গত সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনে ছালাউদ্দিন ছালুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আবদুল হান্নান সিকদার। পেশায় ব্যবসায়ী এই ব্যক্তি তখন উড়ে এসে জুড়ে বসেছিলেন বলে দাবি দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীর। এখন গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপদেষ্টা পরিচয়ে নতুন তৎপরতা শুরু করেছেন সেই হান্নান।

জানা গেছে, আবদুল হান্নানের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের দিনার গ্রামে। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন। গত সংসদ নির্বাচনে এনপিপির প্রার্থী হয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এবারের ঈদ উৎসবে চরকাউয়া এলাকায় এনসিপির উপদেষ্টা পরিচয়ে ফেস্টুন বানিয়ে নতুন পরিচয়ের জানান দেন। ফেস্টুনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের স্মরণে ঈদের দু’দিন পর দিনারের পুল এলাকায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেন তিনি। এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক আসাদ বিন রণি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর আহ্বায়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সংগঠক শহিদুল ইসলাম শাহেদ প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অতিথি ছিলেন। 

তবে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা.

মাহমুদা মিতু সমকালকে বলেছেন, আবদুল হান্নান এনসিপির কেউ নন। তাঁর তৎপরতার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
হান্নানের এসব তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ফুটবল ম্যাচের আগের রাতে তাঁকে ফোন করে হান্নান আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি তাঁকে চেনেন না এবং তাঁর সম্পর্কে কিছু জানেনও না। এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন কিনা, তাও জানেন না। উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে ফেস্টুন করার বিষয়টি তিনিও শুনেছেন বলে জানান। ডা. মিতু বলেন, এনসিপির জেলা 
কমিটি হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর কেন্দ্রে নতুন করে কাউকে উপদেষ্টা করা হয়নি। প্রীতি ফুটবল ম্যাচে দলের যারা ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, তারা হয়তো না জেনে গিয়েছেন।
ফুটবল ম্যাচের অতিথি এনসিপির সংগঠক আসাদ বিন রণির কাছে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অংশগ্রহণকারী আরেকজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগর আহ্বায়ক শাহেদ জানান, আমন্ত্রিত হয়ে তারা ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। আবদুল হান্নান এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন কিনা, তা তারা জানেন না। এ নেতা নিশ্চিত করেন, রণির বাড়ি চরকাউয়ার পাশের ইউনিয়ন চরমোনাইতে।

চরকাউয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রেমন শরীফ জানান, হান্নান সিকদার স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকেন। বছরে দু-একবার এলাকায় যান। গত বছর এমপি প্রার্থী হয়ে কিছুদিন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। আগামীতে নতুন দলের এমপি প্রার্থী হতে পারেন বলে এলাকায় কানাঘুষা রয়েছে।
এসব মতবিরোধের বিষয়ে আবদুল হান্নান বলেন, গত ২৪ মার্চ রাজধানীতে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দলে যোগ দিয়েছেন। আগের দল এনপিপি ত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, আমার ব্যবসায়ী বন্ধুরা বলেছেন, ছাত্ররা নতুন দল করেছে। তাদের বয়স কম, তাদের এগিয়ে নিতে মুরব্বির প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেই এনসিপিতে যোগ দিয়েছি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সুবিধাভোগী ছিলেন না বলে দাবি করেন তিনি।
হান্নান আরও জানান, গত নির্বাচনে প্রায় ৩০০ ভোট পেয়েছিলেন। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আরও বেশি পেতেন বলে দাবি করেন। আগামীতে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এসব বিষয়ে এখন ভাবছেন না। 

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-৫ আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন ডা. মিতু। হান্নানের তৎপরতায় দলটির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
এনপিপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান বলেন, হান্নান এনপিপির রাজনীতি করেননি। বিগত নির্বাচনে কীভাবে যেন মনোনয়ন বাগিয়েছেন। পরে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হন। ক্ষুব্ধ এনপিপির বরিশালের নেতাকর্মী তাঁর নির্বাচন করেননি। শুনেছি, নৌকার প্রার্থীর কাছে এজেন্ট বিক্রি করেছেন। 
এনপিপির সভাপতি ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, হান্নান সিকদার ব্যবসায়ী। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে এমপি প্রার্থী হয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে বরিশালের নেতারা তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি নাকি এনসিপির উপদেষ্টা হয়েছেন। হান্নানও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা পদত্যাগ করেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প আবদ ল হ ন ন ন ফ টবল ম য চ উপদ ষ ট এনস প র এনপ প র ব যবস য় এল ক য় বর শ ল স গঠক

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেয়র পদ নিয়ে ইশরাকের মামলায় ইসির ভূমিকায় এনসিপির উদ্বেগ
  • পুতিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় সন্তুষ্ট ট্রাম্প, চান স্থায়ী চুক্তি
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে মার্কিন তৎপরতা