অবশেষে সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম নৌপথে ‘মধ্যযুগীয় যাতায়াত ব্যবস্থার অবসান হয়েছে। ঈদের আগে প্রথমবারের মতো এই রুটে চালু হয়েছে ফেরি সার্ভিস। গত ২৪ মার্চ সকাল ১০টায় ৬ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ভিড়ে ফেরি কপোতাক্ষ। ফেরি পাওয়ার আনন্দে এখনও উন্মাতাল দ্বীপবাসী। তবে এ আনন্দ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে সেই শঙ্কাও রয়েছে মানুষের মনে।  
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরদিন থেকেই সন্দ্বীপ চ্যানেলে যাত্রী, যাত্রীবাহী বাস, কার, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি পুরোদমে শুরু হয়েছে পণ্য পরিবহন। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। কমেছে দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও হয়রানি। প্রথম দুদিনেই বিআইডব্লিওটিএর পার্কিং ইয়ার্ড ও ফেরির টোল বাবদ আদায় হয়েছে পৌনে চার লাখ টাকা।
ফেরিযোগে প্রথমবারের মতো সন্দ্বীপ আসার আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকরা মুখোমুখি হচ্ছেন কিছু সমস্যারও। সন্দ্বীপের প্রধান  সড়ক গুপ্তছড়া সড়ক সরু হওয়ায় যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী বড় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলের উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। পাশাপাশি প্রধান দুটি সড়ক-গুপ্তছড়া ও দেলোয়ার খাঁ সড়কসহ কয়কেটি সড়কের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সন্দ্বীপে প্রতিদিন শতাধিক নতুন গাড়ি প্রবেশ করলেও নেই ট্রাফিক ব্যবস্থা। এতে যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে।
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে এতদিন যাত্রী পারাপার করত বিআইডব্লিওটিসির একটি জাহাজ, একাধিক স্পিডবোট, ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা (সার্ভিস বোট ও মালের বোট) ও লালবোট। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকার আনতে চাইলে কসরত করে ওঠাতে হতো ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায়। ঝুঁকির পাশাপাশি ব্যয় হতো মোটা অঙ্কের অর্থ। ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর  দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে সহজেই সন্দ্বীপে আসছেন যাত্রীরা। ভোগান্তি কমার পাশাপাশি কমেছে খরচও। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি ঢাকা থেকে সন্দ্বীপ আসছে বিআরটিসির এসি বাস, চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ আসা-যাওয়া করছে লুসাই পরিবহন, সন্দ্বীপ এক্সপ্রেস, স্বপ্নের সন্দ্বীপ, রূপসী বাংলাসহ একাধিক কোম্পানির বাস। 

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর প্রতিদিনই বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা।
সন্দ্বীপ থেকে ফেরীযোগে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল করে চট্টগ্রামে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে উচ্ছ্বসিত লিয়াকত মাহমুদ বলেন, ‘গত অক্টোবরে মালের বোটে বাইক নিয়ে গেছি চট্টগ্রাম। বুকিং ফি ১৫০০ টাকা, লেবার খরচ ২০০ টাকাসহ শুধু গাড়ি পাড় করতে খরচ হয়েছে ১৭০০ টাকা। আজকে মাত্র ১৫০ টাকা টোল দিয়ে বাইক নিয়ে নিজের মত করে চালিয়ে আরামে চট্টগ্রামের নিজ বাসায় চলে এলাম।’
সন্দ্বীপ থেকে হালিশহর আসা যাত্রী সাইমুন নিষাদ চৌধুরী এই যাত্রাকে স্বপ্নের মত উল্লেখ করে বলেন, ‘আগে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। বাড়ি থেকে ঘাটে এসে অনেকক্ষণ টিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এরপর কোন একটা নৌযানে উঠতে হতো। চট্টগ্রাম নেমে আবার উঠতে হতো গাড়িতে। সময় লাগতো বেশি, খরচ ছিলো বেশি, হয়রানি ছিল পদে পদে, যাত্রা ছিল ক্লান্তিকর।  আজকে এনাম নাহার থেকে বাসে করে সরাসরি হালিশহর পৌঁছাতে পেরেছি মাত্র ৩০০ টাকায়।’
যাত্রী, যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি আসা যাওয়ার পাশাপাশি ফেরী সার্ভিস চালু হওয়ায় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে পন্য পরিবহন করা হতো ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় (মালের বোট)। লাল বোট ও স্টিমারে পণ্য পরিবহন করা হতো স্বল্প পরিসরে। চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট, রাসমনী ঘাট ও চাকতাই খাল থেকে মালামাল আসতো গুপ্তছড়া ঘাটে। নির্মাণসামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, সবজী, ফলসহ পচনশীল পণ্য গাড়ি থেকে নামিয়ে তোলা হতো নৌযানে। নৌযান থেকে নামিয়ে আবার উঠানো হতো গাড়িতে। পণ্য উঠানামায় কয়েকদফা খরচের পাশাপাশি নষ্ট হতো মালামাল। ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মালামাল গাড়িতে সরাসরি চলে আসছে সন্দ্বীপের বিভিন্ন বাজারে। এতে করে পরিবহন খরচ কমে নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। মালামালের ক্ষয়ক্ষতি নেই বললেই চলে।
২৬ মার্চ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে পেট্রোম্যাক্স এলপিজির ৫৮৪ টি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডারের একটি ট্রাক এসেছে সন্দ্বীপের মালেকমুন্সির বাজারে অবস্থিত অহিন এন্টারপ্রাইজের গোডাউনে। ফিরতি গাড়িতে নিয়ে গেছে ৫৮৪ টি খালি সিলিন্ডার। অহিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুরুল আফসার বলেন, ‘গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার পরিবহনে বিধিনিষেধ আছে। এতদিন উপায় না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে সিলিন্ডার পরিবহন করতে হতো মালের বোটে। সিলিন্ডার উঠানামার সময় ক্ষতিগ্রস্থ হতো। আজকে কারখানা থেকে সরাসরি সিলিন্ডার চলে এসেছে গোডাউনে। পরিবহন খরচও অনেক কমে গেছে।’
গুপ্তছড়া বাজারে অবস্থিত মাওয়াজ গ্লাসের পরিচালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা গ্লাসের ব্যবসা করি মালমাল আনার সময় প্রতিবারই গ্লাস ভেঙে যেতো। আজকে প্রথমবার ফেরিতে করে গাড়িযোগে চট্টগ্রামের একে খান থেকে আমার দোকানে গ্লাস চলে এসেছে। একটা গ্লাসও ভাঙেনি। তাড়াছা আগে বড় সাইজের গ্লাস আনা যেতো না। আজকে আনতে পেরেছি। পরিবহন খরচ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।’
নির্মাণসামগ্রী, ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পোশাক, নিত্যপণ্যের ব্যাবসায়ীদের পাশাপাশি সবজি,ফলসহ পঁচনশীল পণ্যের ব্যবসায়ীরা ফেরিতে পণ্য আনতে পেরে দারুণ খুশি। সন্দ্বীপের চৌমুহনী বাজারের সবজির আড়ৎদার  ভাই ভাই বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আগে প্রতিদিন দেড় হাজার কেজি সবজি আনার সময় ১০০-১৫০ কেজি নৌকায় উঠাতে নামাতে নষ্ট হতো। এসব সবজি অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হতো। কখনো কখনো বিক্রিও করা যেতো না। আবহাওয়া খারাপ থাকলে অনেক সময় ট্রাক ভর্তি মালামাল পঁচে যেতো। এখন ফেরিতে করে কুমিরা থেকে সরাসরি কাঁচামাল দেকানে চলে আসছে। এক কেজি সবজিও নষ্ট হয়নি।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য পর বহন গ প তছড় ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ