাত্রী, যাত্রীবাহী বাস, কার, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি পুরোদমে শুরু হয়েছে পণ্য পরিবহন। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। কমেছে দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও হয়রানি। প্রথম দুদিনেই বিআইডব্লিওটিএর পার্কিং ইয়ার্ড ও ফেরির টোল বাবদ আদায় হয়েছে পৌনে চার লাখ টাকা।
ফেরিযোগে প্রথমবারের মতো সন্দ্বীপ আসার আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকরা মুখোমুখি হচ্ছেন কিছু সমস্যারও। সন্দ্বীপের প্রধান  সড়ক গুপ্তছড়া সড়ক সরু হওয়ায় যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী বড় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলের উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। পাশাপাশি প্রধান দুটি সড়ক-গুপ্তছড়া ও দেলোয়ার খাঁ সড়কসহ কয়কেটি সড়কের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সন্দ্বীপে প্রতিদিন শতাধিক নতুন গাড়ি প্রবেশ করলেও নেই ট্রাফিক ব্যবস্থা। এতে যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে।
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে এতদিন যাত্রী পারাপার করত বিআইডব্লিওটিসির একটি জাহাজ, একাধিক স্পিডবোট, ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা (সার্ভিস বোট ও মালের বোট) ও লালবোট। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকার আনতে চাইলে কসরত করে ওঠাতে হতো ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায়। ঝুঁকির পাশাপাশি ব্যয় হতো মোটা অঙ্কের অর্থ। ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর  দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে সহজেই সন্দ্বীপে আসছেন যাত্রীরা। ভোগান্তি কমার পাশাপাশি কমেছে খরচও। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি ঢাকা থেকে সন্দ্বীপ আসছে বিআরটিসির এসি বাস, চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ আসা-যাওয়া করছে লুসাই পরিবহন, সন্দ্বীপ এক্সপ্রেস, স্বপ্নের সন্দ্বীপ, রূপসী বাংলাসহ একাধিক কোম্পানির বাস। 

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর প্রতিদিনই বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা।
সন্দ্বীপ থেকে ফেরীযোগে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল করে চট্টগ্রামে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে উচ্ছ্বসিত লিয়াকত মাহমুদ বলেন, ‘গত অক্টোবরে মালের বোটে বাইক নিয়ে গেছি চট্টগ্রাম। বুকিং ফি ১৫০০ টাকা, লেবার খরচ ২০০ টাকাসহ শুধু গাড়ি পাড় করতে খরচ হয়েছে ১৭০০ টাকা। আজকে মাত্র ১৫০ টাকা টোল দিয়ে বাইক নিয়ে নিজের মত করে চালিয়ে আরামে চট্টগ্রামের নিজ বাসায় চলে এলাম।’
সন্দ্বীপ থেকে হালিশহর আসা যাত্রী সাইমুন নিষাদ চৌধুরী এই যাত্রাকে স্বপ্নের মত উল্লেখ করে বলেন, ‘আগে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। বাড়ি থেকে ঘাটে এসে অনেকক্ষণ টিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এরপর কোন একটা নৌযানে উঠতে হতো। চট্টগ্রাম নেমে আবার উঠতে হতো গাড়িতে। সময় লাগতো বেশি, খরচ ছিলো বেশি, হয়রানি ছিল পদে পদে, যাত্রা ছিল ক্লান্তিকর।  আজকে এনাম নাহার থেকে বাসে করে সরাসরি হালিশহর পৌঁছাতে পেরেছি মাত্র ৩০০ টাকায়।’
যাত্রী, যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি আসা যাওয়ার পাশাপাশি ফেরী সার্ভিস চালু হওয়ায় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে পন্য পরিবহন করা হতো ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় (মালের বোট)। লাল বোট ও স্টিমারে পণ্য পরিবহন করা হতো স্বল্প পরিসরে। চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট, রাসমনী ঘাট ও চাকতাই খাল থেকে মালামাল আসতো গুপ্তছড়া ঘাটে। নির্মাণসামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, সবজী, ফলসহ পচনশীল পণ্য গাড়ি থেকে নামিয়ে তোলা হতো নৌযানে। নৌযান থেকে নামিয়ে আবার উঠানো হতো গাড়িতে। পণ্য উঠানামায় কয়েকদফা খরচের পাশাপাশি নষ্ট হতো মালামাল। ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মালামাল গাড়িতে সরাসরি চলে আসছে সন্দ্বীপের বিভিন্ন বাজারে। এতে করে পরিবহন খরচ কমে নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। মালামালের ক্ষয়ক্ষতি নেই বললেই চলে।
২৬ মার্চ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে পেট্রোম্যাক্স এলপিজির ৫৮৪ টি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডারের একটি ট্রাক এসেছে সন্দ্বীপের মালেকমুন্সির বাজারে অবস্থিত অহিন এন্টারপ্রাইজের গোডাউনে। ফিরতি গাড়িতে নিয়ে গেছে ৫৮৪ টি খালি সিলিন্ডার। অহিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুরুল আফসার বলেন, ‘গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার পরিবহনে বিধিনিষেধ আছে। এতদিন উপায় না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে সিলিন্ডার পরিবহন করতে হতো মালের বোটে। সিলিন্ডার উঠানামার সময় ক্ষতিগ্রস্থ হতো। আজকে কারখানা থেকে সরাসরি সিলিন্ডার চলে এসেছে গোডাউনে। পরিবহন খরচও অনেক কমে গেছে।’
গুপ্তছড়া বাজারে অবস্থিত মাওয়াজ গ্লাসের পরিচালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা গ্লাসের ব্যবসা করি মালমাল আনার সময় প্রতিবারই গ্লাস ভেঙে যেতো। আজকে প্রথমবার ফেরিতে করে গাড়িযোগে চট্টগ্রামের একে খান থেকে আমার দোকানে গ্লাস চলে এসেছে। একটা গ্লাসও ভাঙেনি। তাড়াছা আগে বড় সাইজের গ্লাস আনা যেতো না। আজকে আনতে পেরেছি। পরিবহন খরচ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।’
নির্মাণসামগ্রী, ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পোশাক, নিত্যপণ্যের ব্যাবসায়ীদের পাশাপাশি সবজি,ফলসহ পঁচনশীল পণ্যের ব্যবসায়ীরা ফেরিতে পণ্য আনতে পেরে দারুণ খুশি। সন্দ্বীপের চৌমুহনী বাজারের সবজির আড়ৎদার  ভাই ভাই বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আগে প্রতিদিন দেড় হাজার কেজি সবজি আনার সময় ১০০-১৫০ কেজি নৌকায় উঠাতে নামাতে নষ্ট হতো। এসব সবজি অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হতো। কখনো কখনো বিক্রিও করা যেতো না। আবহাওয়া খারাপ থাকলে অনেক সময় ট্রাক ভর্তি মালামাল পঁচে যেতো। এখন ফেরিতে করে কুমিরা থেকে সরাসরি কাঁচামাল দেকানে চলে আসছে। এক কেজি সবজিও নষ্ট হয়নি।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য পর বহন গ প তছড় ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ